তপন কুমার ঘোষ
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা বাংলাদেশে আর্থিক লেনদেন সহজ করে দিয়েছে অনেকটাই। ব্যাংকিং সময়ের বাইরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়। তা-ও আবার ঘরে বসেই। আপনি দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা বা চেক জমা দিতে পারবেন। এমনকি আপনার অ্যাকাউন্টের চেকও ভাঙাতে পারবেন। একসময় অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বা চেক ভাঙাতে নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইউটিলিটি বিলের (যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ল্যান্ড ফোন ইত্যাদি) টাকা জমা দিতেও একই হাল। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে গলদঘর্ম অবস্থা। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হলে কাজ ফেলে ছুটতে হতো পোস্ট অফিসে। প্রেরিত টাকা প্রাপকের হাতে কবে পৌঁছাবে, কেউ তা জানত না। এখন ঘরে বসেই অনেক ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে। কাগজহীন এবং নগদহীন লেনদেনে ঝুঁকছে মানুষ। নগদ টাকার লেনদেন কমলে নোট ছাপানো ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর যে শত শত কোটি টাকা খরচ হয় তার অনেকটাই সাশ্রয় হবে। এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।
ডিজিটাল ব্যাংকিং: খুব সহজ করে বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকিং হচ্ছে ব্যাংকে না গিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহায়তায় ডিজিটাল ডিভাইস (যেমন কম্পিউটার, মুঠোফোন, ট্যাবলেট) ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ। মুঠোফোন হয়ে উঠেছে লেনদেনের প্রধান মাধ্যম। বলা হয়, ব্যাংক এখন গ্রাহকের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেসব সেবা দিচ্ছে তার মধ্যে আছে: ইন্টারনেট বা অনলাইন ব্যাংকিং, অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, অ্যাপস ও শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস)। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং: ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং হচ্ছে ইন্টারনেটের সহায়তায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ঘরে বসে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেন। এতে নগদ অর্থ বহন ও লেনদেনের ঝুঁকি এড়ানো যায়। ঘরে বসে লেনদেন করায় সময় ও খরচ বাঁচে। সোনালী ব্যাংকের সোনালী ই-ওয়ালেট, জনতা ব্যাংকের ই-জনতা, ডাচ-বাংলার নেক্সাস পে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ইবিএল স্কাইয়ের মতো ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম): ব্যাংকের গ্রাহকেরা ব্যাংকে না গিয়ে কার্ড ব্যবহার করে নিকটস্থ বা দেশের যেকোনো প্রান্তে অবস্থিত এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এতে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়। আবার চেক বা কার্ড ছাড়া অ্যাপস ব্যবহার করে নগদ টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে। এটিএম বুথের ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনের (সিডিএম) মাধ্যমে এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকাও জমা দেওয়া যায়।
কার্ড: অধুনা আমাদের অনেকের মানিব্যাগে এখন নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ড—ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড। এটাকে প্লাস্টিক কার্ডও বলা হয়। প্লাস্টিক কার্ড নগদ টাকার বিকল্প হওয়ায় এর পোশাকি নাম ‘প্লাস্টিক মানি’।
ডেবিট কার্ড: নিজের টাকায় কেনাকাটা করা বা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয় যে কার্ডে, সেটা হলো ডেবিট কার্ড। ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করলে বা বিল পরিশোধ করলে আপনার সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়। ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে নগদ টাকাও তোলা যায়।
ক্রেডিট কার্ড: ইদানীং ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঋণ করে, অর্থাৎ ধারে কেনাকাটা বা ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় নগদ অর্থের লেনদেন কমে আসছে। সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করলে ঋণের ওপর সুদ দেওয়া লাগে না। ব্যর্থতায় চড়া সুদে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। দেশের বাইরে গিয়েও ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করা যায়।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস): ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, মাই ক্যাশের মতো যেকোনো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা যায়। কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না। এমএফএসের সহায়তায় টাকা জমা (ক্যাশ ইন), টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট), অর্থ প্রেরণ, শপিং মলে কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ, বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ (রেমিট্যান্স) গ্রহণ, মোবাইল রিচার্জ, রেলের টিকিট কেনার মতো আর্থিক লেনদেন এখন সাধারণের হাতের মুঠোয়। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিকাশ। অন্য অ্যাপসগুলোর জনপ্রিয়তাও কম নয়।
শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস): এই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ও ব্যালান্স সম্পর্কে ব্যাংক থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তা প্রেরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকগুলোর ব্যাংক। এটি সরকারের ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে। আন্তব্যাংক পরিশোধ, নিকাশ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার আওতায় আর্থিক লেনদেন দ্রুত, নিরাপদ ও সহজীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিচের কয়েকটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রচলন করেছে।
বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (বিএসিপিএস): এটি একটি অত্যাধুনিক চেক ক্লিয়ারিং বা নিকাশ ব্যবস্থা। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যবস্থার আওতায় ইলেকট্রনিক উপায়ে চেক, পে-অর্ডার ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লিয়ারিংয়ের জন্য উপস্থাপন করা হলে এক দিনেই পরিশোধ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন): এক যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই অর্থ স্থানান্তর করা যায়। মূলত সরকারি বেতন, ভাতা, বিল ও পেনশন প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদান ও এক হিসাব থেকে একাধিক হিসাবে টাকা পাঠানোর জন্য বিইএফটিএন ব্যবহার করা হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকাও এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি): এই চ্যানেলের মাধ্যমে সদস্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তব্যাংক অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার (আইবিএফটি) লেনদেন করা হয়। ২০১২ সাল থেকে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (বিডি-আরটিজিএস): উচ্চমূল্যের লেনদেন তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আরটিজিএস সেবা চালু করেছে ২০১৫ সালে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় বাংলাদেশ বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে—এ মন্তব্য ব্যাংকের একজন সন্তুষ্ট গ্রাহকের। একজন রক্ষণশীল গ্রাহকের মন্তব্য—এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, তবে এখনো সামনে অনেক পথ বাকি। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে বা খাপ খাইয়ে চলতে একটু সময় তো লাগবেই। এই অগ্রযাত্রা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবের। সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রূপকল্পের কথা ঘোষণা করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এটা বাস্তবায়িত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি চারটি—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা আগামী দিনের স্মার্ট অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা বাংলাদেশে আর্থিক লেনদেন সহজ করে দিয়েছে অনেকটাই। ব্যাংকিং সময়ের বাইরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়। তা-ও আবার ঘরে বসেই। আপনি দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা বা চেক জমা দিতে পারবেন। এমনকি আপনার অ্যাকাউন্টের চেকও ভাঙাতে পারবেন। একসময় অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বা চেক ভাঙাতে নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইউটিলিটি বিলের (যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ল্যান্ড ফোন ইত্যাদি) টাকা জমা দিতেও একই হাল। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে গলদঘর্ম অবস্থা। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হলে কাজ ফেলে ছুটতে হতো পোস্ট অফিসে। প্রেরিত টাকা প্রাপকের হাতে কবে পৌঁছাবে, কেউ তা জানত না। এখন ঘরে বসেই অনেক ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে। কাগজহীন এবং নগদহীন লেনদেনে ঝুঁকছে মানুষ। নগদ টাকার লেনদেন কমলে নোট ছাপানো ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর যে শত শত কোটি টাকা খরচ হয় তার অনেকটাই সাশ্রয় হবে। এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।
ডিজিটাল ব্যাংকিং: খুব সহজ করে বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকিং হচ্ছে ব্যাংকে না গিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহায়তায় ডিজিটাল ডিভাইস (যেমন কম্পিউটার, মুঠোফোন, ট্যাবলেট) ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ। মুঠোফোন হয়ে উঠেছে লেনদেনের প্রধান মাধ্যম। বলা হয়, ব্যাংক এখন গ্রাহকের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেসব সেবা দিচ্ছে তার মধ্যে আছে: ইন্টারনেট বা অনলাইন ব্যাংকিং, অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, অ্যাপস ও শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস)। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং: ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং হচ্ছে ইন্টারনেটের সহায়তায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ঘরে বসে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেন। এতে নগদ অর্থ বহন ও লেনদেনের ঝুঁকি এড়ানো যায়। ঘরে বসে লেনদেন করায় সময় ও খরচ বাঁচে। সোনালী ব্যাংকের সোনালী ই-ওয়ালেট, জনতা ব্যাংকের ই-জনতা, ডাচ-বাংলার নেক্সাস পে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ইবিএল স্কাইয়ের মতো ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম): ব্যাংকের গ্রাহকেরা ব্যাংকে না গিয়ে কার্ড ব্যবহার করে নিকটস্থ বা দেশের যেকোনো প্রান্তে অবস্থিত এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এতে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়। আবার চেক বা কার্ড ছাড়া অ্যাপস ব্যবহার করে নগদ টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে। এটিএম বুথের ক্যাশ ডিপোজিট মেশিনের (সিডিএম) মাধ্যমে এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকাও জমা দেওয়া যায়।
কার্ড: অধুনা আমাদের অনেকের মানিব্যাগে এখন নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ড—ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড। এটাকে প্লাস্টিক কার্ডও বলা হয়। প্লাস্টিক কার্ড নগদ টাকার বিকল্প হওয়ায় এর পোশাকি নাম ‘প্লাস্টিক মানি’।
ডেবিট কার্ড: নিজের টাকায় কেনাকাটা করা বা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয় যে কার্ডে, সেটা হলো ডেবিট কার্ড। ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করলে বা বিল পরিশোধ করলে আপনার সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়। ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে নগদ টাকাও তোলা যায়।
ক্রেডিট কার্ড: ইদানীং ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঋণ করে, অর্থাৎ ধারে কেনাকাটা বা ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় নগদ অর্থের লেনদেন কমে আসছে। সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করলে ঋণের ওপর সুদ দেওয়া লাগে না। ব্যর্থতায় চড়া সুদে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। দেশের বাইরে গিয়েও ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করা যায়।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস): ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, মাই ক্যাশের মতো যেকোনো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা যায়। কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না। এমএফএসের সহায়তায় টাকা জমা (ক্যাশ ইন), টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট), অর্থ প্রেরণ, শপিং মলে কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ, বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ (রেমিট্যান্স) গ্রহণ, মোবাইল রিচার্জ, রেলের টিকিট কেনার মতো আর্থিক লেনদেন এখন সাধারণের হাতের মুঠোয়। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিকাশ। অন্য অ্যাপসগুলোর জনপ্রিয়তাও কম নয়।
শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস): এই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ও ব্যালান্স সম্পর্কে ব্যাংক থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তা প্রেরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকগুলোর ব্যাংক। এটি সরকারের ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে। আন্তব্যাংক পরিশোধ, নিকাশ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার আওতায় আর্থিক লেনদেন দ্রুত, নিরাপদ ও সহজীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিচের কয়েকটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রচলন করেছে।
বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (বিএসিপিএস): এটি একটি অত্যাধুনিক চেক ক্লিয়ারিং বা নিকাশ ব্যবস্থা। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যবস্থার আওতায় ইলেকট্রনিক উপায়ে চেক, পে-অর্ডার ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লিয়ারিংয়ের জন্য উপস্থাপন করা হলে এক দিনেই পরিশোধ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন): এক যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই অর্থ স্থানান্তর করা যায়। মূলত সরকারি বেতন, ভাতা, বিল ও পেনশন প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদান ও এক হিসাব থেকে একাধিক হিসাবে টাকা পাঠানোর জন্য বিইএফটিএন ব্যবহার করা হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকাও এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি): এই চ্যানেলের মাধ্যমে সদস্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তব্যাংক অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার (আইবিএফটি) লেনদেন করা হয়। ২০১২ সাল থেকে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (বিডি-আরটিজিএস): উচ্চমূল্যের লেনদেন তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আরটিজিএস সেবা চালু করেছে ২০১৫ সালে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় বাংলাদেশ বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে—এ মন্তব্য ব্যাংকের একজন সন্তুষ্ট গ্রাহকের। একজন রক্ষণশীল গ্রাহকের মন্তব্য—এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, তবে এখনো সামনে অনেক পথ বাকি। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে বা খাপ খাইয়ে চলতে একটু সময় তো লাগবেই। এই অগ্রযাত্রা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবের। সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রূপকল্পের কথা ঘোষণা করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এটা বাস্তবায়িত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি চারটি—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা আগামী দিনের স্মার্ট অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে