অরুণ কর্মকার
শিরোনামের বাক্যটি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রমের একটি বক্তৃতা থেকে নেওয়া। ৬ সেপ্টেম্বর শেভরন বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর দেওয়া সে বক্তৃতাটি অনেকেরই মনে হয়েছে কবিতার মতো বাঙ্ময়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি যেমন বলেছেন যে তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনে বিশ্বাস করো। অথচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে দেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত। তেমনি তিনি যে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সেই বিষয়েই আত্মসমালোচনা করেছেন। সাধারণত সরকারের অংশ কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে যা করতে দেখা যায় না।
আত্মসমালোচনা করতে গিয়েই তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার ‘ভিকটিম অব সাকসেস’। বিদ্যুতের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বাড়ানোর মতো জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা হয়তো যথাযথভাবে হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে জ্বালানির উচ্চমূল্য। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে।
‘ভিকটিম অব সাকসেস’ একটি বাগ্ধারা (ইডিয়ম)। বাগ্ধারায় কতিপয় শব্দ বা পদগুচ্ছ কিংবা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ কোনো অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে। ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি কিংবা সাফল্য সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। এখন আমরা তা-ই হয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অনেক বড় সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু জ্বালানির সংস্থান না থাকায় সেই সাফল্য বিরূপ পরিস্থিতির শিকার। ফলে অভাবনীয় সাফল্য সত্ত্বেও সরকার এখন সমালোচিত। সেই সাফল্যের ভিকটিম।
এর সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কথাও অনেকে বলতে পারেন, যা আমাদের এ অবস্থায় ফেলেছে। না হলে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়! হ্যাঁ, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটি সত্যের পূর্ণরূপ নয়।
কেননা, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না বা নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। দেশে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।
উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথাও আমাদের অজানা নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমরা জানি। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। একেবারে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছাতে হতো না।
তবে হ্যাঁ, জ্বালানি তেলের বিষয়টি আলাদা। আমাদের নিজেদের জ্বালানি তেল নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত নেই বলা যায়। অনেকে অবশ্য কিছুটা হলেও সম্ভাবনার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো জ্বালানি তেলে আমরা সম্পূর্ণরূপে আমদানিনির্ভর।
কিন্তু আমাদের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে জ্বালানি তেলের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যেত। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যবহার সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যেতে পারি। আর দাম বাড়িয়ে, পরিকল্পিতভাবে সাশ্রয় করে আমরা তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, যা এখন আমরা করছি। কিন্তু সমস্যাটা তখনই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যখন গ্যাস এবং জ্বালানি তেল দুটিতেই টান পড়েছে। এই টানাটানির
মধ্যে আমাদের পড়ার কোনো সংগত কারণ ছিল না।
অনেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, আবিষ্কার, উত্তোলন ও সরবরাহ বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করে এ কাজে দেশের আর্থিক অসামর্থ্যের কথা বলেন। কথাগুলো অসত্য নয়। আবার পূর্ণ সত্যও নয়। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বিপুল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ তো বটেই, একটি অনিশ্চিত যাত্রাও। বিপুল ব্যয় করেও কিছুই না পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় রকম আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
কিন্তু পাওয়া গেলে, বিশদ আর্থিক হিসেবে সেখান থেকে ব্যয়ের ৭০০ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন আসে। আর আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার হার ৩: ১। অর্থাৎ তিনটি কূপ খনন করে একটিতে পাওয়া গেছে। এখন অবশ্য এই হার থাকবে না। কেননা, সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো আগে খনন করা হয়েছে। এখন হয়তো ৪: ১ হবে। পৃথিবীতে গড়ে এই হার ৫: ১। এই হারে পাওয়া গেলেও তা বিশাল মুনাফা নিয়ে আসে।
তবে কথা হলো, একটি কূপে গ্যাস পাওয়ার জন্য ওই তিন-চারটি কূপ তো খনন করতে হবে। সেই টাকা বিনিয়োগ করাও সব সময় সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) একটি ঐতিহাসিক কাজ করেছে। ওই সময় বিইআরসির কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু গণশুনানি শেষে বিইআরসি দাম না বাড়ানোর রায় ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (জিডিএফ)’ নামে একটি তহবিল গঠন করে বিইআরসি গ্রাহকের একটি দায়িত্ব দেয়।
দায়িত্বটি হলো, গ্রাহক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে ৪৬ পয়সা বেশি দাম দেবে। এই ৪৬ পয়সা কোনো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে যাবে না। জমা হবে জিডিএফে। তাতে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হবে। এই টাকা গ্যাস অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খননে ব্যবহার করা হবে; অর্থাৎ সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের অনিশ্চিত বিনিয়োগে
অনাগ্রহী বা অসমর্থ হলেও যাতে গ্রাহকের টাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন অব্যাহত রাখা যায়।
একটি কূপ খননে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা। সুতরাং জিডিএফের অর্থ দিয়ে বাপেক্স প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান ও কূপ খনন করা সম্ভব হবে—এই বিবেচনায় বিইআরসি জিডিএফ প্রবর্তন করেছিল। গ্রাহকেরাও সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, জিডিএফের টাকা গ্যাস খাত উন্নয়নে যেভাবে ব্যয় হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি।
দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি)। বর্তমানে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসছে পিএসসির অধীনে কর্মরত দুটি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে। পিএসসির সুবিধা হলো, সরকারের বিনিয়োগের কোনো দায় নেই। গ্যাস পাওয়া না গেলে গচ্চা যাবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কোম্পানির। আর গ্যাস পাওয়া গেলে তা ভাগাভাগি হবে। এই পদ্ধতিও আর্থিক বিচারে বিপুল লাভজনক।
কিন্তু সরকার এর কোনো কিছুই না করে, শুধু আমদানিনির্ভরতার পথযাত্রী হওয়ায় ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হওয়ার পথ নিজেই তৈরি করেছে। এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
শিরোনামের বাক্যটি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রমের একটি বক্তৃতা থেকে নেওয়া। ৬ সেপ্টেম্বর শেভরন বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর দেওয়া সে বক্তৃতাটি অনেকেরই মনে হয়েছে কবিতার মতো বাঙ্ময়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি যেমন বলেছেন যে তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনে বিশ্বাস করো। অথচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে দেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত। তেমনি তিনি যে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সেই বিষয়েই আত্মসমালোচনা করেছেন। সাধারণত সরকারের অংশ কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে যা করতে দেখা যায় না।
আত্মসমালোচনা করতে গিয়েই তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার ‘ভিকটিম অব সাকসেস’। বিদ্যুতের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বাড়ানোর মতো জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা হয়তো যথাযথভাবে হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে জ্বালানির উচ্চমূল্য। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে।
‘ভিকটিম অব সাকসেস’ একটি বাগ্ধারা (ইডিয়ম)। বাগ্ধারায় কতিপয় শব্দ বা পদগুচ্ছ কিংবা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ কোনো অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে। ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি কিংবা সাফল্য সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। এখন আমরা তা-ই হয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অনেক বড় সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু জ্বালানির সংস্থান না থাকায় সেই সাফল্য বিরূপ পরিস্থিতির শিকার। ফলে অভাবনীয় সাফল্য সত্ত্বেও সরকার এখন সমালোচিত। সেই সাফল্যের ভিকটিম।
এর সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কথাও অনেকে বলতে পারেন, যা আমাদের এ অবস্থায় ফেলেছে। না হলে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়! হ্যাঁ, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটি সত্যের পূর্ণরূপ নয়।
কেননা, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না বা নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। দেশে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।
উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথাও আমাদের অজানা নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমরা জানি। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। একেবারে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছাতে হতো না।
তবে হ্যাঁ, জ্বালানি তেলের বিষয়টি আলাদা। আমাদের নিজেদের জ্বালানি তেল নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত নেই বলা যায়। অনেকে অবশ্য কিছুটা হলেও সম্ভাবনার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো জ্বালানি তেলে আমরা সম্পূর্ণরূপে আমদানিনির্ভর।
কিন্তু আমাদের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে জ্বালানি তেলের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যেত। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যবহার সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যেতে পারি। আর দাম বাড়িয়ে, পরিকল্পিতভাবে সাশ্রয় করে আমরা তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, যা এখন আমরা করছি। কিন্তু সমস্যাটা তখনই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যখন গ্যাস এবং জ্বালানি তেল দুটিতেই টান পড়েছে। এই টানাটানির
মধ্যে আমাদের পড়ার কোনো সংগত কারণ ছিল না।
অনেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, আবিষ্কার, উত্তোলন ও সরবরাহ বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করে এ কাজে দেশের আর্থিক অসামর্থ্যের কথা বলেন। কথাগুলো অসত্য নয়। আবার পূর্ণ সত্যও নয়। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বিপুল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ তো বটেই, একটি অনিশ্চিত যাত্রাও। বিপুল ব্যয় করেও কিছুই না পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় রকম আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
কিন্তু পাওয়া গেলে, বিশদ আর্থিক হিসেবে সেখান থেকে ব্যয়ের ৭০০ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন আসে। আর আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার হার ৩: ১। অর্থাৎ তিনটি কূপ খনন করে একটিতে পাওয়া গেছে। এখন অবশ্য এই হার থাকবে না। কেননা, সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো আগে খনন করা হয়েছে। এখন হয়তো ৪: ১ হবে। পৃথিবীতে গড়ে এই হার ৫: ১। এই হারে পাওয়া গেলেও তা বিশাল মুনাফা নিয়ে আসে।
তবে কথা হলো, একটি কূপে গ্যাস পাওয়ার জন্য ওই তিন-চারটি কূপ তো খনন করতে হবে। সেই টাকা বিনিয়োগ করাও সব সময় সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) একটি ঐতিহাসিক কাজ করেছে। ওই সময় বিইআরসির কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু গণশুনানি শেষে বিইআরসি দাম না বাড়ানোর রায় ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (জিডিএফ)’ নামে একটি তহবিল গঠন করে বিইআরসি গ্রাহকের একটি দায়িত্ব দেয়।
দায়িত্বটি হলো, গ্রাহক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে ৪৬ পয়সা বেশি দাম দেবে। এই ৪৬ পয়সা কোনো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে যাবে না। জমা হবে জিডিএফে। তাতে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হবে। এই টাকা গ্যাস অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খননে ব্যবহার করা হবে; অর্থাৎ সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের অনিশ্চিত বিনিয়োগে
অনাগ্রহী বা অসমর্থ হলেও যাতে গ্রাহকের টাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন অব্যাহত রাখা যায়।
একটি কূপ খননে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা। সুতরাং জিডিএফের অর্থ দিয়ে বাপেক্স প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান ও কূপ খনন করা সম্ভব হবে—এই বিবেচনায় বিইআরসি জিডিএফ প্রবর্তন করেছিল। গ্রাহকেরাও সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, জিডিএফের টাকা গ্যাস খাত উন্নয়নে যেভাবে ব্যয় হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি।
দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি)। বর্তমানে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসছে পিএসসির অধীনে কর্মরত দুটি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে। পিএসসির সুবিধা হলো, সরকারের বিনিয়োগের কোনো দায় নেই। গ্যাস পাওয়া না গেলে গচ্চা যাবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কোম্পানির। আর গ্যাস পাওয়া গেলে তা ভাগাভাগি হবে। এই পদ্ধতিও আর্থিক বিচারে বিপুল লাভজনক।
কিন্তু সরকার এর কোনো কিছুই না করে, শুধু আমদানিনির্ভরতার পথযাত্রী হওয়ায় ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হওয়ার পথ নিজেই তৈরি করেছে। এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে