স্বপ্না রেজা
উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। কাউকে পেছনে ফেলে, পেছনে রেখে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হয় না। বর্তমান বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা, তা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, আলোচনা-সমালোচনা যাই-ই থাকুক। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের মানুষের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকায়নের বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ, পরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ থেকে সহজতর করেছে। প্রচলিত অর্থে মানবমর্যাদা বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা ব্যক্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিধায় জনমনে স্বস্তির উপস্থিতি দেখা যায়। যদিও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি ততটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিশ্চিত হয়নি এবং না হওয়ার কারণও রয়েছে বেশ। যেমন—যথাযথ আইন প্রয়োগ না করা, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো রয়ে গেছে। যা হোক, ভালোমন্দ মিলিয়ে দেশ এগোচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেউ অস্বীকার করলে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন বলে মনে করা যেতেই পারে।
শুরুতে বলছিলাম, উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি, গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণি-জাতির মানুষের, তথা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক সুবিধাভোগের ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছে এবং সেটা সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি-ধমকির পরও। আইন প্রণয়ন হয়েছে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সচেতনতারও কমতি নেই। ধর্ম, বর্ণ, জাতিভেদে সব শ্রেণির মানুষের সামাজিক ও মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধানের এক অভাবনীয় চিন্তা-চেতনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফলশ্রুতি—এমন কথা নির্বিঘ্নে বলা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। এখানে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার স্নায়ু বিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে সরকার। তাদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। উদ্যোগ গ্রহণে বলা যায়, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব, সন্দেহ নেই। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর এক দশকের বেশি সময়ে আদতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কী করা হয়েছে বা হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করা দরকার। সমাজের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি, অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা এক কথায় বলে দিতে পারে যে, আদতে তারা সমাজের কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছে।
আর সবার মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও বেঁচে থাকার মেধা, শক্তি নিয়ে জগতে ভূমিষ্ঠ হয়। সৃষ্টিকর্তা সব প্রাণীকেই বেঁচে থাকার, টিকে থাকার শক্তি, মেধা ও সাহস দিয়ে জগতে পাঠিয়ে দেন। প্রত্যেক প্রাণীকেই প্রকৃতির সহায়তায়, অন্য প্রাণীর সহায়তায় বেড়ে উঠতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সহায়তার বেশি প্রয়োজন পড়ে। কারণ, তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জগতে আবির্ভূত হয়। একটা সময়ে সমাজে মনে করা হতো, ব্যক্তির প্রতিবন্ধিতা মূলত জিন-পরির আছর। ধর্মীয় রীতিনীতিতে তাকে সুস্থ করার পাঁয়তারা চলত। অসচেতন অভিভাবক সন্তানের এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারতেন না। দ্বারস্থ হতেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিদের আস্তানায়। বলা যায়, ধীরে ধীরে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি না হলেও বেশ কিছুটা সেই আঁধারাচ্ছন্ন যুগের অবসান ঘটেছে। এই অবসানের নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন এবং আছেনও প্রথমত অভিভাবকেরা, তারপর সমাজ উন্নয়নকর্মী এবং রাষ্ট্র। অভিভাবকদের উদ্যোগই এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ঘর থেকে বের হতে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রবেশাধিকার ঘটেছে। রাষ্ট্র বুঝেছে, এই বিশেষ জনগোষ্ঠী দেশের সংবিধানের আওতাভুক্ত। এদের নিয়েই এগোতে হবে।
তবে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সমাজের সবাই যে পরিপূর্ণ ধারণা বহন করে কাজ করে, তা কিন্তু নয়। ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এর মতে, ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। এই ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হলো: অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। এর মধ্যে অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি হলো স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট, কারিকুলাম ও পরিকল্পনা এবং অর্থ বরাদ্দ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করেছে যে, তাদের মধ্যে যে সক্ষমতা ও মেধা রয়েছে, তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব এবং প্রশিক্ষিতদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সহজ হয়। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের সক্ষমতার বিষয়ে গবেষণা জরুরি।
প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে দায়িত্বশীল অনেকের মধ্যেই এখনো চ্যারিটি মনোভাব দেখা যায়। অথচ উন্নয়নের মূলধারায় এই বিশেষ জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করতে সক্ষম, যদি তাদের দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সে ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সদিচ্ছা ও দায়িত্ববোধ থেকে যায়। বর্তমানে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সব জায়গায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি আছে। মোটামুটি প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবাই কমবেশি অবগত হয়েছেন। যদিও প্রতিবন্ধী বলতে অনেকেই কেবল অটিজম বুঝে থাকেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবার ধারণা সম্পূর্ণ নয়। এখন বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। এক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানা গেল যে, সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁর কাজ হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বা ইচ্ছেপূরণে সবারই অনেক কাজ করার কথা, থাকার কথা কাজের জবাবদিহিতা।
সমন্বয় নেই মন্ত্রণালয়গুলোর—এ রকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। রাষ্ট্রের জনগণের জন্য যেমন সব মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও সমন্বয় দরকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তেমন সমন্বয় ও ভূমিকা দরকার, যদি সত্যিকার অর্থে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগের কথা ভেবে থাকি, নিশ্চিত করার সৎ ইচ্ছা পোষণ করি।
একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান তথা জীবিকায়ন অপরিহার্য বিষয়, তেমনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের উপযোগী করার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনিভাবে সমাজকেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেনতেনভাবে ঢালাও কর্মসূচিতে ফেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। বরং তাদের গুণগত অবস্থার অবনতি ঘটবে।
ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অতিমারি করোনার সময়ে একটি অনলাইন সম্মেলন বাস্তবায়ন করে, যেখানে ২ হাজার ৬৪ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেন। ২০ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা তাঁদের উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃতও হন। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং অর্থনীতিবিদ ও তৎকালীন পিকেএসএফ পর্ষদ চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান আহমদ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে খলীকুজ্জমান আহমদ পাঁচজন যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তাঁর কিউকে আহমদ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন, যা আজও চলমান।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। চাই যথাযথ পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ এবং দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহি।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। কাউকে পেছনে ফেলে, পেছনে রেখে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হয় না। বর্তমান বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা, তা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, আলোচনা-সমালোচনা যাই-ই থাকুক। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের মানুষের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকায়নের বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ, পরিকল্পনা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ থেকে সহজতর করেছে। প্রচলিত অর্থে মানবমর্যাদা বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা ব্যক্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিধায় জনমনে স্বস্তির উপস্থিতি দেখা যায়। যদিও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি ততটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিশ্চিত হয়নি এবং না হওয়ার কারণও রয়েছে বেশ। যেমন—যথাযথ আইন প্রয়োগ না করা, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো রয়ে গেছে। যা হোক, ভালোমন্দ মিলিয়ে দেশ এগোচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেউ অস্বীকার করলে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন বলে মনে করা যেতেই পারে।
শুরুতে বলছিলাম, উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি, গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণি-জাতির মানুষের, তথা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক সুবিধাভোগের ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছে এবং সেটা সাম্প্রদায়িক শক্তির হুমকি-ধমকির পরও। আইন প্রণয়ন হয়েছে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সচেতনতারও কমতি নেই। ধর্ম, বর্ণ, জাতিভেদে সব শ্রেণির মানুষের সামাজিক ও মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধানের এক অভাবনীয় চিন্তা-চেতনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফলশ্রুতি—এমন কথা নির্বিঘ্নে বলা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। এখানে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার স্নায়ু বিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে সরকার। তাদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। উদ্যোগ গ্রহণে বলা যায়, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব, সন্দেহ নেই। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর এক দশকের বেশি সময়ে আদতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কী করা হয়েছে বা হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করা দরকার। সমাজের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি, অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা এক কথায় বলে দিতে পারে যে, আদতে তারা সমাজের কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছে।
আর সবার মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও বেঁচে থাকার মেধা, শক্তি নিয়ে জগতে ভূমিষ্ঠ হয়। সৃষ্টিকর্তা সব প্রাণীকেই বেঁচে থাকার, টিকে থাকার শক্তি, মেধা ও সাহস দিয়ে জগতে পাঠিয়ে দেন। প্রত্যেক প্রাণীকেই প্রকৃতির সহায়তায়, অন্য প্রাণীর সহায়তায় বেড়ে উঠতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সহায়তার বেশি প্রয়োজন পড়ে। কারণ, তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জগতে আবির্ভূত হয়। একটা সময়ে সমাজে মনে করা হতো, ব্যক্তির প্রতিবন্ধিতা মূলত জিন-পরির আছর। ধর্মীয় রীতিনীতিতে তাকে সুস্থ করার পাঁয়তারা চলত। অসচেতন অভিভাবক সন্তানের এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারতেন না। দ্বারস্থ হতেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিদের আস্তানায়। বলা যায়, ধীরে ধীরে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি না হলেও বেশ কিছুটা সেই আঁধারাচ্ছন্ন যুগের অবসান ঘটেছে। এই অবসানের নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন এবং আছেনও প্রথমত অভিভাবকেরা, তারপর সমাজ উন্নয়নকর্মী এবং রাষ্ট্র। অভিভাবকদের উদ্যোগই এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ঘর থেকে বের হতে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রবেশাধিকার ঘটেছে। রাষ্ট্র বুঝেছে, এই বিশেষ জনগোষ্ঠী দেশের সংবিধানের আওতাভুক্ত। এদের নিয়েই এগোতে হবে।
তবে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সমাজের সবাই যে পরিপূর্ণ ধারণা বহন করে কাজ করে, তা কিন্তু নয়। ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এর মতে, ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। এই ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হলো: অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। এর মধ্যে অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি হলো স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট, কারিকুলাম ও পরিকল্পনা এবং অর্থ বরাদ্দ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করেছে যে, তাদের মধ্যে যে সক্ষমতা ও মেধা রয়েছে, তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব এবং প্রশিক্ষিতদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সহজ হয়। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের সক্ষমতার বিষয়ে গবেষণা জরুরি।
প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে দায়িত্বশীল অনেকের মধ্যেই এখনো চ্যারিটি মনোভাব দেখা যায়। অথচ উন্নয়নের মূলধারায় এই বিশেষ জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করতে সক্ষম, যদি তাদের দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সে ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সদিচ্ছা ও দায়িত্ববোধ থেকে যায়। বর্তমানে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সব জায়গায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি আছে। মোটামুটি প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবাই কমবেশি অবগত হয়েছেন। যদিও প্রতিবন্ধী বলতে অনেকেই কেবল অটিজম বুঝে থাকেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবন্ধী বিষয়ে সবার ধারণা সম্পূর্ণ নয়। এখন বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। এক মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানা গেল যে, সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁর কাজ হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বা ইচ্ছেপূরণে সবারই অনেক কাজ করার কথা, থাকার কথা কাজের জবাবদিহিতা।
সমন্বয় নেই মন্ত্রণালয়গুলোর—এ রকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। রাষ্ট্রের জনগণের জন্য যেমন সব মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও সমন্বয় দরকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তেমন সমন্বয় ও ভূমিকা দরকার, যদি সত্যিকার অর্থে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগের কথা ভেবে থাকি, নিশ্চিত করার সৎ ইচ্ছা পোষণ করি।
একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান তথা জীবিকায়ন অপরিহার্য বিষয়, তেমনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের উপযোগী করার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনিভাবে সমাজকেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেনতেনভাবে ঢালাও কর্মসূচিতে ফেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। বরং তাদের গুণগত অবস্থার অবনতি ঘটবে।
ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অতিমারি করোনার সময়ে একটি অনলাইন সম্মেলন বাস্তবায়ন করে, যেখানে ২ হাজার ৬৪ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেন। ২০ জন যুব প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা তাঁদের উদ্যোগের জন্য পুরস্কৃতও হন। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং অর্থনীতিবিদ ও তৎকালীন পিকেএসএফ পর্ষদ চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান আহমদ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে খলীকুজ্জমান আহমদ পাঁচজন যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তাঁর কিউকে আহমদ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন, যা আজও চলমান।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। চাই যথাযথ পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ এবং দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহি।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে