শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
‘মব জাস্টিসের’ নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা থামছেই না। এই ‘বিচারের’ নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, নির্যাতন, মারধর, লাঞ্ছনা, অপমান, অপদস্থ ও হামলা করার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঘটল খাগড়াছড়িতে। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষককে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পিটিয়ে হত্যা করেন একদল যুবক।
পুলিশের তথ্য বলছে, গত দুই মাসে সারা দেশে ২৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে মব জাস্টিসের নামে। নির্যাতন, মারধর, লাঞ্ছনা, হামলার ঘটনা অসংখ্য। একের পর এক ঘটনায় দেশে নতুন আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে মব জাস্টিস। অন্তর্বর্তী সরকারের হুঁশিয়ারিও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া রোধ করতে পারছে না।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা এসব বিষয়ে তৎপর রয়েছি।’
অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এমন উচ্ছৃঙ্খল ঘটনার বিরুদ্ধে তাঁরা তৎপর রয়েছেন। তবে এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে দু-একটি। গ্রেপ্তারও হাতে গোনা।
দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা আগেও ছিল। তবে আগে পিটুনির শিকার হয়েছে মূলত চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও শিশু অপহরণকারী সন্দেহে জনতার হাতে ধরা পড়া ব্যক্তি। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তা নতুন রূপ নিয়েছে। মব জাস্টিস বা জনতার বিচার নামে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যেকোনো ক্ষেত্রে। পুলিশ সদস্যও রেহাই পাচ্ছেন না।
পুলিশ সূত্র বলছে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনায় ৫ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনসহ সারা দেশে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। মারধর, নির্যাতন, লাঞ্ছনার ঘটনার সঠিক সংখ্যা নেই। দেশের কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন কারণে গত দুই মাসে সংঘবদ্ধ মানুষের অপমান, অপদস্থ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ মানুষ। স্কুল-কলেজের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বের করে দেওয়ার আগে কাউকে কাউকে মারধরও করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরেও হামলা করা হয়েছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে। ভিন্নমতের কারণে বৃদ্ধকে রাস্তায় কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনাও ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন থানা। হামলায় নিহত হন ৪৬ জন পুলিশ সদস্য। লুট হয় অস্ত্র-গুলি। এতে পুলিশের নৈতিক মনোবল ভেঙে গেছে। সেই সুযোগ নিচ্ছে উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে। পুলিশের সাময়িক নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হত্যা, লুট, চুরি, অগ্নিসংযোগ, দখল, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে হানা, স্থাপনা ভাঙচুর চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোকে বলা হচ্ছে মব জাস্টিস।
পরিস্থিতির কারণে ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মব জাস্টিসের নামে বেআইনি নির্যাতন, গণপিটুনি ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা রোধে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছে। রিটে মব জাস্টিস তথা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার বা হত্যা বা নির্যাতন রোধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে গতকাল বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে মূল কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোটা খুব জরুরি। না হলে অন্যরা উৎসাহ পাবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, দেশে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৮০০ জন নিহত হয়। এরপর গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে আরও ২৮৬ জন। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে রাজধানীতে ১৬ জনসহ সারা দেশে নিহত হয় ৩২ জন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, মব জাস্টিসের নামে দিনাজপুরে ১১ আগস্ট ও ১৫ সেপ্টেম্বর তিনজনকে, ১২ আগস্ট গাজীপুরে দুজনকে, একই দিন নাটোরে এক ব্যক্তিকে, ১৩ আগস্ট বরিশালে এক যুবককে, বগুড়ায় ৩১ আগস্ট ও ১৮ সেপ্টেম্বর দুজনকে, ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিএনপির এক নেতাকে, ৪ সেপ্টেম্বর খুলনায় এক ব্যক্তিকে, ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে একজনকে, ফরিদপুরে ১১ সেপ্টেম্বর এক বৃদ্ধকে, ১২ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহে একজনকে, ১৬ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠিতে একজনকে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে একজনকে হত্যা করা হয়।
তবে মানুষকে বেশি নাড়া দিয়েছে তিনটি হত্যাকাণ্ড। এগুলো ঘটেছে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরে হত্যার শিকার দুজনেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাঁদের মধ্যে রাজশাহীর আবদুল্লাহ আল মাসুদের এক পা কেটে ফেলা হয়েছিল ছাত্রজীবনেই। সন্তানের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে তিনি পিটুনির শিকার হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে দুই দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মাঝখানে তাঁকে ভাতও খাওয়ানো হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে।
এসব হত্যার ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি। ভুক্তভোগী একজনের স্বজন বলেন, মামলা করে পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকিতে ফেলতে চান না। কারণ, থানা-পুলিশ বলেছে, তারা নিজেরাই অনিরাপদ। তারা আপাতত নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
রাজশাহীর মাসুদ হত্যার ঘটনায় ৮ সেপ্টেম্বর মতিহার থানায় তাঁর বড় ভাই মামলা করেন। ওই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানান মতিহার থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানা ও আদালতে মামলা হয়েছে। ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাঁরা দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনে আসা অন্যতম জন-আকাঙ্ক্ষা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে আদালতে। কিন্তু ‘জনতার বিচারের’ নামে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা কেউ চায়নি।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. উমর ফারুক বলেন, কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে তার জন্য প্রচলিত আইন আছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু হলেই সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। আইনের বাইরে গিয়ে এমন পরিস্থিতি কখনো কাম্য নয়।
‘মব জাস্টিসের’ নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা থামছেই না। এই ‘বিচারের’ নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, নির্যাতন, মারধর, লাঞ্ছনা, অপমান, অপদস্থ ও হামলা করার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঘটল খাগড়াছড়িতে। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষককে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পিটিয়ে হত্যা করেন একদল যুবক।
পুলিশের তথ্য বলছে, গত দুই মাসে সারা দেশে ২৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে মব জাস্টিসের নামে। নির্যাতন, মারধর, লাঞ্ছনা, হামলার ঘটনা অসংখ্য। একের পর এক ঘটনায় দেশে নতুন আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে মব জাস্টিস। অন্তর্বর্তী সরকারের হুঁশিয়ারিও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া রোধ করতে পারছে না।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা এসব বিষয়ে তৎপর রয়েছি।’
অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এমন উচ্ছৃঙ্খল ঘটনার বিরুদ্ধে তাঁরা তৎপর রয়েছেন। তবে এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে দু-একটি। গ্রেপ্তারও হাতে গোনা।
দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা আগেও ছিল। তবে আগে পিটুনির শিকার হয়েছে মূলত চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও শিশু অপহরণকারী সন্দেহে জনতার হাতে ধরা পড়া ব্যক্তি। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তা নতুন রূপ নিয়েছে। মব জাস্টিস বা জনতার বিচার নামে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যেকোনো ক্ষেত্রে। পুলিশ সদস্যও রেহাই পাচ্ছেন না।
পুলিশ সূত্র বলছে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনায় ৫ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনসহ সারা দেশে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। মারধর, নির্যাতন, লাঞ্ছনার ঘটনার সঠিক সংখ্যা নেই। দেশের কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন কারণে গত দুই মাসে সংঘবদ্ধ মানুষের অপমান, অপদস্থ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ মানুষ। স্কুল-কলেজের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বের করে দেওয়ার আগে কাউকে কাউকে মারধরও করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরেও হামলা করা হয়েছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে। ভিন্নমতের কারণে বৃদ্ধকে রাস্তায় কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনাও ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন থানা। হামলায় নিহত হন ৪৬ জন পুলিশ সদস্য। লুট হয় অস্ত্র-গুলি। এতে পুলিশের নৈতিক মনোবল ভেঙে গেছে। সেই সুযোগ নিচ্ছে উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে। পুলিশের সাময়িক নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হত্যা, লুট, চুরি, অগ্নিসংযোগ, দখল, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে হানা, স্থাপনা ভাঙচুর চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোকে বলা হচ্ছে মব জাস্টিস।
পরিস্থিতির কারণে ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মব জাস্টিসের নামে বেআইনি নির্যাতন, গণপিটুনি ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা রোধে ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছে। রিটে মব জাস্টিস তথা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার বা হত্যা বা নির্যাতন রোধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে গতকাল বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে মূল কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোটা খুব জরুরি। না হলে অন্যরা উৎসাহ পাবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, দেশে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৮০০ জন নিহত হয়। এরপর গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে আরও ২৮৬ জন। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে রাজধানীতে ১৬ জনসহ সারা দেশে নিহত হয় ৩২ জন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, মব জাস্টিসের নামে দিনাজপুরে ১১ আগস্ট ও ১৫ সেপ্টেম্বর তিনজনকে, ১২ আগস্ট গাজীপুরে দুজনকে, একই দিন নাটোরে এক ব্যক্তিকে, ১৩ আগস্ট বরিশালে এক যুবককে, বগুড়ায় ৩১ আগস্ট ও ১৮ সেপ্টেম্বর দুজনকে, ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিএনপির এক নেতাকে, ৪ সেপ্টেম্বর খুলনায় এক ব্যক্তিকে, ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে একজনকে, ফরিদপুরে ১১ সেপ্টেম্বর এক বৃদ্ধকে, ১২ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহে একজনকে, ১৬ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠিতে একজনকে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে একজনকে হত্যা করা হয়।
তবে মানুষকে বেশি নাড়া দিয়েছে তিনটি হত্যাকাণ্ড। এগুলো ঘটেছে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরে হত্যার শিকার দুজনেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাঁদের মধ্যে রাজশাহীর আবদুল্লাহ আল মাসুদের এক পা কেটে ফেলা হয়েছিল ছাত্রজীবনেই। সন্তানের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে তিনি পিটুনির শিকার হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে দুই দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মাঝখানে তাঁকে ভাতও খাওয়ানো হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে।
এসব হত্যার ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি। ভুক্তভোগী একজনের স্বজন বলেন, মামলা করে পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকিতে ফেলতে চান না। কারণ, থানা-পুলিশ বলেছে, তারা নিজেরাই অনিরাপদ। তারা আপাতত নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
রাজশাহীর মাসুদ হত্যার ঘটনায় ৮ সেপ্টেম্বর মতিহার থানায় তাঁর বড় ভাই মামলা করেন। ওই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানান মতিহার থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানা ও আদালতে মামলা হয়েছে। ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাঁরা দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনে আসা অন্যতম জন-আকাঙ্ক্ষা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে আদালতে। কিন্তু ‘জনতার বিচারের’ নামে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা কেউ চায়নি।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. উমর ফারুক বলেন, কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে তার জন্য প্রচলিত আইন আছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু হলেই সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। আইনের বাইরে গিয়ে এমন পরিস্থিতি কখনো কাম্য নয়।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে