রাসেল মাহমুদ, মাদারীপুর থেকে ফিরে
মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম হাসানকান্দি। গ্রামটির একটি মোড়ের নাম ‘ইতালি মোড়’। মুখে মুখে এই নামকরণের কারণ, গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ইতালিপ্রবাসী। মাদারীপুরের আরও কয়েকটি গ্রামে আছে ইতালিপ্রবাসীদের ছড়াছড়ি। তবে এঁদের সিংহভাগই গেছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পথে।
অবৈধভাবে গেলেও তাঁদের ওপর ভর করে বদলে গেছে অধিকাংশের পারিবারিক অবস্থা। ইতালিপ্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের এই ভাগ্যবদল দেশটিতে যেতে আগ্রহী করেছে মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীদের। এই স্বপ্নকেই পুঁজি করে জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানব পাচারকারী চক্র। লিবিয়া থেকে শুরু করে জেলার গ্রাম পর্যন্ত এই চক্রের বিস্তার। জনপ্রতিনিধিরাও আছেন এই চক্রে।
মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। সর্বশেষ লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকায় আগুন লেগে নিহত ৯ জনের ৫ জনই মাদারীপুরের। বাকি চারজনের তিনজন গোপালগঞ্জের, অন্যজন পাকিস্তানি। বিভিন্ন সময়ে সাগরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক। এ ছাড়া লিবিয়ায় গেম ঘরে (ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার আগে অভিবাসীদের রাখার স্থান) নির্যাতন করে জনপ্রতি কয়েক লাখ টাকা আদায়, টাকা না দিলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও ভয়ে অনেকে নীরবও থাকেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, লিবিয়ায় নিতে দালালেরা ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ইতালি নিতে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় রফা করে। তবে ‘গেম’ করানো ও হাতবদল করে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও আদায় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাখে না দালালেরা।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ৩২৯টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৪৬৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮৭ জন। এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ৯৬টির, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৮৭টির, তদন্তাধীন ১০৯টি মামলা। যেসব মামলার বিচার হয়েছে, এর কোনোটিতেই কারও সাজা হয়নি। খালাস পেয়েছেন ১১১ জন। বিচারাধীন রয়েছে ৬৯টি মামলা।
মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি জেনেও অনেকে যাচ্ছেন। পরিচিতদের মাধ্যমে প্রথমে টাকা লেনদেন হয়। পরে লেনদেন হয় দালালের সঙ্গে। সমস্যা হলে তখন অনেকে মামলা করেন।
মামলার এজাহার, ভুক্তভোগীদের স্বজনদের তথ্যমতে, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জেই অর্ধশত দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, যুবরাজ কাজী, রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের ইলিয়াস, সাথী, মাদারীপুর সদর উপজেলার সুচিয়ার ভাঙ্গা গ্রামের আজাদ বেপারী, নয়াচর গ্রামের এমদাদ বেপারী, বড়াইলবাড়ী গ্রামের রুবেল খাঁ; রাজৈর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের মিরাজ বেপারী, খালিয়া ইউনিয়নের স্বরমঙ্গল গ্রামের ওসমান গণি, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়ার শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।
মানব পাচারের মামলার বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পথে কেউ যেন না যান, সে জন্য সচেতনতামূলক কাজ করা হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দালাল চক্র লিবিয়ায়, দেশে
হাসানকান্দি গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রথম ইতালি যান আতিয়ার মাতুব্বর ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি গিয়েছিলেন আলমগীর ও জলিল দালালের মাধ্যমে রাশিয়া হয়ে। পরে গ্রামের বহু লোক ইতালি যান। ২০০০ সালের দিকে বাসচালকের সহকারীরা গ্রামের একটি জায়গাকে ‘ইতালি মোড়’ বলা শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি ইতালি মোড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মাদারীপুরে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত-আট বছরে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি লোক গেছেন সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ গ্রামের সুমির মাধ্যমে। বড় ভাইকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দালাল শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমির। পরে দুজনের বিয়ে হয়। এরপর শরীফের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে ইতালিতে লোক পাঠানো শুরু করেন। লিবিয়ায় যে কজন দালাল গেমে লোক পাঠান, তাঁদের একজন শরীফ। তবে শরীফের বিস্তারিত পরিচয় জানেন না কেউ। এই চক্রে লিবিয়ার নাগরিক হাইতাম ও ইসাম জড়িত। লিবিয়ায় রাজৈরের গোবিন্দপুরের মিরাজ বেপারী, মুকসুদপুরের রাঘদি ইউনিয়নের ইলিয়াসসহ কয়েকজন দালাল রয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় দালালসহ ইউপি সদস্য ও কাউন্সিলরের মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করেন।
পশ্চিম মাঠ গ্রামের ইসমত আরা বলেন, সুমিকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর ছেলে ইব্রাহিম খলিলউল্লাহকে দুই বছর আগে গেমে পাঠান। দুই মাস আগে ছেলে ইতালি পৌঁছায়।
শিড়খাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলী কাজী বলেন, ‘লিবিয়ায় বিপদে পড়া লোকজনের কাছে জেনেছি, সুমি দালাল।’
গ্রামবাসী জানান, সুমিদের আগে একটি ছোট টিনের ঘর ছিল, এখন সেখানে দালান তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাবা শাখাওয়াত মাতুব্বর বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
বক্তব্য জানতে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুমির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বাড়িতে পরিবারের কাউকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সুমি কোথায় আছেন বা নির্মাণকাজের তদারকি কে করছেন, গ্রামের কেউ তা বলতে পারলেন না। গ্রামের আরব আলী মাতুব্বর বললেন, সুমিদের বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।
দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ইতালি যেতে তিনবারের গেমে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মো. রাকিবুল শিকদার। তিনি জানান, মাঝিকান্দির ইতালিপ্রবাসী ওহিদুলের মাধ্যমে তিনি দুবাই হয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন। গেম ঘরে নিতে দালাল মিরাজের কথায় রাজৈর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানের কাছে তাঁর পরিবার ১ লাখ টাকা দিয়েছিল। গেমে দেওয়ার পর লিবিয়ার কোস্ট গার্ড আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ানো হয়।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গেম ঘরে নিতে নয়, লিবিয়ায় কারাগারে আটক রাকিবসহ কয়েকজনকে ছাড়াতে দালালকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
রাজৈরের বৌলগ্রামের আব্দুল জব্বারের কাহিনি আরও ভয়াবহ। তিনি বললেন, তাঁকে ইতালি পাঠাতে তাঁর পরিবার গোপালগঞ্জের ইলিয়াসের স্ত্রী সাথীর কাছে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। তাঁকে লিবিয়া নিয়ে গেম ঘর আর বিক্রি করে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সাথীর ভগ্নিপতি রাজৈরের খালিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ শেখকে। ইলিয়াসের মাধ্যমে ইতালি যেতে ১২ লাখ টাকায় রফা হলেও ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও চার বছর পর লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। মামলা করেছেন। আসামিরা এখন ভয় দেখান।
তবে ইউপি সদস্য আরিফ শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ইলিয়াস দালাল নামে কাউকে চিনি না। টাকা দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানি না।’
ইতালিপ্রবাসী কয়েকজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইতালিতে শুরুতে অবৈধভাবে লোক নিত রাশিয়া-জার্মানি হয়ে। পরে পথ বদলে নেয় ইরান, তুরস্ক, গ্রিস হয়ে। গত এক দশকে দুবাই, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে নিচ্ছে পাচারকারীরা।
ইতালিফেরত রেজাউল বেপারী বলেন, ২০০২ সালে বিভিন্ন দালাল ধরে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস হয়ে তিনি ইতালি যান। তাঁর ছোট ভাইও গেছেন একইভাবে।
মাদারীপুরের ইতালিপ্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর কিশোররাও এখন স্বপ্ন দেখে গেমে ইতালি যাওয়ার। তাদের একজন হাসানকান্দি গ্রামের ১৭ বছরের ফয়সাল শরীফ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাবা মসজিদের ইমাম। নিজেদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইতালিপ্রবাসী চাচার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গেমে যাওয়ার ইচ্ছা জানাল আজকের পত্রিকাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানব পাচার দমন করতে চাইলে জঙ্গি দমনের মতো জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে না যায়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দায়ীদের নাম নিয়ে তাঁদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে মানব পাচার প্রতিরোধ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন মাদারীপুর প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে