মহিউদ্দিন খান মোহন
বেইলি রোডের ভবনটির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি সংস্থাগুলো জোরদার অভিযান চালাচ্ছে অনিয়ম খুঁজে বের করতে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে সেই সব অভিযানের সচিত্র খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযানের বিবরণ পাঠ করে মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক, দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে এই তাদের উৎসাহ এত দিন কোথায় লুক্কায়িত ছিল?
তাদের তৎপরতা দেখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক—এতকালের শীতনিদ্রা ভেঙে তারা বুঝি এইমাত্র জেগে উঠেছে। অবশ্য এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয় আমাদের দেশে। সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ নামের কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙে। তারা প্রথমেই গঠন করে তদন্ত কমিটি, সময় বেঁধে দেয় সে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের। সেই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর আইনি পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও জানানো হয়।
কিন্তু সব সময় যেটা দেখা যায়, তা ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় তারা কী তদন্ত করে, কী রিপোর্ট বানায়, কাদের কাছে জমা দেয়—কিছুই জনগণের গোচরে আসে না। বেশির ভাগ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সূর্যালোকের মুখ দর্শন করতে পারে না। আবার কোনোটির তদন্তে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে, লালুর দায় কালুর মাথায় চাপানোর নজিরও আছে।
ফলে এসব কথিত তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত-প্রক্রিয়ার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ-আস্থা কোনোটাই নেই। এরপরও প্রতিটি দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। আর বেশির ভাগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর এমনভাবে হারিয়ে যায় যে তারা কোথায় হারাল বা কী করছে, সেসব তদন্ত করার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এবারও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখবে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ কী। অবশ্য সেই তদন্ত রিপোর্ট কবে বের হবে, তা কেউ বলতে পারে না।
বেইলি রোডের ওই অগ্নিকাণ্ডের পর দুর্যোগ নেমে এসেছে রাজধানী ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোর ওপর। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মানবসন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ৫ মার্চ থেকে রাজউক, দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপি মিলে জোরেশোরে অভিযান শুরু করেছে অবৈধ রেস্তোরাঁ ও ভবনের বিরুদ্ধে। তারা এরই মধ্যে অভিযান চালিয়েছে পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁয়। গ্রেপ্তার করেছে ৮৭২ জনকে। তাদের মধ্যে রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের সংখ্যাই বেশি। কয়েকজন মালিকও রয়েছেন গ্রেপ্তারের তালিকায়। কর্তৃপক্ষ সিলগালা করে দিয়েছে শখানেক রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান।
অবৈধ বা অননুমোদিত রেস্তোরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে কর্মচারীদের দায় কতটুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পেটের দায়ে চাকরি করতে আসা দরিদ্র মানুষগুলোর তো জানার কথা নয় তিনি যে রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন, সেটি বৈধ না অবৈধ। রেস্তোরাঁর মালিক বা যাঁরা এত দিন তাঁদের অবৈধভাবে তা চালাতে সহযোগিতা করেছেন, সরকারি কর্তৃপক্ষের সেই সব কর্তাব্যক্তির কোমরে দড়ি না দিয়ে নিরীহ কর্মচারীদের চৌদ্দ শিকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া অন্যায় শুধু নয়, অমার্জনীয় অপরাধও বটে। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উচিত ওই সব হতদরিদ্র রেস্তোরাঁর কর্মচারীর পাশে দাঁড়ানো।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বলেছে, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ ও প্রত্যয়কে সাধুবাদ না জানালে অবিচার করা হবে। একটি দেশের সবকিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হওয়া উচিত।
আমাদের দেশে মাঠের ফুটবল আর ক্রিকেট ম্যাচ ছাড়া অন্য কোনো কিছু সঠিক নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে চলে বলে মনে হয় না। সবখানে অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অবৈধ কাজ হয়ে গেছে অলিখিতভাবে বৈধ। ঢাকা শহরে এখন আবাসিক আর বাণিজ্যিক এলাকার পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ছিল একসময় অভিজাত আবাসিক এলাকা। এখন সেখানে গেলে মনে হয় কোনো বাণিজ্যিক এলাকায় এসেছি। বনশ্রী আবাসিক এলাকার বড় রাস্তায় বেরোলে মনে হয় সদরঘাট বা গুলিস্তানে আছি।
পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ধানমন্ডির একটি ভবনেই রয়েছে কুড়িটি রেস্টুরেন্ট! এটা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পাওয়ার মতো। সংশ্লিষ্টরা একটু উদ্যোগ নিলেই আমরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করতে পারি।
প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। আজ কর্তৃপক্ষ কর্তব্য পালনে যে নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছে, দুর্ঘটনাটি ঘটার আগে তারা কী করছিল? ভবনটিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ের অনুমতিও ছিল না। তাহলে কী করে এতগুলো রেস্টুরেন্ট সেখানে খুলতে পারলেন ব্যবসায়ীরা? দেশের যেকোনো স্থানে একটি রেস্টুরেন্ট, খাবার দোকান কিংবা অন্য যেকোনো ব্যবসা চালু করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।
বেইলি রোডের ভবনটির রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো অনুমতি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এটা যাচাই করে দেখেনি, ভবনটিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করার অনুমতি আছে কি না? এরই মধ্যে কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক। বলেছেন, তাঁরা নাকি ভবনমালিককে তিনবার নোটিশ দিয়েছেন। ধরে নিলাম তাঁরা তিনটি নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু একের পর এক নোটিশ দিলেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
সেই নোটিশের নির্দেশাবলি ভবনমালিক পালন করলেন কি না, তা দেখা, না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া কি তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল এক চায়ের মজলিশে। নোটিশের প্রসঙ্গ আসতেই একজন বললেন, ‘ভায়া, নোটিশের সঙ্গে কিন্তু “নোটে”র গভীর সম্পর্ক। নোটেরা জোট বেঁধে যখন বান্ডিলে পরিণত হয়, তখন অনেক শক্তিশালী নোটিশও নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।’ ফায়ার সার্ভিসের পৌনে এক হালি নোটিশের বেলায় তেমন কিছু ঘটেছে কি না, জানি না। তবে এটা বলা নিশ্চয়ই অসংগত হবে না যে নোটিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, মহাপরিচালক মহোদয়কে তা স্মরণে রাখতে হবে।
বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তাতে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ নামে দেশের বড়সড় একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক, ভবনটির ভূমি মালিকসহ কয়েকজনকে আসামি করেছে পুলিশ। এ ধরনের মামলার পরিণতি কী হয় তা জানা আছে দেশবাসীর। সবারই স্মরণ থাকার কথা ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আগুন লেগেছিল বনানীর এফ আর টাওয়ারে। ২২ তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের অষ্টম তলা থেকে সূত্রপাত হয়েছিল আগুনের। সেই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জন হতভাগ্য মানুষের, আহত হয়েছিল ৭০ জন। ভবনটির অনুমোদন ছিল ১৫ বা ১৬ তলা।
রাজউকের কাগজপত্র জাল করে সেটাকে বানানো হয়েছিল ২২ তলা। মামলা হয়েছিল ভূমিমালিক ফারুকুল ইসলাম, ডেভেলপার কোম্পানি রূপায়ণের মালিক লিয়াকত আলী মুকুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ভূমিমালিক ফারুক গ্রেপ্তার হলেও রূপায়ণের মালিকের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। দুর্ঘটনার পরপরই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। তারপর সবকিছু ম্যানেজ করে একসময় ফিরে আসেন দেশে। বছরখানেক পরে জানা যায়, ওই ঘটনায় রূপায়ণের মালিকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ব্যস, সব ঠান্ডা!
প্রশ্ন হলো, একটি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম এবং তৎকারণে দুর্ঘটনার দায় কি প্রতিষ্ঠানের মালিকের ওপর বর্তায় না? এবারও মামলা হয়েছে। এর ফলাফল কী হবে, এখনই বলা যাবে না। হয়তো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে নিশ্চিত হবে, এই ভয়ংকর দুর্ঘটনার সঙ্গে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিচিত্র আমাদের এই দেশে কত কিছুই না ঘটে!
