আগ্রাবাদ ডেবা নিয়ে ৫৬ বছরেও বিরোধ মেটেনি দুই সংস্থার

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১: ২৮

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ ডেবার মালিকানা নিয়ে ৫৬ বছর ধরে বিরোধ চলছে চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে। এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় একাধিকবার বৈঠকে বসলেও আজও কোনো সমাধান আসেনি। তাই বিরোধ নিষ্পত্তির আগপর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, আগ্রাবাদ ডেবা নিয়ে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে ওই সভায় রেলওয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠক থেকেই ডেবা নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

জলাশয়টির মালিকানা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বৈঠকে বসেছিল উভয় পক্ষ। ২০০৪ সালে সচিব পর্যায়ে একবার বৈঠক হয়। এরপর ২০০৬ সালেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে বৈঠক করে দুই পক্ষ। ওই বৈঠকে বিরোধপূর্ণ ডেবাটির মালিকানা নির্ধারণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসকে নেছার উদ্দিন রুমি সরেজমিন তদন্ত করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে (রেলওয়ে তখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল) একটি প্রতিবেদন পাঠান। ২০০৬ সালের ২৬ জুন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজপত্রে আগ্রাবাদ ডেবার মালিকানা চট্টগ্রাম বন্দরের। কিন্তু দখলে আছে রেলওয়ে।

আগ্রাবাদ ডেবা নিয়ে দুই সংস্থার বিরোধ শুরু হয় ৫৬ বছর আগে রেলওয়েকে বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া এক চিঠিকে কেন্দ্র করে। ১৯৬৭ সালে দেওয়া ওই চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে ‘আগ্রাবাদ ডেবা’ লিজ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, আগ্রাবাদ ডেবার মালিকানা নিয়ে একটু বিরোধ রয়েছে। ভুলবশত কিছু সম্পত্তি বন্দরের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। সেই থেকে এই ডেবা নিয়ে একটু বিরোধ চলে আসছে। 

পাড়সহ জলাশয়টির মোট আয়তন ২৭ দশমিক ৪ একর। এর মধ্যে প্রায় ১৭ একর জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নামে বিএস খতিয়ানভুক্ত করার কারণে ভূমির মালিকানা নিয়ে রেলওয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে বলে জানান সুজন চৌধুরী।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে’ ভেঙে ১৯৬০ সালের ১ জুলাই দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান হয়। ১৯৬০ সালের ৩০ জুন নবগঠিত দ্য চিটাগাং পোর্ট ট্রাস্টকে ৪৭০ একর জমি হস্তান্তর করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে গেজেটভুক্ত হয়। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ বিএস খতিয়ানভুক্ত করে বছর বছর ওই জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছে। এখানে ভুলবশত বন্দরের নামে রেকর্ড হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, একসময় চট্টগ্রাম বন্দর এবং রেলওয়ে একসঙ্গে ছিল। নাম ছিল চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯০৮ সালে নগরীর গোসাইলডাঙ্গা মৌজায় চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সময় প্রয়োজন হয় লাখ লাখ টন মাটি। তৎকালীন চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে জাহাজে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বর্তমান আগ্রাবাদ ডেবা খনন করা হয়। এই জলাশয় থেকে পানি সরবরাহ করা হতো জাহাজ, রেল ও আবাসিক এলাকায়। পরবর্তী সময় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলে ডেবা থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত