বাড়ছে সর্দি জ্বরের রোগী

নেত্রকোনায় ঠান্ডায় বাড়ছে সর্দি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন অনেক রোগী। চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত বাড়ায় এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। অনেককে জরুরি অবস্থায় ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় ১৫০ শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া চর্ম রোগ, প্রস্রাবের সমস্যাসহ অন্যান্য রোগ নিয়েও শিশুরা ভর্তি হয়েছে। গতকাল শনিবার হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চারজনের মধ্যে তিনজন শিশু রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডে ১৪ জন শিশু নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকের আসছে। গতকাল সকালেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুটি শিশু ও একজন বয়স্ক রোগী এসেছেন। এ ছাড়া নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত চারটি শিশু এসেছে।

হাসপাতালটির নিচতলায় জরুরি বিভাগ সংলগ্ন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, তিনজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডে ১৪ জন নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

নেত্রকোনা পৌরসভার নওয়াপাড়া এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাত থেকে ভর্তি আছে ১৮ মাসের শিশু মাইশা। সে ৮ থেকে ১০ বার বাসায় পাতলা পায়খানা করেছে। পরে অভিভাবকেরা শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার মা আয়েশা খাতুন জানান, মেয়ে গত শুক্রবার দুপুর থেকে অনবরত পাতলা পায়খানা করছিল। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা একটু ভালো।

জেলার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ থেকে ১০ মাসের শিশু তাছিনকে নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন মা লিপি বেগম। তিনি জানান, তাছিন ৫ থেকে ৬ দিন ধরে পাতলা পায়খানা করছিল। গতকাল তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

একই উপজেলার ধলা মূলগাঁও ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের ছয় মাসের শিশু রাফিকে গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা অঞ্জনা আক্তার জানিয়েছেন, রাফি শুক্রবার রাত থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে সে দুই থেকে তিনবার পাতলা পায়খানা করেছে। গতকাল সকালে ৮ থেকে ১০ বার পাতলা পায়খানা করেছে। জরুরি বিভাগ থেকে ইনজেকশন দেওয়া হলেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি।

হাসপাতালে দুইতলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪টি শিশু ভর্তি আছে।

সদর উপজেলার টেংগা গ্রামের ২৪ দিন বয়সী তৌফিক খানকে নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় বসে আছেন দাদি দুলেনা বেগম। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তৌফিকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দুলেনা বেগম বলেন, আমার নাতির জন্য দোয়া করবেন।

২৯ দিনের সাহাবি নামে এক শিশু নিয়ে ভর্তি আছেন মা সেলিনা বেগম। তিনি গত ২৫ জানুয়ারি থেকে সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, সাহাবিকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। দিনের বেলা একটু ভালো থাকলেও রাতে সর্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন বলেন, শীত বাড়ায় এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু এসেছে। আমরা জরুরি রোগী হলে ইনজেকশন ও স্যালাইন দিচ্ছি।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। আবাসিক মেডিকেল অফিসারেই শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।