বেইলি রোডের ভবনটির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি সংস্থাগুলো জোরদার অভিযান চালাচ্ছে অনিয়ম খুঁজে বের করতে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে সেই সব অভিযানের সচিত্র খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযানের বিবরণ পাঠ করে মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক, দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে এই তাদের উৎসাহ এত দিন কোথায় লুক্কায়িত ছিল?
তাদের তৎপরতা দেখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক—এতকালের শীতনিদ্রা ভেঙে তারা বুঝি এইমাত্র জেগে উঠেছে। অবশ্য এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয় আমাদের দেশে। সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ নামের কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙে। তারা প্রথমেই গঠন করে তদন্ত কমিটি, সময় বেঁধে দেয় সে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের। সেই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর আইনি পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও জানানো হয়।
কিন্তু সব সময় যেটা দেখা যায়, তা ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় তারা কী তদন্ত করে, কী রিপোর্ট বানায়, কাদের কাছে জমা দেয়—কিছুই জনগণের গোচরে আসে না। বেশির ভাগ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সূর্যালোকের মুখ দর্শন করতে পারে না। আবার কোনোটির তদন্তে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে, লালুর দায় কালুর মাথায় চাপানোর নজিরও আছে।
ফলে এসব কথিত তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত-প্রক্রিয়ার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ-আস্থা কোনোটাই নেই। এরপরও প্রতিটি দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। আর বেশির ভাগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর এমনভাবে হারিয়ে যায় যে তারা কোথায় হারাল বা কী করছে, সেসব তদন্ত করার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এবারও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখবে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ কী। অবশ্য সেই তদন্ত রিপোর্ট কবে বের হবে, তা কেউ বলতে পারে না।
বেইলি রোডের ওই অগ্নিকাণ্ডের পর দুর্যোগ নেমে এসেছে রাজধানী ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোর ওপর। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মানবসন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ৫ মার্চ থেকে রাজউক, দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপি মিলে জোরেশোরে অভিযান শুরু করেছে অবৈধ রেস্তোরাঁ ও ভবনের বিরুদ্ধে। তারা এরই মধ্যে অভিযান চালিয়েছে পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁয়। গ্রেপ্তার করেছে ৮৭২ জনকে। তাদের মধ্যে রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের সংখ্যাই বেশি। কয়েকজন মালিকও রয়েছেন গ্রেপ্তারের তালিকায়। কর্তৃপক্ষ সিলগালা করে দিয়েছে শখানেক রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান।
অবৈধ বা অননুমোদিত রেস্তোরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে কর্মচারীদের দায় কতটুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পেটের দায়ে চাকরি করতে আসা দরিদ্র মানুষগুলোর তো জানার কথা নয় তিনি যে রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন, সেটি বৈধ না অবৈধ। রেস্তোরাঁর মালিক বা যাঁরা এত দিন তাঁদের অবৈধভাবে তা চালাতে সহযোগিতা করেছেন, সরকারি কর্তৃপক্ষের সেই সব কর্তাব্যক্তির কোমরে দড়ি না দিয়ে নিরীহ কর্মচারীদের চৌদ্দ শিকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া অন্যায় শুধু নয়, অমার্জনীয় অপরাধও বটে। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উচিত ওই সব হতদরিদ্র রেস্তোরাঁর কর্মচারীর পাশে দাঁড়ানো।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বলেছে, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ ও প্রত্যয়কে সাধুবাদ না জানালে অবিচার করা হবে। একটি দেশের সবকিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালিত হওয়া উচিত।
আমাদের দেশে মাঠের ফুটবল আর ক্রিকেট ম্যাচ ছাড়া অন্য কোনো কিছু সঠিক নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে চলে বলে মনে হয় না। সবখানে অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অবৈধ কাজ হয়ে গেছে অলিখিতভাবে বৈধ। ঢাকা শহরে এখন আবাসিক আর বাণিজ্যিক এলাকার পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ছিল একসময় অভিজাত আবাসিক এলাকা। এখন সেখানে গেলে মনে হয় কোনো বাণিজ্যিক এলাকায় এসেছি। বনশ্রী আবাসিক এলাকার বড় রাস্তায় বেরোলে মনে হয় সদরঘাট বা গুলিস্তানে আছি।
পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ধানমন্ডির একটি ভবনেই রয়েছে কুড়িটি রেস্টুরেন্ট! এটা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পাওয়ার মতো। সংশ্লিষ্টরা একটু উদ্যোগ নিলেই আমরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করতে পারি।
প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। আজ কর্তৃপক্ষ কর্তব্য পালনে যে নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছে, দুর্ঘটনাটি ঘটার আগে তারা কী করছিল? ভবনটিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ের অনুমতিও ছিল না। তাহলে কী করে এতগুলো রেস্টুরেন্ট সেখানে খুলতে পারলেন ব্যবসায়ীরা? দেশের যেকোনো স্থানে একটি রেস্টুরেন্ট, খাবার দোকান কিংবা অন্য যেকোনো ব্যবসা চালু করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।
বেইলি রোডের ভবনটির রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো অনুমতি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এটা যাচাই করে দেখেনি, ভবনটিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করার অনুমতি আছে কি না? এরই মধ্যে কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক। বলেছেন, তাঁরা নাকি ভবনমালিককে তিনবার নোটিশ দিয়েছেন। ধরে নিলাম তাঁরা তিনটি নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু একের পর এক নোটিশ দিলেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
সেই নোটিশের নির্দেশাবলি ভবনমালিক পালন করলেন কি না, তা দেখা, না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া কি তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল এক চায়ের মজলিশে। নোটিশের প্রসঙ্গ আসতেই একজন বললেন, ‘ভায়া, নোটিশের সঙ্গে কিন্তু “নোটে”র গভীর সম্পর্ক। নোটেরা জোট বেঁধে যখন বান্ডিলে পরিণত হয়, তখন অনেক শক্তিশালী নোটিশও নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।’ ফায়ার সার্ভিসের পৌনে এক হালি নোটিশের বেলায় তেমন কিছু ঘটেছে কি না, জানি না। তবে এটা বলা নিশ্চয়ই অসংগত হবে না যে নোটিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, মহাপরিচালক মহোদয়কে তা স্মরণে রাখতে হবে।
বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তাতে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ নামে দেশের বড়সড় একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক, ভবনটির ভূমি মালিকসহ কয়েকজনকে আসামি করেছে পুলিশ। এ ধরনের মামলার পরিণতি কী হয় তা জানা আছে দেশবাসীর। সবারই স্মরণ থাকার কথা ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আগুন লেগেছিল বনানীর এফ আর টাওয়ারে। ২২ তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের অষ্টম তলা থেকে সূত্রপাত হয়েছিল আগুনের। সেই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জন হতভাগ্য মানুষের, আহত হয়েছিল ৭০ জন। ভবনটির অনুমোদন ছিল ১৫ বা ১৬ তলা।
রাজউকের কাগজপত্র জাল করে সেটাকে বানানো হয়েছিল ২২ তলা। মামলা হয়েছিল ভূমিমালিক ফারুকুল ইসলাম, ডেভেলপার কোম্পানি রূপায়ণের মালিক লিয়াকত আলী মুকুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ভূমিমালিক ফারুক গ্রেপ্তার হলেও রূপায়ণের মালিকের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। দুর্ঘটনার পরপরই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। তারপর সবকিছু ম্যানেজ করে একসময় ফিরে আসেন দেশে। বছরখানেক পরে জানা যায়, ওই ঘটনায় রূপায়ণের মালিকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ব্যস, সব ঠান্ডা!
প্রশ্ন হলো, একটি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম এবং তৎকারণে দুর্ঘটনার দায় কি প্রতিষ্ঠানের মালিকের ওপর বর্তায় না? এবারও মামলা হয়েছে। এর ফলাফল কী হবে, এখনই বলা যাবে না। হয়তো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে নিশ্চিত হবে, এই ভয়ংকর দুর্ঘটনার সঙ্গে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিচিত্র আমাদের এই দেশে কত কিছুই না ঘটে!
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে