এক বছরেই সরাসরি জাহাজের ৪ রুট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ০৭

চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপসহ বিশ্বের সাতটি নতুন আন্তর্জাতিক রুটে সরাসরি জাহাজ চালু হয় গত বছর। এতে আশার আলো দেখেছিলেন রপ্তানিকারকেরা। এসব রুটের মাধ্যমে জাহাজে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় কমার সম্ভাবনার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে এক বছরের মধ্যেই চারটি রুটে শিপিং লাইনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বাকি তিনটিও বন্ধের পথে। জাহাজভাড়া (ফ্রেইট চার্জ), রপ্তানি পণ্যের ক্রয়াদেশ ও আমদানি কমে যাওয়ায় শিপিং লাইনগুলো এসব রুটে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এসব রুটে পণ্য পরিবহন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া এবং ভাড়া কমে যাওয়ার ফলে সরাসরি জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালিতে এবং একই বছরের জুনে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে সরাসরি পণ্য পরিবহন চালু হয় জাহাজে। এই দুটি রুট পরিচালনা করত স্থানীয় শিপিং কোম্পানি রিলায়েন্স শিপিং। চলতি বছরের আগস্টে এসে নেদারল্যান্ডস-স্পেন রুট বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রাম-ইতালি রুটের জাহাজ চলাচলও বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে।

রিলায়েন্স শিপিং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ জানান, ‘চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইতালি রুটে জাহাজ পরিচালনা অলাভজনক হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর সময় প্রতিটি কনটেইনারের ভাড়া ছিল ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার ডলার। বর্তমানে সেই ভাড়া নেমে এসেছে দুই হাজার ডলারে। প্রতিটি জাহাজে পণ্য বোঝাই হতো প্রায় ১ হাজার ২০০ টিইইউ (টোয়েন্টি ফিট ইউনিট); এখন সেটি নেমে এসেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টিইইউতে। পণ্য পরিবহন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ভাড়াও কমে গেছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে জাহাজ চালু রাখা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ চট্টগ্রাম-ইতালি এবং চট্টগ্রাম-নেদারল্যান্ডস-স্পেন রুটে প্রতি ২০ দিন অন্তর জাহাজ চলাচল করত বলে তিনি জানান।

বন্দর থেকে এরই মধ্যে বন্ধ হওয়া রুটগুলো হলো নেদারল্যান্ডস, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য। অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেন রুটে জাহাজ চলাচল।

এসব রুট চালুর আগে ইউরোপের গন্তব্যগুলোতে কনটেইনারে পণ্য পাঠাতে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার তানজুম পালাপাস, ইন্দোনেশিয়ার কেলাস ও চীনের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে যেত। সেখান থেকে ইউরোপের রটারড্যাম, অ্যান্টওয়ার্প ও হামবুর্গের মতো মূল বন্দর (বেস পোর্ট) হয়ে পণ্য পৌঁছাত গন্তব্যে। এতে সময় লাগত প্রায় ৪০ দিন।

সরাসরি রুটে পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ায় এই সময় কমে এসেছিল ২০ থেকে ২২ দিনে। তবে রুটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে গন্তব্যে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বেশি সুফল ভোগ করে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। এতে সময় কম লাগা ও ব্যয় কমার পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত দেশের প্রধান রপ্তানি খাতটির।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সরাসরি জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠাতে বেশি সময় লাগবে, এতে ব্যয়ও বাড়বে। রপ্তানিকারকেরা এখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর দিয়ে চালান পাঠাচ্ছেন। এসব রুট বন্ধ হওয়া দেশের পোশাকশিল্পের জন্য ‘খারাপ খবর’।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত