সুবিধাভোগী পরিবারের শিশুদের ঘর নির্মাণে খাটানো হচ্ছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২২, ০৭: ১৫
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫০

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের পরিবারের শিশুদেরই শ্রমিক হিসেবে বিনা টাকায় কাজ করাচ্ছেন ঠিকাদার। বাড়ি নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় নাচোল উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য নতুন করে আরও ১৮৬টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পেয়েছেন তিনজন। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ঘরগুলো নির্মিত হচ্ছে।

গৃহহীনরা ঘর বরাদ্দ পেয়ে খুশি। কিন্তু ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু ব্যবহার করায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। কথা হলে উপজেলার মোহাম্মাদপুর মৌজার হাটরাজবাড়ী জিয়ানাপাড়ার সুরুজ মনি (৫০) ও তাঁর ছেলে টুটুল খালকো (২৩), হাটরাজবাড়ী দিঘীপাড়া গ্রামের আজিমুদ্দিন (৫০) ও সাইফুলসহ (৩১) আরও অনেকেই এমন অভিযোগ করেন।

তাঁদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সিমেন্টের পরিমাণও কম দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকের কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে।

নাচোল পৌর এলাকার পণ্ডিতপুর মৌজায় নির্মাণ হচ্ছে ১৬টি ঘর। এর মধ্যে সেলিমের স্ত্রী ববিতা (২৬), শাহজাহান আলীর ছেলে বুলবুল (৩৪) ও আব্দুল জলিলের স্ত্রী বিউটি (৩০) অভিযোগ করে জানান, ঘর পাওয়ার জন্য তাঁদেরকে শ্রমিক খরচ হিসেবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। পণ্ডিতপুর মেইন সড়ক থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিজ খরচে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর জন্য তাঁদেরকে এ টাকা দিতে হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাঁরা এ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানান।

তাঁরা আরও জানান, যে বালু ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, ওই বালু দিয়েই প্লাস্টারের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। ঘরে থাকার আশায় নিজেদের শিশুদের দিয়ে ইট বালু পরিবহনও করতে হচ্ছে। ঘর নির্মাণ শ্রমিকদেরও খেতে দিতে হচ্ছে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত নেজামপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর মৌজায় নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০টি ঘর ও কসবা ইউনিয়নের কসবা হাটখোলা গ্রামে ২৩টি ঘর। সেখানেও একই অভিযোগ ঘর বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলোর।

নির্মাণকাজের ঠিকাদার নাচোল সদর ইউনিয়নের আন্ধরাইল গ্রামের আসাদুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র মিস্ত্রি দিয়ে ওয়াল গাঁথা, প্লাস্টার করানো ও টিনের ছাউনির কাজ করি। ইট, বালু, সিমেন্ট, দরজা, জানালা, টিনসহ যাবতীয় মালামাল সরবরাহ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে কোনো সামগ্রী যদি নিম্নমানের হয়ে থাকে তার দায়দায়িত্ব আমার নয়’। একই কথা বলেছেন, আরও দুই ঠিকাদার সিংরইল গ্রামের আজিজুর রহমান ও অরুণ বাড়ি বেহুলা গ্রামের সেমাজুল ইসলাম।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রী সড়ক থেকে প্রকল্পের স্থানে নিয়ে যাওয়ার মতো রাস্তা নেই। এ কারণে যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁরাই নিজ নিজ দায়িত্বে নির্মাণ সামগ্রী বহন করছেন। আর নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তবে অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।’ ‘

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত