Ajker Patrika

এই বেদনা ক্ষমা করো

রুশা চৌধুরী
এই বেদনা ক্ষমা করো

‘আর বলবেন না ভাবি, আমার বাচ্চার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা কালকে, মানে বাংলা পরীক্ষা।’

‘দোয়া করিস রে দিদি, কালকে অরিত্রর বাংলা পরীক্ষা।’

‘কী যে পরীক্ষা দেবে! কী দরকার ছিল এই বাংলাটা এত আলাদা করে পড়ানোর, বাংলা তো ওরা এমনিই বলতে পারে।’

কথাগুলো আমাদের দেশের স্কুল পর্যায়ের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা কিছু মা-বাবার। যতই ‘মায়ের ভাষা’, ‘প্রাণের ভাষা’ বলি না কেন, বাংলা এ দেশে দিন দিন কঠিন হচ্ছে, ব্রাত্য হচ্ছে, হেলাফেলার হচ্ছে।

যত চোখ মোছা আর ‘আ মরি বাংলা ভাষা’, সেটা শুধু একটি মাসের জন্যই বরাদ্দ যেন। ইংরেজি ভালো বলতে-লিখতে পারা অবশ্যই আবশ্যক, তাই বলে বাংলার এমন হাল?

এই তো সেদিন, প্রাইভেট টিচারের বাসার সামনে বসে এক মায়ের সে কী গর্ব, ‘আমার ছেলেটা একদম বাংলা পারে না ভাবি!’ এই কথার মধ্যে যেই গর্ব, যেই মাথা উঁচু করে থাকা...প্রাণ যদি থাকত, তবে শহীদ মিনারটা নিজে নিজেই ভেঙে পড়ত

সমস্যাটা কোথায়? কোথায় সেই রন্ধ্র; যেই ফোকর গলে বাহান্ন সালের দানবটা আমাদের বাঙালির অন্তরমহল গ্রাস করে নিচ্ছে? এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতেই হবে, তাই বলে ভুলে যাব ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ সেই দিনটার কথা? তবে কি সেই শপথটায় কোনো ভুল ছিল? অবশ্য শুধু মা-বাবা আর শিক্ষার্থীদের কথা কেন বলব, আমাদের শিক্ষকদের দায়বদ্ধতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এই তো সেদিন, আমার মেয়ের স্কুলে রচনা লেখা এসেছে, ‘বনভোজনের মধুর স্মৃতি’। ক্লাসের অত্যন্ত মেধাবী মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও বনভোজনের কোথাও এক ফোঁটা ‘মধু’ বা ‘হানি’র স্মৃতি মনে করতে পারল না। শেষে বুদ্ধি করে লিখে এল যে সেই বনভোজনে তারা ‘হানি গ্লেইজড চিকেন’ খেয়েছিল। কোথায় ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’ আর কোথায় ‘মধুকরের মধু’!

মেরি শেলির লেখা উপন্যাসের সেই দৈত্য মানে ‘ফ্র‍্যাংকেনস্টাইন’ কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে আমাদের অন্তরে! ভেতর-মহল থেকে এই সে বেরিয়ে এল বলে।
শুধু গান গাইলে যদি কাজ হতো, তবে গাইতাম—

‘এই যে হিয়া থরোথরো কাঁপে আজি এমনতরো
এই বেদনা...’ 

সত্যি হলো, এই বেদনা ক্ষমার অযোগ্য।

রূপান্তরের যুগে বাংলা ভাষা ‘মধুর স্মৃতি’ থেকে ‘মধুমাখা মুরগিতে’ বদলে না যাক, আমাদের মধুর ভাষা মুখের কথায় আর ভালোবাসায় বাঁচুক।

লেখক: আবৃত্তিশিল্পী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত