যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

যশোর ও মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ১২: ৫৪

খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে দুই দিনের অঘোষিত বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় প্রথম দিনের মতো গতকাল শনিবারও যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা বাস যশোরে আটকে যায়। একই সঙ্গে আঞ্চলিক রুটের বাস চলাচলও বন্ধ ছিল।

এদিকে ভেঙে ভেঙে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের। গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন চালু থাকায় বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে হয়েছে। দেরিতে হলেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে খুলনায় যায় ট্রেন।

পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, গতকাল শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে যশোর থেকে খুলনাগামী যাত্রীবাহী সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ রুটের বাস যশোর টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। শুক্রবারের মতো শনিবারও যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই মানুষকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে কেটে কেটে যেতে হচ্ছে। মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

যশোর টার্মিনালে কথা হয় পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার মালতি রানীর (৫৫) সঙ্গে। দেড় মাস ভারতের কলকাতার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে গতকাল সকালে বেনাপোল দিয়ে যশোরে আসেন তিনি। বেনাপোল থেকে আঞ্চলিক রুটের বাসে করে যশোর টার্মিনালে এসে তিনি খুলনাগামী কোনো বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন।

ক্ষুব্ধ এই নারী বলেন, কলকাতা থেকে অপারেশন শেষে শনিবার সকালে যশোর পৌঁছেছি। অসুস্থ শরীর নিয়ে একটা বাস কাউন্টারে ৪-৫ ঘণ্টা বসে আছি, কোনো উপায় পাচ্ছি না। বসে থাকতে থাকতে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোভন জানান, সোমবার তাঁর ভাইভা রয়েছে। গাড়ি বন্ধ থাকায় খুলনায় যেতে পারছি না। তিন ঘণ্টা বসে থাকার পরে ভাবছি, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে কেটে কেটে যাব।

যশোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, ‘এটা আমাদের কোনো ধর্মঘট না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। কেউ যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেই জন্য পরিবহনমালিকেরা পরিবহন বন্ধ রেখেছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিবহনগুলো স্বাভাবিক হবে বলে মালিকপক্ষ থেকে ইঙ্গিত পেয়েছি।’

এদিকে বিএনপির নেতারা জানান, যশোর থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী খুলনার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। গত তিন দিনে জেলার ৬৩ জন বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। গণগ্রেপ্তার, পুলিশের বাধার পরেও বৃহস্পতিবার থেকে যশোরের নেতা-কর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। মহাসড়ক বাদ দিয়ে আঞ্চলিক সড়কে নছিমন, ট্রাক, মাইক্রো, মোটরসাইকেল করে তাঁরা সমাবেশস্থলে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া ট্রেনে করেও বিএনপির নেতারা খুলনায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আইনজীবী সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘খুলনার মহাসমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে সরকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে পরিবহনমালিকেরা খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। সব বাধা পেরিয়ে যশোর জেলার প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী খুলনার মহাসমাবেশে পৌঁছে যান। সমাবেশে আসা বন্ধ করতে বিএনপির অন্তত ৬৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রেলস্টেশনে কর্মীদের মারপিট করা হয়েছে।’

এদিকে মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধে ডাকা ধর্মঘটের কারণে মেহেরপুর থেকে-খুলনাগামী যে চারটি বাস সকালে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো ছেড়ে যায়নি। ফলে দুর্ভোগে পড়ে খুলনাগামী যাত্রীরা।

এদিকে হঠাৎ করে বাস বন্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনাগামী মেহেরপুরের যাত্রীরা। তাঁরা বলেছেন, হঠাৎ করেই পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি আগেও কোনো কিছু জানানো হয় না। ফলে সকালে সাধারণ মানুষ এখানে এসে দুর্ভোগের শিকার হন।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ জানান, খুলনায় বিএনপির আয়োজিত মহাসমাবেশকে বানচাল করতে সরকার কৌশলে এমন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু কোনো বাধাই বিএনপির কর্মীদের আটকিয়ে রাখা যায়নি। এক দিন আগেই সব বাধা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে চলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত