ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে মেয়র সাদিক

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ০৯: ৫২
Thumbnail image

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে চার বছর পূর্ণ করে ফেললেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এক বছর পরে আবার ভোট। এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর নিজ দলে সাদিককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে প্রস্তুত হচ্ছেন অর্ধডজন নেতা। সবাই নগরের উন্নয়নে মেয়র সাদিকের ব্যর্থতা তুলে ধরে এখনই সক্রিয় মাঠে। মেয়র নিজেও ভোট সামনে রেখে তৎপর। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, চার বছরের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী সিটি নির্বাচনে ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন মেয়র সাদিক।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ভোট হয়েছিল বরিশাল সিটি করপোরেশনে (বিসিসি)। মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বরিশাল নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর বিসিসির বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। সূত্রমতে, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

এক বছর আগে থেকেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সভা-সমাবেশে অনুসারীরা প্রকাশ্যে সাদিককে আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ভোটের ক্ষণ গণনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন গতকাল শুক্রবার বলেন, মেয়র সাদিকের বাইরে আর প্রার্থী দেখেন না তাঁরা। যাঁরা পেছনে বসে প্রার্থিতার কথা বলেন, তাঁরা তো প্রকাশ্যে আসেন না। তবে আওয়ামী লীগ চায়, সিটি নির্বাচনে সব দলের প্রার্থী থাক।

জানা গেছে, প্রকাশ্যে না এলেও আওয়ামী লীগ ঘরানা থেকে চারজনের নাম আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন মেয়র সাদিকের চাচা খোকন সেরনিয়াবাত, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন এবং শিক্ষাবিদ মু. জিয়াউল হক।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে সম্প্রতি সাক্ষাতের পর খোকন সেরনিয়াবাত প্রার্থী হবেন—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে নগরে। বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করা খোকন সেরনিয়াবাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা বলব না। নেত্রী কাকে মনোনয়ন দেন, তার ওপর সব নির্ভর করবে।’

দেশের অন্যতম জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজের স্বত্বাধিকারী বরিশালের মিজানুর রহমান গত রমজানে সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ী মিজান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনগণ চাইলেই তো হবে না, ইচ্ছাও দরকার। তবে টপ ম্যানেজমেন্ট (আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে) চাইলে অন্যভাবে চিন্তা করা যেতে পারে।’

তবে নিজের প্রার্থিতার কথা সরাসরিই বললেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহচর যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন। তিনি বলেন, ‘এবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। মানুষ বর্তমান পরিষদের উন্নয়নের জ্বালায় অতিষ্ঠ। কেবল সদর রোড থেকে হাঁটলেই হবে না, নগরের অলিগলিতে তো চলতে হবে। নগরের সাত খাল সংস্কারে বরাদ্দ পেয়েও বিসিসির কারণে করা গেল না। সিলেটে বিএনপির মেয়র ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পান, আর আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই।’

এদিকে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন তাদের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনই খোলাসা করতে চাইছে না। শেষ পর্যন্ত তারা যদি পিছু হটে, তাহলে সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ঘোষিত সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী দলটির নগর সদস্যসচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘নগরবাসীকে হতাশ করে চারটি বছর পার করল বিসিসি। এই চার বছরে নগরের উন্নয়নে এক টাকাও বরাদ্দ না পাওয়ার ব্যর্থতা কার?’ তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘আগামী সিটি ভোটে বরিশালেও খেলা হবে।’

গত নির্বাচনে বাসদের মেয়র প্রার্থী ছিলেন মনিষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, গত চার বছরে বিসিসির এ পরিষদ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করলেও নগরবাসীকে উন্নয়নের সুবিধা দিতে পারেনি। মহাসড়কে পার্ক নির্মাণ অপরিকল্পিত উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। পানি শোধনাগার, খাল খননে ব্যর্থ তারা।

এসব বিষয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেয়র সাদিক অবশ্য সভা-সমাবেশে উন্নয়ন বরাদ্দ না পাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্যানেল মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘আমাদের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁকে নিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছি। ঘরের মধ্যে আরও প্রার্থী থাকতেই পারেন। যাঁরা রাজনীতিতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, তাঁরাই মেয়রের চাচাসহ অনেকের নাম প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।’

গত চার বছরে নগরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে গাজী নইমুল বলেন, ‘আমরা খয়রাতির টাকা হয়তো পাইনি। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে যে সড়ক করেছি, তা নজিরবিহীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত