ডায়রিয়ার প্রকোপ, শয্যা ওষুধ সংকট হাসপাতালে

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১২: ৫৩
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ১৩

শেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী প্রতিদিন হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। অনেক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে মেঝেতে রেখে। গত এক সপ্তাহে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে এক হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বল্প জনবল নিয়ে এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া এত রোগীর কারণে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট। তাই পাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ থেকে স্যালাইন এনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও পল্লিচিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কিছু লোক সুস্থ হলেও অনেককেই আসতে হচ্ছে হাসপাতালে।

এদিকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র আটটি সিট রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিতে পারে এখানে থেকে। কিন্তু হঠাৎ করে রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিট তো দূরের কথা, কোনো জায়গাই খালি নেই। হাসপাতালের মেঝে ও চলাচলের রাস্তায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও সিঁড়ির নিচে রেখে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

শেরপুর শহরের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ছয় দিন ধরে আমার বমি ও ডায়রিয়া হচ্ছে। হাসপাতালে এসে সিট পাইনি। তাই বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

মুন্সীরচর গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একটি শিশু মারা গেছে। আমার ছেলেরও ডায়রিয়া। ভয়ে ছেলেকে হাসপাতালে এনেছি।’

ঝিনাইগাতী উপজেলার মোছা হুজুরা বেগম বলেন, ‘দুইটা স্যালাইন হাসপাতাল থেকে ফ্রি দিয়েছে। এখন বাকিগুলো কিনতে বলেছে।’ শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার সারা দিনে রোগী ভর্তি ছিল ১২৮ জন এবং বৃহস্পতিবার বেলা দু্ইটা পর্যন্ত ১১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় দুই থেকে তিন মাসে যে ওষুধ লাগত, এখন এক দিনেই তা লাগছে। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে অন্তত পাঁচ-ছয় গুণ বেশি ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। এতে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পাশের উপজেলা ও ময়মনসিংহ থেকে ওষুধ ও স্যালাইন এনে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি।’

সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, সেসব এলাকায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক দল গিয়ে পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত