পরশুরাম উপজেলার তিনটি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন শিক্ষক-কর্মচারী মাসের পর মাস প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছেন। এর মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক, একজন অফিস সহকারী এবং একজন অফিস সহায়ক বা পিয়ন।

তাঁদের একজন তিনবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য, বাকি দুজন একবারের। এবারও তাঁরা ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারছেন না।

অভিযুক্ত তিনজন হলেন উপজেলার মির্জানগর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ইয়াছিন। তিনি উপজেলার মির্জানগর তৌহিদ একাডেমির অফিস সহায়ক বা পিয়ন। একই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য জাহিদ হোসেন সুবার বাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী। অন্যজন বটতলী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক। তিনবারের ইউপি সদস্য আবু বকর মির্জানগর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বটতলী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক মাস শেষে এক দিনে পুরো মাসের হাজিরা স্বাক্ষর করেন। তা ছাড়া তিনি একজন শিক্ষককে বদলি হিসেবে মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় ক্লাস করতে পাঠান। যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী ফরিদ আহমেদ।

তৌহিদ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজনের পক্ষে তো দুই জায়গায় একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব না।

সুবার বাজার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ছাদেক সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসার সব কাজ এখন অনলাইনভিত্তিক। জাহিদের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাঁকে মাদ্রাসায় পাওয়াই যায় না। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে অফিস সহকারী মো. জাহিদ দাবি করেন, তিনি নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত কাজ করেন। যেহেতু তিনি জনপ্রতিনিধি, তাই দুই দিক সামাল দিতে একটু সমস্যা হয়। তবে এটা কোনো ব্যাপার না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জানগর তৌহিদ একাডেমির অফিস সহায়ক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইয়াছিন জানান, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও নিয়মিত অফিসের কাজ শেষ করেই তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বক্কর ছিদ্দিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরশুরাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী ফরিদ আহমেদ জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষক বা কর্মচারী বছরে সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত ছুটি কাটাতে পারেন। কোনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বদলি দিতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈধ। ছুটি ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি আগেও অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁরা তিনজনই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। বিষয়টি তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষাবোর্ড ও মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাবেন।