হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির শঙ্কা কাস্টমসের

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২৬
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বন্দরে কাগজের আড়ালে সিগারেটের নকল ব্যান্ডরোল আমদানি বেড়ে চলেছে। এতে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় কাস্টমসের করা মামলার এজাহারে একে ‘ক্রিমিনাল অফেনস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীন থেকে এ-ফোর সাইজের অফসেট কাগজের আড়ালে সিগারেটের নকল ব্যান্ডরোল আমদানির দুটি চালান জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এর আগে ২০২১ সালে ওই আমদানি ও রপ্তানিকারক একই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৩টি চালান খালাস করে। এসব চালানে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এদিকে গোপনে নকল ব্যান্ডরোল আমদানির ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মাধ্যমে বিশেষভাবে তদন্তের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম। একইভাবে অবৈধ কারবার বন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীন সরকারকে দিয়ে তদন্ত করানোর সুপারিশ করেছেন তিনি। এ ছাড়া খালাস চালানগুলোর বাজারজাত হওয়া সিগারেটের ব্যান্ডরোল পরীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিশনার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে নেমেছে কাস্টমস, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিআইডি ও ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) দল।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার শরফুদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘নকল ব্যান্ডরোল আমদানির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে মনে করছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআরও অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (এসপিসিএল) থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ফলে এই জাতীয় পণ্য এসপিসিএল ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার কোনো সুযোগ নেই। এই অবৈধ কারবারে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত।’

নকল ব্যান্ডরোল আটকের ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গত ১৬ ডিসেম্বর বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও ২৩ ডিসেম্বর আরাফাত এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে নগরের বন্দর থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের চীন থেকে আনা এ-ফোর সাইজের পেপারে ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারের উপযোগী ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস ব্যান্ডরোল ছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আমদানিকারক বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজের জব্দ হওয়া দুটি চালানের ব্যান্ডরোল বাজারজাত হলে ২৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারাত সরকার। চালান দুটি আটকের পর কাস্টমসের অনুসন্ধানে উঠে আসে, চক্রটি গত এক বছরে এ ধরনের ১৩টি চালান খালাস করেছে। এসব চালানে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা করছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এদিকে চীনের একই রপ্তানিকারক ডিজি এন্ট্রি-ফেক (সেনজেন) কোম্পানি লিমিটেড থেকে আসে এসব পণ্য। নকল ব্যান্ডরোলের দুই আমদানিকারক চীনের একই প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আমদানি ও খালাসে নিয়োজিত একমাত্র আগ্রাবাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মধুমতি অ্যাসোসিয়েটস।

চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল কবির বলেন, নকল ব্যান্ডরোল জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দায়ের করা মামলা দুটি সিআইডি তদন্ত করছে।

সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, সিআইডি মামলা দুটি তদন্ত করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ এজাহারভুক্ত বা এর বাইরে যে-ই হোক না কেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনে সোপর্দ করা হবে।

এদিকে ওই ঘটনায় নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রধান শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’

সূত্র জানায়, ব্যান্ডরোল আমদানি করা প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের প্রাতিষ্ঠানিক ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লার জিএ ভবনে। তবে জিএ ভবনে ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব মেলেনি। আরেক আমদানিকারক আরাফাত এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর জুবলি রোড এলাকার কাদের টাওয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত