কমিটি গঠনে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫: ৫৮
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ২৮

বরিশালে বিএনপির নেতৃত্ব ঘোষণার ২৬ দিন পর নতুন করে নানা প্রশ্ন তুলেছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। পদবঞ্চিত নগর বিএনপির এই ক্ষুব্ধ নেতারা গত বৃহস্পতিবার রাতে চা-চক্রের আড়ালে ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দলীয় সব কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, নবগঠিত কমিটির নেতৃত্ব আর্থিক লেনদেনে হয়েছে। দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে এ কমিটির অনুমোদন হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। তবে নগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘এসব প্রোপাগান্ডা।’

চা-চক্রে উপস্থিত ২৭ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্বাস উদ্দিন বাবলা, অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু, আলমগীর হোসেন, সৈয়দ আহসান কবির হাসান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন, নগর যুবদল সভাপতি আক্তারুজ্জামন শামিম, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন জিপু।

বৈঠকে উপস্থিত নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের ওই বৈঠকে সবাই গোপন আঁতাতে ৪২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেন। এই কমিটির প্রায় ২০ জনই সামাজিকভাবে অপরিচিত। নতুন নেতৃত্ব লবিস্ট নিয়োগ করে হাই কমান্ডকে ম্যানেজ করেছে।’ এই লবিস্ট হিসেবে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাকির হোসেন নান্নু এবং ইংল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ আয়ারল্যান্ডের এক প্রবাসীর কথা বলেছেন। এই প্রবাসী নগর বিএনপির সদ্য মনোনীত সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নগরের বটতলা এলাকার বাসিন্দা বলে জানান মন্টু।

অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু জানান, লবিস্টরা আর্থিক লেনদেন করে পকেট কমিটি করিয়েছেন। যে কারণে তাঁরা অভিযোগ দিলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছায়নি। এই প্রবাসী লন্ডন বিএনপির সভাপতির মাধ্যমে হাই কমান্ডকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে এটা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সরোয়ারের বিকল্প নেতৃত্ব। তিনি জানান, এ অবস্থায় যাঁরা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য তাঁরা সাংগঠনিকভাবে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলে চেয়ারম্যানকে অবহিত করবেন যে এটা আওয়ামী লীগ ঘরানার, আন্দোলনবিমুখ কমিটি।

নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘বিএনপির প্রাথমিক সদস্যরা চা চক্রে মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাঁরা ঘরে-বাইরে সোচ্চার থাকবেন। দলের কর্মসূচিও ভিন্ন ব্যানারে পালন করবেন।’ তিনিও দাবি করেন, লবিস্ট নিয়োগ করেই এ কমিটি অনুমোদন করানো হয়েছে।’

নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ আহসান কবির হাসান জানান, তাঁরা পদে না থাকলেও প্রাথমিক সদস্য হিসেবে এখন থেকে দলের আন্দোলন-সংগ্রাম তাঁদের মতো করে করবেন। কেননা এটি পিকনিক পার্টির মতো পকেট কমিটি হয়েছে। তিনি বলেন ‘শুনেছি বাণিজ্যিক লেনদেনে পদ পেয়েছে অনেকে।’

বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘তাঁরা দলের সমর্থক হতে পারেন কিন্তু আলাদা কর্মসূচি করার সুযোগ নেই, পারলে করে দেখাক। পদবঞ্চিতদের মহাসচিবের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। তার পর কমিটি অনুমোদন হয়েছে।’ লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা জাহিদ বলেন, ‘তাহলে বোঝা যায় আমাদের লবিং শক্তিশালী।’ প্রবাসী এক ব্যক্তিকে দিয়ে লবিং করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে এত ক্ষমতা কোথায় পাবে। এসব প্রোপাগান্ডা।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘বিএনপিতে পদ পেতে লবিস্ট লাগে না। এত দিন যাঁরা ছিলেন তাঁরা কোন লবিস্টের মাধ্যমে পদ পেয়েছেন? কেউ যদি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন জানান, নগর বিএনপির কমিটি অনুমোদনে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে কমিটিতে বাদ পড়ারা কেন্দ্রে যে অভিযোগ দিয়েছেন তার একটা অনুলিপি তাঁকেও দিয়েছিলেন। যাঁরা বাদ পড়ছেন তাঁরা হয়তো মূল পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত