Ajker Patrika

‘এ্যালা ছাওয়াগুলাক নিয়া পেটভরে ভাত খাইম’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
‘এ্যালা ছাওয়াগুলাক নিয়া পেটভরে ভাত খাইম’

রংপুরের তারাগঞ্জে সারা দেশের মতো খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত খোলাবাজারে চাল (ওএমএস) বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে চাল কিনতে বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে প্রতিটি পরিবার ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল কিনতে পারছে। কেজিতে ২৬ টাকা সাশ্রয় হওয়ায় স্বস্তির হাসি ফুটেছে এসব মানুষের মুখে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার তারাগঞ্জ সদরে কুর্শা ইউনিয়নে খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত খোলাবাজারে চাল ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু হয়েছে। রবি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সপ্তাহে ৫ দিন কুর্শা ইউনিয়নের ৬টি বিক্রয়কেন্দ্রে এ কার্যক্রম চলবে। প্রতিদিন ৮০০টি পরিবার ৫ কেজি করে চাল পাবে। ২ জন ডিলার ২ টন করে ৪ টন চাল এ পরিবারগুলোকে সরবরাহ করবেন। নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

গতকাল কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদ বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, থলে হাতে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি জমা দিয়ে ডিলারের মাস্টাররোলে টিপসই দিয়ে ১৫০ টাকা জমা দিয়ে ৫ কেজি করে চাল নিচ্ছেন।

এ সময় ওই কেন্দ্রে কথা হয় চাল কিনতে আসা থানাপাড়া গ্রামের স্বামীহারা তরুণীবালার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাটোত চাউলের যে দাম, হাতে দেওয়া যায় না। ১ কেজি চাল ৫৬ টাকা। ওই জন্যে একবেলা ভাত খায়া আছনো। এ্যালা সরকারি লোক ৩০ টাকাত চাল বেচাওছে। ১৫০ টাকা দিয়ে ৫ কেজি চাল নিনু। এই চাল আন্ধি শান্তি করি ভাত খাইম।’

অনন্তপুর গ্রামের রুপালী বেগমের দুই বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। চার সন্তান নিয়ে তাঁর একার আয়ে সংসার চলে। নিত্যপণ্য আর চালের দাম বাড়ায় দুবেলা আধপেট খেয়েছিলেন।

রুপালী বেগম বলেন, ‘ভাই সউগ জিনিসের দাম। চাল কিনতে কামের টাকা শ্যাষ হয়। তেল-তরকারির টাকা থাকে না। এখন অর্ধেক দামে (৩০ টাকা কেজি) চাল পাওছি। উপকারে হওচে। বাকি টাকা দিয়া তরকারি কিনিম। এ্যালা ছাওয়াগুলাক নিয়া পেটভরে ভাত খাইম।’

বেলা দুইটার দিকে ওই ইউনিয়নের বেলতলী মোড়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আরেক বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ৩০ টাকায় চাল কিনতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছেন গ্রাম পুলিশের কয়েকজন সদস্যসহ থানা-পুলিশ। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ডিলার সেই চাল বিতরণ করছেন।

সেখানে কথা হয় ঘনিরামপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের সংসার একদিনের কামাই চাল কিনতেই শ্যাষ যায়। এ্যালা আর তাক হবার নেয়। সরকার হামার জন্য ৩০ টাকা কেজিত চাল বেচাওছে। চাল কিনিয়া যে টাকা বাচপে তাক দিয়া সংসারের অন্য খরচ করির পাইম। মিসছানা হইলেও মোর কষ্ট কমবে।’

ওই বিক্রয়কেন্দ্রে দেখভালের দায়িত্ব থাকা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, ‘মানুষ স্বল্পদামে চাল কিনতে সকাল থেকে ভিড় করছেন। তবে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই চাল বিতরণ চলছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাম পুলিশ ও থানা-পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন।’

জানতে চাইলে ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, তারাগঞ্জে ওএমএসের ছয়জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। সপ্তাহে ৫ দিন ২ জন করে ডিলার ৮০০টি পরিবারকে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করবেন। এ ছাড়া টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে ১০ হাজার ১১৮ জনকে তেল, ডাল ও চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমেও ৯ হাজার ২৮৬টি পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করা হবে। প্রত্যেকটি বিক্রয়কেন্দ্রে একজন করে সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে এসব খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো রকম অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত