Ajker Patrika

আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করব

মোনায়েম সরকার
আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি, জামায়াতসহ ডানপন্থী ও বামপন্থী কিছু দল নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ডাক দিয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন যে ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছে না এবং এসব অবরোধ-হরতাল করে যে নির্বাচন না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেশে তৈরি করতে পারবে না, সেটা বলা যায়।

মানুষের সমর্থন আছে—এমন সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। তবে কোনো দল যদি দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন থেকে দূরে থাকে, তাহলে অন্যদের কী করার থাকে? একসময় আমাদের দেশের অর্থনীতি ছিল বিদেশনির্ভর। বাজেট পেশের আগে আমাদের অর্থমন্ত্রীরা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিদেশে ছুটতেন। এখন অর্থনীতি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, রাজনীতি হয়েছে বিদেশনির্ভর।

আর সে জন্যই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে ভূরাজনীতিতেও একটি নতুন সমীকরণ তৈরি হওয়ার অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, অন্যদিকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সুস্পষ্ট অবস্থান বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যে বলয় তৈরি করছে, তা প্রত্যাশিত না হলেও বাস্তব সত্য। নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এ দেশের জনগণের, এটা জানার পরও অন্যদের খবরদারি আপত্তিকর। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়াদৌড়ি তো রীতিমতো বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছেছে।  

আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গলদ নেই তা নয়। আমাদের রাজনীতিতে অগ্রগতি, পশ্চাদ্‌গতি দুটিই আছে। এটা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। আমেরিকা বা ব্রিটেনও বলতে পারবে না যে তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত। আমেরিকার গত নির্বাচনের পর সেখানে নজিরবিহীন হামলা হয়েছিল ক্যাপিটল হিলে। পরাজিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ওই নির্বাচন মেনে নেননি। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে একসময়কার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কম ভোট পাননি। বলা হয়ে থাকে, ট্রাম্প মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। এক বিব্রতকর মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পরও তিনি কম জনপ্রিয় নন। পরবর্তী নির্বাচনের দৌড়েও তিনি এগিয়ে আছেন। জরিপ বলছে, তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। প্রশ্ন হলো, আমরা কি তাদের প্রার্থীর মান, এমনকি ভোটারদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলি? তাহলে তারা কেন আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে এত কথা বলে? গণতন্ত্রের জন্য প্রত্যাশা এক জিনিস, আর চাপ সৃষ্টির জন্য নানা তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া আরেক বস্তু। আমেরিকা ও তার মিত্র বলে পরিচিত কিছু দেশের কূটনীতিক ও কর্মকর্তার বাংলাদেশ ঘিরে তৎপরতায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র, বাক্‌স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমারা বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে দেখে থাকে। তা ছাড়া, এসব প্রতিবেদন তারা তৈরি করে সাধারণত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বক্তব্য অনুসরণ করে, একপেশেভাবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও যে সুষ্ঠু হয়নি—এ কথা বললে সেটা কি একেবারে ফেলে দেওয়া যাবে? গণতন্ত্রে আমেরিকার অর্জনকে আমরা অস্বীকার করি না।

‘অভিবাসীদের দেশ’ বলে বর্ণনা করা হয় আমেরিকাকে। আমাদের দেশ থেকেও বহু মানুষ গিয়ে সেখানকার বাসিন্দা হয়েছেন। দেশটির সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কও গভীর। এটা কারও দান নয়; আমাদের অর্জন। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক, অর্থনীতিতে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, এটা পশ্চিমা দেশগুলোও অস্বীকার করতে পারে না। তারা যে প্রতিবেদনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেছে, তাতেই আবার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি পশ্চিমাদের কাছেও বিস্ময়। তারা তো জানে, বিশ্বব্যাংক ও তার সমমানের সাহায্যদাতা সংস্থাগুলো সরে গেলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ভূমিকায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে উঠেছে সেতু। তারা এটাও জানে, রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, যা এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটির বাস্তবায়ন বিঘ্নিত করতেও নানা তৎপরতা চলছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার বেশ কিছু জাহাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। তেমন একটি জাহাজে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আনা হচ্ছিল। সেটা যাতে বাংলাদেশের বন্দরে না ভিড়তে পারে, তা নিশ্চিত করতে কী না করেছে আমেরিকা? জাহাজটি ভারতের কোনো বন্দরেও যাতে ভিড়তে না পারে, সে জন্য তারা তৎপর ছিল। এটা নজিরবিহীন। ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযান পরিচালনা করছে—এ কথা ঠিক। কিন্তু এই যুদ্ধের পেছনে কি আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের হাত নেই? এর ফলে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় নিত্যপণ্যের বাজার কত অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে, সেটাও বলা বাহুল্য। পশ্চিমারাও কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। রাশিয়াকে কাবু করার জন্য দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তাদের ওপরই গিয়ে আঘাত হানছে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের একটি নির্দোষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ কেন এ জন্য বিঘ্নিত হবে? এ-ই তাহলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার মার্কিনদের ভূমিকা!

২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে আমরাও গর্ব করি না। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়েও কিছু প্রশ্ন আছে। কিন্তু এর দায় একতরফাভাবে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটানো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আদালতের রায়েই বাতিল হয়েছে। এটা আর ফেরত আনার দাবি অযৌক্তিক ও অন্যায্য। নির্বাচনব্যবস্থাকে কীভাবে বিতর্কমুক্ত করা যায়, সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। কিন্তু অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে রাজনৈতিক সরকার গঠনের দাবি করা তো আহাম্মকি। আমেরিকাসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। এই বাস্তবতা মানতে না পারা বিএনপি ২০১৪-এর নির্বাচন বানচাল করতে আন্দোলনের নামে কত অপরাধ করেছে, সেটা কি পশ্চিমারা জানে না? তাদের কাছে তো অনেক ছোটখাটো বিষয়েরও খবর থাকে, যা বিভিন্ন ঘটনায় আমরা বুঝতে পারি। গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতাদের হত্যার অপচেষ্টার কথা কি তাদের জানা নেই? তখন কারা ক্ষমতায় ছিল এবং কাদের পরিকল্পনায় হামলা হয়েছিল, তারা নিশ্চয়ই জানে। বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াও গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে মারা যান বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে। তার পরও তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে, এটাও নির্মম বাস্তবতা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা কিন্তু এসেছিলেন নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করে। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তারা এমনভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, যাতে এটি বিতর্কিত হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তারা নির্বাচনে এসেছিল এটিকে বিতর্কিত করতে।

সেটা করতে তারা একপ্রকার সফলও হয়েছে বলা যায়। অন্তত আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে ২০১৮-এর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আমরা বলব, সেটি মানসম্মত নির্বাচন হয়তো হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই নির্বাচনের ভিত্তিতেই সরকার গঠিত হয়েছে এবং সেই সরকার সফলভাবে দেশ পরিচালনা করে আরেকটি নির্বাচনের সামনে এসে উপনীত হয়েছে।  

বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, সেটা ২০১৮-এর মতো হবে না—এ কথা সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন। কিন্তু মাঠের বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে অনড় এবং দেখা যাচ্ছে, আমেরিকাসহ পশ্চিমা গোষ্ঠী তাদের বাতাস দিচ্ছে। বাক্‌স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ইস্যু সামনে এনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টাও কম হচ্ছে না। বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ক্রসফায়ারের ঘটনা অনেক আগে থেকে ঘটে এলেও বর্তমান সরকারের আমলেই বিষয়টিকে ইস্যু করেছে আমেরিকা। র‍্যাব সাধারণ মানুষের কাছে একপ্রকার জনপ্রিয় হলেও একে বিতর্কিত করার প্রয়াস তারা পেয়েছে কী কারণে, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। নিজেদের দেশে তারা কি ঘন ঘন বন্দুক হামলা থেকে রক্ষা করতে পারছে নিরীহ মানুষকে? তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ কম নয়।  

ক্ষমতা মদমত্ত হয়েই যে আমেরিকা আমাদের মতো দেশগুলোর ওপর খবরদারি করছে এবং সেটা তাদের হীন স্বার্থে, এটি কারও বুঝতে বাকি নেই। তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থও রয়েছে। নিজেদের কাছে অবাধ্য বলে বিবেচিত সরকারকে বাধ্য করতেও তারা এসব করে থাকে। আমেরিকা ইতিমধ্যে অনেক দেশে অনেক অন্যায় হস্তক্ষেপ করেছে। যুদ্ধও চাপিয়ে দিয়েছে অজুহাত খাড়া করে। গণহত্যার আয়োজন করেছে। তাদের মুখে শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলি বেমানান। তাদের এটাও বুঝতে হবে, বিশ্ব আর এককেন্দ্রিক নেই। চীনের নব উত্থান হয়েছে এবং রুশ-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে ক্রমে। আঞ্চলিক শক্তিগুলোরও উত্থান হচ্ছে। যেমন—ভারত। ভারত-আমেরিকার মৈত্রীও আগের জায়গায় নেই। সৌদি আরবের সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্ক পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘটছে নানা পরিবর্তন। এ অবস্থায় মার্কিন খবরদারির সুযোগও সীমিত হয়ে আসছে। আর বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলেছে।  

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করে আমেরিকা ও তার সহযোগী বা মিত্রদের সাফ জানিয়ে দিতে হবে, আমাদের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সমস্যার সমাধান আমরাই করব।

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত