কয়েনে অনীহা মেহেরপুরবাসীর

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুরে
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ২৯
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ০৮

অনেক আগেই হারিয়েছে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার কয়েন। তবে লেনদেনে পাঁচ টাকার কয়েনের ব্যবহার থাকলেও এক ও দুই টাকার কয়েনের প্রচলন একেবারই নেই। চার টাকা মূল্যের কোনো পণ্য কিনে পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিলে দোকানিরা ভাংতি নেই বলে এক টাকা ফেরত দেন না। আবার অনেক সময় এক টাকার বদলে ধরিয়ে দেন চকলেট।

মেহেরপুর পৌর শহরের মুদি দোকানি বিশু দাশ এক ও দুই টাকার কয়েনের বদলে চকলেট ধরিয়ে দেন। এতে করে ক্রেতার সঙ্গে বাঁধে তাঁর বিবাদ। খুব বিরক্তি নিয়ে বিশু দাশ বলেন, ‘এক ও দুই টাকার কয়েন একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। কেউ নিতে চান না। এমনি ভিক্ষুকরাও কয়েন দিলে ফেরত দেয়।’

আইন অনুযায়ী বিনিময়ের সময় কাগজি নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত সব মূল্যমানের কয়েন নিতে সবাই বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে লেনদেনের সময় এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে মেহেরপুরবাসীর অনীহা। ফলে এসব খুচরা পয়সা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার ব্যবসায়ীসহ সব পর্যায়ের মানুষ।

পৌর শহরের কসমেটিক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এক ও দুই টাকার কয়েন ক্রেতারা নিতে চান না। এ কারণে দোকানিদের কাছে পর্যাপ্ত কয়েন পড়ে থাকার পরও সেগুলো চালানো যাচ্ছে না। কয়েক বছর হলো কয়েনের ব্যবহার একেবারে কমে গেছে।’

কলা ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম যশোরের ঘোপ এলাকায় কলার আড়ত পরিচালনা করেন। মেহেরপুর থেকে ট্রাকে করে কলা কিনে সেখানে বিক্রি করেন। শহরের হোটেল বাজার মোড়ে মুদি দোকানির সঙ্গে দুই টাকার কয়েন নিয়ে বিবাদ বাঁধে তাঁর। তিনি বলেন, ‘যশোরে এক দুই টাকার কয়েন সচল রয়েছে। কিন্তু মেহেরপুরে দুই টাকার কয়েন নিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।’

মেহেরপুর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দ্বিপু বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সঠিক সময়ে বাজারে সরবরাহ করতে না পারায় কয়েনের সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে এক ও দুই টাকার কয়েন না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক টাকার কোনো পণ্য ক্রয় করলে ক্রেতাকে যেমন দুই টাকা পরিশোধ করতে হয়। তেমনি বিক্রেতাকে চার টাকার পণ্য কিনলে দুই টাকা ফেরত দিতে হয়।’

মেহেরপুর সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা (ক্যাশ) সেলিম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের প্রতিটি শাখাকে ১২ হাজার কয়েন নেওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা সেটি নিয়ে থাকি। কিন্তু সে কয়েনগুলো আর গ্রাহককেও দিতে পারি না। আবার ওই কয়েনগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত কয়েন নিলে আমাদের ভোল্টেও রাখতে পারি না। এখন আমাদের কাছে অনেক কয়েন জমা পড়ে রয়েছে। কেউ চাইলে আমরা দিতে পারি। ফলে কয়েন নিয়ে আমাদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আবার অনেক সময় বেশি কয়েন নিয়ে গ্রাহকেরা এলেও সেগুলো গণনাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।’

জেলা প্রশাসক ড. মুনছুর আলম খান বলেন, ‘যেকোনো কয়েন সরকারি আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ক্রেতা-বিক্রেতার নেওয়া বাধ্যতামূলক। কেউ নিতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আবার ব্যাংকের বেলায়ও একই আইন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত