মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আলী ইমাম মজুমদার: নির্বাচন নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল। কারণ অনেক দিন ধরে দেশে একটা সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন হচ্ছে না। এ ঘটনা ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে হয়ে আসছে; মানে অনেকটাই একতরফাভাবে নির্বাচন হচ্ছে। শাসক দলের প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, সেটার কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। আমার প্রত্যাশা ছিল, এবার সেটা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি দেখতে পাচ্ছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতিই বিরাজমান নয়।
প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনের বাইরে আছে। দলটি যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে, তার ব্যবস্থা সরকার আগে থেকেই করে রেখেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতাই কারাবন্দী। কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ধরনের অবস্থা হতাশাজনক।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে?
আলী ইমাম মজুমদার: এই নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা আমি বলতে পারছি না। তবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনের কথা বলছে। আমরাও কিন্তু বলছি, আন্তর্জাতিক মানের না হলেও, অন্তত আমাদের দেশের মানের মতো নির্বাচন হোক। আমাদের দেশে ১৯৭০, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছিল, সে রকমভাবে অন্তত এবারের নির্বাচনটা হোক, তা আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি, ওই রকম মানের নির্বাচন এবারও হবে না।
আজকের পত্রিকা: আপনার কেন এটা মনে হচ্ছে?
আলী ইমাম মজুমদার: মনে হচ্ছে, এ কারণে যে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। বাকি যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, তারা তো আওয়ামী লীগেরই শরিক দল। আর জাতীয় পার্টি তো আগে থেকেই তাদের শরিক দল ছিল। এবার তারা আলাদাভাবে নির্বাচন করবে। যদিও জাতীয় পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এরশাদের সময়ে জাতীয় পার্টি যে অবস্থায় ছিল, বর্তমানে সে অবস্থায় নেই। তারা শুধু রংপুর বিভাগের দু-একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থায় আছে। আর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ তো জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের আসনটি ছেড়ে দিয়েই রেখেছে। এ কারণে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না।
আজকের পত্রিকা: একতরফা নির্বাচনেও কি নির্বাচন কমিশন আস্থা অর্জন করতে পারবে?
আলী ইমাম মজুমদার: আস্থা অর্জন করার প্রশ্নই আসে না। বেশ কিছু কাজকর্মের মধ্য দিয়ে তারা ইতিমধ্যেই আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। কয়েকটি পার্টিকে তারা রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের যোগ্যতাই ছিল না নিবন্ধন পাওয়ার। যেমন বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূল বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকার ও শমশের মুবিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পার্টি। যাঁদের কোনো ধরনের জনসম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করে যাচ্ছে, কিন্তু এ রকম কিছু দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়নি, যেমন—মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বদলির নামে যে তামাশা চলছে—এসব দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রমাণ রাখতে পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ নেই, সেখানে অন্য সব অপ্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে। এতে অযথা রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন কেন স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে না?
আলী ইমাম মজুমদার: প্রধান কারণ হলো, আমাদের দেশে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সরকার এবং সরকারপ্রধানের হাতে। বর্তমান সরকারি দল যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। আর যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল, তখন নির্বাচন কমিশন কিন্তু স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল। অতীতে কিন্তু নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট জোরালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরেছে। তারা সবার আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। এ কারণে ক্ষমতা আবারও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চাইছে না।
এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তখন, যখন বিএনপি এবার এগিয়ে এসেছিল সংলাপে বসার জন্য। সংসদের বাইরে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে আসার সুযোগ ছিল। আওয়ামী লীগ তাদের কথাটার গুরুত্ব দিতে পারত। কিন্তু তারা বিএনপির দাবির কোনো গুরুত্বই দিল না। এমনকি বিএনপির প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের অধিকাংশ জায়গার অফিসগুলো তালাবদ্ধ করে রেখেছে।
আজকের পত্রিকা: আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?
আলী ইমাম মজুমদার: এ-সম্পর্কে আমি সঠিকভাবে কিছু বলতে পারব না। তবে যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য জনসমর্থিত সরকারই ভালো করতে পারে। যদি জনগণের সমর্থন যথাযথভাবে না থাকে, সেটা সেই সরকারের পক্ষে ততটা সহজ হয় না।
আজকের পত্রিকা: বিতর্কিত নির্বাচনেও বিপুল অর্থ ব্যয় কি মেনে নেওয়া যায়?
আলী ইমাম মজুমদার: অর্থ ব্যয়ের চেয়ে জরুরি হলো, বিতর্কিত নির্বাচন কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার এই নির্বাচন করাটাকে যেভাবে সাংবিধানিক অঙ্গীকার বলছে, আবার এটার ব্যাখ্যাটাও যথাযথভাবে তারা দিচ্ছে না। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সর্বজনীন ভোটাধিকারের কথা বলেই অগ্রসর হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার অন্যতম দাবিই ছিল, সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তান আমলে জনগণের প্রত্যাশার কারণে এ দেশের আপামর জনগণ এ দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। আমরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: জনপ্রিয়তার দাবিদার রাজনৈতিক দলও কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না?
আলী ইমাম মজুমদার: বিএনপি চেয়েছিল সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এখানে আলাপ-আলোচনা করে একটা মাঝামাঝি অবস্থানে আসার সুযোগ ছিল। আর নির্বাচন কমিশন গত দুই বছরে কোনো আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে পারেনি, মানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। বিএনপি কোন কৌশল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, সেটার কারণ তো আমি বলতে পারব না। অংশগ্রহণমূলক না হয়ে এবারও নির্বাচনটা একতরফা হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি একটা গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে, যেখান থেকে তারা বের হতে পারছে না। আপনি কী বলবেন?
আলী ইমাম মজুমদার: আমি এ-সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করব না। কারণ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কৌশল থাকে। বিএনপির কৌশলটা কী, তারা সেটা ভালো বলতে পারবে। ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় আর ২৮ অক্টোবর তাদের মহাসমাবেশ ছিল। এর আগেও তারা জেলা ও বিভাগীয়ভাবে সমাবেশ করেছে। প্রতিটি সমাবেশই শান্তিপূর্ণ ছিল। এক-দেড় বছর আগে তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে অভিযোগ, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছিল। এটা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং যারা কাজটা করেছে, তারা দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে সমাবেশকে ভেঙে দিতে হবে কেন? এটা কোনো কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করি না। কোনো ঘটনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাত্রা থাকে। কোনো ঘটনায় সতর্ক করা হয় বা কোনো ঘটনায় সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু সে দিনের মূল সমাবেশ লন্ডভন্ড করার কোনো বিশেষ কারণ ছিল না।
আজকের পত্রিকা: কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশেও সুশাসন আছে। আমাদের সমস্যা কোথায়?
আলী ইমাম মজুমদার: যদি মালয়েশিয়ার কথা ধরি, তাহলে সেখানে নির্বাচন সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারও পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে আইন জোরালোভাবে প্রয়োগ করা হয়। সেখানে জনগণ ভালোভাবে ভোট দিতে পারে। আইনের প্রয়োগ পশ্চিমা দেশগুলোতেও আছে। ট্রাফিক আইন কেউ ভঙ্গ করলে, তাকে জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন হয়েও, সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগই দেখছি না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আলী ইমাম মজুমদার: এ বিষয়টা অর্থনীতিবিদেরা ভালো বলতে পারবেন। আমার মনে হয়, এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমানে এটা খোলামেলাভাবে বলা হচ্ছে। বেশ কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে একশ্রেণির রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু ব্যক্তি অতি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির জন্য এটা একটা অন্যতম কারণ। এর কারণে হুন্ডি চালু হয়েছে।
যদি আমরা প্রবাসী আয়টা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নিতে পারতাম, তাহলে এ সমস্যাটা হতো না। ক্রমান্বয়ে সঞ্চয় বাড়ছিল প্রবাসী আয়ের কারণে। বিদেশে টাকা পাচারের জন্য হুন্ডির প্রয়োজন হয়। তাই প্রবাসী আয়ের ওপর চাপটা বেড়েছে। এই চাপের কারণে আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বেড়ে গেছে। অত্যাবশ্যক নয়—সেই ব্যয় বাদ দেওয়ার পরেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি শেষে অনেকেই সরকারের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। চাকরিরত অবস্থায় তাঁরা সরকারকে এসব ব্যাপারে কোনো সুপরামর্শ দেন?
আলী ইমাম মজুমদার: চাকরিরত অবস্থায় অনেকেই সরকারকে পরামর্শ দেন। সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় আবার অনেক ক্ষেত্রে হয় না। আমি এখন দেশের নানা বিষয় নিয়ে যে কথাগুলো বলি, সেটা চাকরিরত অবস্থায় আইনগত কারণে আমার বলার সুযোগ ছিল না। চাকরি বিধিমালার কারণে আমার সেই সুযোগ ছিল না। এখন সেই সুযোগ থাকার কারণে কথাগুলো বলতে পারি।
আজকের পত্রিকা: আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আলী ইমাম মজুমদার: নির্বাচন নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল। কারণ অনেক দিন ধরে দেশে একটা সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন হচ্ছে না। এ ঘটনা ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে হয়ে আসছে; মানে অনেকটাই একতরফাভাবে নির্বাচন হচ্ছে। শাসক দলের প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, সেটার কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। আমার প্রত্যাশা ছিল, এবার সেটা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি দেখতে পাচ্ছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতিই বিরাজমান নয়।
প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনের বাইরে আছে। দলটি যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে, তার ব্যবস্থা সরকার আগে থেকেই করে রেখেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতাই কারাবন্দী। কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ধরনের অবস্থা হতাশাজনক।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে?
আলী ইমাম মজুমদার: এই নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা আমি বলতে পারছি না। তবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনের কথা বলছে। আমরাও কিন্তু বলছি, আন্তর্জাতিক মানের না হলেও, অন্তত আমাদের দেশের মানের মতো নির্বাচন হোক। আমাদের দেশে ১৯৭০, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছিল, সে রকমভাবে অন্তত এবারের নির্বাচনটা হোক, তা আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি, ওই রকম মানের নির্বাচন এবারও হবে না।
আজকের পত্রিকা: আপনার কেন এটা মনে হচ্ছে?
আলী ইমাম মজুমদার: মনে হচ্ছে, এ কারণে যে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। বাকি যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, তারা তো আওয়ামী লীগেরই শরিক দল। আর জাতীয় পার্টি তো আগে থেকেই তাদের শরিক দল ছিল। এবার তারা আলাদাভাবে নির্বাচন করবে। যদিও জাতীয় পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এরশাদের সময়ে জাতীয় পার্টি যে অবস্থায় ছিল, বর্তমানে সে অবস্থায় নেই। তারা শুধু রংপুর বিভাগের দু-একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থায় আছে। আর নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ তো জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের আসনটি ছেড়ে দিয়েই রেখেছে। এ কারণে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না।
আজকের পত্রিকা: একতরফা নির্বাচনেও কি নির্বাচন কমিশন আস্থা অর্জন করতে পারবে?
আলী ইমাম মজুমদার: আস্থা অর্জন করার প্রশ্নই আসে না। বেশ কিছু কাজকর্মের মধ্য দিয়ে তারা ইতিমধ্যেই আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। কয়েকটি পার্টিকে তারা রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের যোগ্যতাই ছিল না নিবন্ধন পাওয়ার। যেমন বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূল বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকার ও শমশের মুবিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পার্টি। যাঁদের কোনো ধরনের জনসম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করে যাচ্ছে, কিন্তু এ রকম কিছু দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়নি, যেমন—মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বদলির নামে যে তামাশা চলছে—এসব দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রমাণ রাখতে পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ নেই, সেখানে অন্য সব অপ্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে। এতে অযথা রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন কেন স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে না?
আলী ইমাম মজুমদার: প্রধান কারণ হলো, আমাদের দেশে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সরকার এবং সরকারপ্রধানের হাতে। বর্তমান সরকারি দল যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। আর যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল, তখন নির্বাচন কমিশন কিন্তু স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল। অতীতে কিন্তু নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট জোরালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরেছে। তারা সবার আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। এ কারণে ক্ষমতা আবারও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চাইছে না।
এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তখন, যখন বিএনপি এবার এগিয়ে এসেছিল সংলাপে বসার জন্য। সংসদের বাইরে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে আসার সুযোগ ছিল। আওয়ামী লীগ তাদের কথাটার গুরুত্ব দিতে পারত। কিন্তু তারা বিএনপির দাবির কোনো গুরুত্বই দিল না। এমনকি বিএনপির প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের অধিকাংশ জায়গার অফিসগুলো তালাবদ্ধ করে রেখেছে।
আজকের পত্রিকা: আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?
আলী ইমাম মজুমদার: এ-সম্পর্কে আমি সঠিকভাবে কিছু বলতে পারব না। তবে যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য জনসমর্থিত সরকারই ভালো করতে পারে। যদি জনগণের সমর্থন যথাযথভাবে না থাকে, সেটা সেই সরকারের পক্ষে ততটা সহজ হয় না।
আজকের পত্রিকা: বিতর্কিত নির্বাচনেও বিপুল অর্থ ব্যয় কি মেনে নেওয়া যায়?
আলী ইমাম মজুমদার: অর্থ ব্যয়ের চেয়ে জরুরি হলো, বিতর্কিত নির্বাচন কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার এই নির্বাচন করাটাকে যেভাবে সাংবিধানিক অঙ্গীকার বলছে, আবার এটার ব্যাখ্যাটাও যথাযথভাবে তারা দিচ্ছে না। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সর্বজনীন ভোটাধিকারের কথা বলেই অগ্রসর হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার অন্যতম দাবিই ছিল, সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তান আমলে জনগণের প্রত্যাশার কারণে এ দেশের আপামর জনগণ এ দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। আমরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: জনপ্রিয়তার দাবিদার রাজনৈতিক দলও কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না?
আলী ইমাম মজুমদার: বিএনপি চেয়েছিল সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এখানে আলাপ-আলোচনা করে একটা মাঝামাঝি অবস্থানে আসার সুযোগ ছিল। আর নির্বাচন কমিশন গত দুই বছরে কোনো আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে পারেনি, মানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। বিএনপি কোন কৌশল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, সেটার কারণ তো আমি বলতে পারব না। অংশগ্রহণমূলক না হয়ে এবারও নির্বাচনটা একতরফা হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি একটা গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে, যেখান থেকে তারা বের হতে পারছে না। আপনি কী বলবেন?
আলী ইমাম মজুমদার: আমি এ-সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করব না। কারণ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কৌশল থাকে। বিএনপির কৌশলটা কী, তারা সেটা ভালো বলতে পারবে। ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় আর ২৮ অক্টোবর তাদের মহাসমাবেশ ছিল। এর আগেও তারা জেলা ও বিভাগীয়ভাবে সমাবেশ করেছে। প্রতিটি সমাবেশই শান্তিপূর্ণ ছিল। এক-দেড় বছর আগে তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে অভিযোগ, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছিল। এটা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং যারা কাজটা করেছে, তারা দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে সমাবেশকে ভেঙে দিতে হবে কেন? এটা কোনো কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করি না। কোনো ঘটনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাত্রা থাকে। কোনো ঘটনায় সতর্ক করা হয় বা কোনো ঘটনায় সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু সে দিনের মূল সমাবেশ লন্ডভন্ড করার কোনো বিশেষ কারণ ছিল না।
আজকের পত্রিকা: কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশেও সুশাসন আছে। আমাদের সমস্যা কোথায়?
আলী ইমাম মজুমদার: যদি মালয়েশিয়ার কথা ধরি, তাহলে সেখানে নির্বাচন সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারও পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে আইন জোরালোভাবে প্রয়োগ করা হয়। সেখানে জনগণ ভালোভাবে ভোট দিতে পারে। আইনের প্রয়োগ পশ্চিমা দেশগুলোতেও আছে। ট্রাফিক আইন কেউ ভঙ্গ করলে, তাকে জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন হয়েও, সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগই দেখছি না।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আলী ইমাম মজুমদার: এ বিষয়টা অর্থনীতিবিদেরা ভালো বলতে পারবেন। আমার মনে হয়, এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমানে এটা খোলামেলাভাবে বলা হচ্ছে। বেশ কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে একশ্রেণির রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু ব্যক্তি অতি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির জন্য এটা একটা অন্যতম কারণ। এর কারণে হুন্ডি চালু হয়েছে।
যদি আমরা প্রবাসী আয়টা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নিতে পারতাম, তাহলে এ সমস্যাটা হতো না। ক্রমান্বয়ে সঞ্চয় বাড়ছিল প্রবাসী আয়ের কারণে। বিদেশে টাকা পাচারের জন্য হুন্ডির প্রয়োজন হয়। তাই প্রবাসী আয়ের ওপর চাপটা বেড়েছে। এই চাপের কারণে আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বেড়ে গেছে। অত্যাবশ্যক নয়—সেই ব্যয় বাদ দেওয়ার পরেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি শেষে অনেকেই সরকারের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। চাকরিরত অবস্থায় তাঁরা সরকারকে এসব ব্যাপারে কোনো সুপরামর্শ দেন?
আলী ইমাম মজুমদার: চাকরিরত অবস্থায় অনেকেই সরকারকে পরামর্শ দেন। সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় আবার অনেক ক্ষেত্রে হয় না। আমি এখন দেশের নানা বিষয় নিয়ে যে কথাগুলো বলি, সেটা চাকরিরত অবস্থায় আইনগত কারণে আমার বলার সুযোগ ছিল না। চাকরি বিধিমালার কারণে আমার সেই সুযোগ ছিল না। এখন সেই সুযোগ থাকার কারণে কথাগুলো বলতে পারি।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে