কমছে পরিযায়ী পাখি

এস আলম সুমন, হাকালুকি থেকে ফিরে
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৫৫
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ০৬

শীত মৌসুমে হাকালুকি হাওর পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর থাকত। কিন্তু প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকিতে নানা কারণে দিন দিন কমছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। গত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে পাখির সংখ্যা কমছে হাওরে। এ ছাড়া বার্ড রিং পরানো ও স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো পাখির দেখা মেলেনি এ বছর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাকালুকিতে অভয়াশ্রমের অপ্রতুলতা, বিল-জলাশয় ভরাট, খাদ্য সংকট ও বিষটোপে পাখি শিকারসহ হাওরে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে থাকায় পাখির সংখ্যা কমেছে। ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি হাকালুকিতে দুই দিনের পাখিশুমারি শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পাখিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

যৌথ এ শুমারিতে অংশ নেন বার্ড ক্লাবের সদস্য অণু তারেক, শফিকুর রহমান, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) জেনিফার আজমেরি ও সাকিব আহমেদ। এ বছর হাকালুকিতে পাখির সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন ইনাম আল হক। তবে কত প্রজাতি ও পাখির সংখ্যা এবার কেমন রয়েছে সে বিষয় জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

গত পাঁচ বছরের পাখিশুমারির তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ৫০ প্রজাতির ৫৮ হাজার ২৮১টি, ২০১৮ সালে ৪৪ প্রজাতির ৪৫ হাজার ১০০, ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১, ২০২০ সালে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬ ও ২০২১ সালে ৪৫ প্রজাতির মোট ২৪ হাজার ৫৫১টি পাখির দেখা মিলেছিল।

২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গতিবিধি পর্যবেক্ষণে হাওরে পাখির পায়ে রিং পরানো হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৫ সালে হাকালুকিতে ৩৩ প্রজাতির ৩৭০টি পাখির পায়ে রিং পরানো হয়। অন্যান্য বছর সন্ধান পাওয়া গেলেও এ বছর সেসব পাখির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ২০১০ সালে যে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছিল তা ২০১১ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে ছিল বার্ড ক্লাবের। তার পর থেকে ওই পাখিগুলোর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে সরকার এ হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইসিএর আওতায় হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পাখি সংরক্ষণে কিছু প্রকল্প চলমান ছিল। এরপর আর কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হাওরের ‘ইকো সিস্টেম’ রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে গঠিত ইসিএ কমিটির কার্যক্রমও স্থবির। আগে যেখানে ছয়টির বেশি পাখি অভয়াশ্রম ছিল, ২০১৯ সাল থেকে সেখানে কেবল দুটি অভয়াশ্রম রয়েছে। এ দুটি হলো কাংলি-গোবরকুড়ি ও কৈয়ারকোনা।

পাখি কমে যাওয়ার বিষয়ে ইনাম আল হক বলেন, ‘হাওরের প্রতিবেশ সংকটে। হাওরের সঙ্গে যুক্ত নদীগুলো দিয়ে প্রচুর পলিমাটি এসে হাকালুকিতে পড়ে। এতে হাওরে গভীরতা কমে গেছে। এর কারণে দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। এ ছাড়া শিকারিদের বিষটোপে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে।

ইনাম আল হক আরও বলেন, ‘শুমারির সময় নাগুয়া বিলে বিপন্ন চখাচখি প্রজাতির একটি পাখির মৃতদেহ পানিতে ভাসমান দেখা গেছে। সেই মৃত পাখির ওপর একই প্রজাতির চারটি চখাচখি পাখি ওড়াউড়ি করছিল। এ রকম মৃত পাখি দেখলে অন্য পাখিরা জীবন বিপন্নের আতঙ্কে ওই এলাকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’

বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) গোবিন্দ রায় বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে এবার সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাওর ও বিলে পাখিশুমারির কাজ চলমান আছে। শুমারি শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে আইইউসিএন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পাখির সংখ্যা জানাতে পারব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত