মৃত্যুঞ্জয় রায়
গাছ যে জীবন ও পরিবেশের জন্য কতটা মূল্যবান তা আর এখন কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হয় না। একজন লেখাপড়া না জানা সাধারণ লোকও তা বোঝেন, স্বীকার করেন যে গাছ কাটা ভালো নয়। অথচ আমরা যাঁরা নিজেদের তথাকথিত শিক্ষিত বলে দাবি করি, তাঁরাই অযথা গাছ কাটি আর মুখে মুখে ফতোয়া দিই—একটা কাটলে আর একটা লাগাও। কিন্তু একবারও ভেবে দেখি না, যে গাছটি কাটা হচ্ছে, সেটি হয়তো কুড়ি বছরে অমন বড় হয়েছে। তার মানে আজ যে গাছটি কাটা হচ্ছে, সেটি আমাদের কুড়ি বছর ধরে পৃথিবী ও মানুষের সেবা করে আসছে। যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন সে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করেই যাবে। আর যে চারা গাছটি আজ লাগানো হচ্ছে, সেটি অমন বড় হতে সেই কুড়ি বছরই লাগবে। তার মানে এই কুড়ি বছর আমরা সেভাবে সেই গাছের সেবা পাব না, যেটা সেই বয়স্ক গাছের কাছ থেকে আমরা পেয়েছিলাম।
আমাদের শ্বাসের বায়ু জোগাতে ও বায়ুমণ্ডলকে নির্মল রাখতে যে গাছ কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই ওখানে বেঁচে ছিল, সেখানে গাছটি কেটে ফেলার ফলে বিরাট শূন্যতা বিরাজ করবে অন্তত কয়েক বছর। তাই বড় গাছপালা কাটার আগে অনেকবার ভাবতে হবে এসব বিষয়ে। নবীন চারা গাছটিকে পরিচর্যা করে বড় না করা পর্যন্ত সেই প্রবীণ গাছটি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তাহলে গাছ থেকে সেই নির্দিষ্ট অণু পরিবেশে অক্সিজেনের সরবরাহ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিশোষণের একটি টেকসই সাম্যতা বিরাজ করবে। কিন্তু আমরা এই দিকগুলো না ভেবে তথাকথিত উন্নয়নের নামে কেবল অযথা গাছ কেটে চলেছি, এটি দুঃখজনক।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে, খুলনা সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুলনা থেকে মুজগুন্নী পর্যন্ত বাইপাস সড়কের মাঝে থাকা সড়ক বিভাজকের পাঁচ কিলোমিটারের সব গাছ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কেটে ফেলা হবে। খুলনা শহরের নতুন উপনগরীর মধ্য দিয়ে ধেয়ে চলা এ রাস্তাটি অন্যতম প্রধান সড়ক। ইতিমধ্যে কিছু গাছ কাটাও হয়েছে। এরূপ দুঃসংবাদের মধ্যেও ভালো খবর হলো, খুলনার পরিবেশকর্মীরা দলবদ্ধভাবে ১০ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের এই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেছেন, ‘আমরা আর একটা গাছও কাটা দেখতে চাই না। আমরা চাইব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো গাছ কাটার আগে খুবই বিবেচক হয়; বরং যেসব জায়গায় গাছ লাগানোর দরকার, সেখানে আরও বেশি গাছ লাগাক তারা। উন্নয়নের সময় আমাদের পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না।’
এ কথা প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া যাবে না। অথচ আমরা সে কাজ করেই চলেছি। ঢাকা ও খুলনার গাছ কাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দুই জায়গাতেই সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করেছে। সাধারণ মানুষ খুলনা সিটি করপোরেশনের এ কাজেরও প্রতিবাদ করেছে। খুলনার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে পরিবর্তন খুলনা, পরিবেশ সুরক্ষা, হিউম্যানিটি ওয়াচ, ছায়াবৃক্ষ, টিআইবিসহ অনেক সংগঠন। পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের জনসচেতনতা আমাদের উৎসাহিত করেছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ তথা অযথা গাছ কাটার সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার। গাছ লাগানো ভালো কথা, কিন্তু পুরোনো বয়সী গাছ নির্মমভাবে কেটে নয়। তার পাশে আরও গাছ লাগিয়ে বড় হওয়ার পর পুরোনো গাছগুলো সরানোর চিন্তা করা উচিত। এমনিতেই প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে আমাদের গাছপালা ঝড়-বাতাসে ভেঙে যাচ্ছে, রোগ-পোকা ও মানুষের লোভাতুর দৃষ্টিতে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি বন্ধুরা। তারপর যদি আমরা উন্নয়নের নামে গাছপালা কেটে ফেলি, তবে তা হবে নিজেদের বুকে নিজেদেরই ছুরি বসানো, আত্মহত্যার শামিল।
আমরা চাই খুলনা সিটি করপোরেশনসহ যাঁরা এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃতি-পরিবেশকে রক্ষা করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা দরকার।
পথের ধারে লাগাতে হয় পথতরু, যাতে পথচারীরা চলাচলের সময় তার ছায়ায় আরাম পায়। হয়তো কেউ কেউ বলবেন, মানুষ তো আর আগের মতো রাস্তায় হেঁটে চলে না, চলে গাড়িতে। তাই তাদের আর ছায়ার দরকার নেই। কিন্তু গাড়িতে চলার সময় অতিরিক্ত রোদ আর শুষ্কতায় যে পরিমাণ ধুলা ওড়ে তাতে কি তাদের চলার সেই আরাম থাকে? তা ছাড়া পথের ধারে এমন কিছু গাছ লাগানো উচিত যা শুধু শোভা বাড়াবে না, ছায়া দেবে না—দেবে পাখিদের খাদ্য। সেই সব গাছের ফল খেতে পাখিরা আসবে, কিচিরমিচির করে ডাকবে, পোকামাকড় খেয়ে ফসল বাঁচাবে। যে গাছের ডালপালা ও পাতা যত ছড়ানো ও বেশি হবে, সেই গাছ থেকে আমরা তত বেশি ছায়া ও অক্সিজেন পাব।
ভারতের দিল্লিতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে একেক পথের ধারে একেক রকমের গাছ লাগানো। নিম ও জামগাছ লাগিয়ে তারা দাবদাহ কমানোর পাশাপাশি পাখিদের খাবারেরও ব্যবস্থা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের এক রাস্তায় দেখেছি রুদ্রপলাশের রুদ্র নাচন। এরূপ একেক সড়কের পাশে একেক গাছের দীর্ঘ সারিতে নিশ্চয়ই সিটি করপোরেশনগুলোর সৌন্দর্য বিকাশের ইচ্ছা পূরণ হবে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে এখন দেখছি, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কিছু ছোট গুল্ম প্রকৃতির গাছ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে; অনেক সড়ক বিভাজকে লাগানো হচ্ছে বনজুঁই, রঙ্গন, রাধাচূড়া, করবী, চন্দ্রপ্রভা, বাগানবিলাস ইত্যাদি গাছ। এসব গাছের ফুল সৌন্দর্য দিলেও তা বড় বৃক্ষের তুলনায় পরিবেশে অবদান রাখে কম। তাই ছোট গাছ লাগালেও মাঝে মাঝে স্থান উপযোগী কিছু বড় গাছের কথা ভাবতে হবে।
সিটি করপোরেশন হয়তো ভেবেছে, মানুষেরা তো আর এখন মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে ওপরের দিকে তাকায় না, তাদের চোখ থাকে নিচের দিকে। তাই রাস্তার পাশে ছোট ঝোপাল গাছ লাগালে হয়তো তারা বুঝতে পারবে যে সিটি করপোরেশন পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কত কিছুই না করছে! কিন্তু তাদের মাথায় কি একবারও এ চিন্তা আসে না, এসব ক্ষণজীবী গাছ খুব বেশি দিন মানুষকে সেই আনন্দ দিতে পারবে না? আবার সেই সব গাছের যত্নও নিতে হবে অনেক বেশি। না হলে এক থেকে দুই বছরেই ওগুলো মরে যাবে। তখন আজ যেখান থেকে বড় গাছ কেটে ফেলা হলো, সেখানে আবার সেই শূন্যতা নেমে আসবে। তখন কি আবার আমরা ফের বড় গাছ তথা বৃক্ষ লাগানোর চিন্তা করব?
এ ধরনের অপরিকল্পিত পরিকল্পনা কখনোই পরিবেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না; বরং দীর্ঘজীবী গাছ একবার টিকে গেলে তা পরিবেশের সেবা করবে বহুদিন। শোভার কথা যদি ধরা হয়, তাহলে গ্রীষ্মে ফোটা জারুল, কনকচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, নাগেশ্বর, স্বর্ণচাঁপা, সোনালু, লাল সোনালু; বর্ষায় কদম, শরতে ছাতিম, বসন্তে শিমুল, পলাশ, রুদ্রপলাশ, বাসন্তিকা—এরূপ ফুলপ্রদায়ী অনেক ছায়াবৃক্ষ বা পথতরু পথের ধারে লাগানো যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে ঢাকায় চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশের রাস্তার দুই ধারে লাগানো কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য কোন পথচারীকে আনন্দিত না করে? জানি না, খুলনা সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনায় কী আছে?
পরিকল্পনায় যাই-ই থাকুক, একটি গাছ লাগানোর জন্য একটি গাছ কাটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ না। বৃক্ষপালনবিদেরা নিশ্চয়ই জানেন, বিদ্যমান গাছ রেখে কীভাবে নতুন গাছ লাগিয়ে সড়ককে নান্দনিক করা যায়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
গাছ যে জীবন ও পরিবেশের জন্য কতটা মূল্যবান তা আর এখন কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হয় না। একজন লেখাপড়া না জানা সাধারণ লোকও তা বোঝেন, স্বীকার করেন যে গাছ কাটা ভালো নয়। অথচ আমরা যাঁরা নিজেদের তথাকথিত শিক্ষিত বলে দাবি করি, তাঁরাই অযথা গাছ কাটি আর মুখে মুখে ফতোয়া দিই—একটা কাটলে আর একটা লাগাও। কিন্তু একবারও ভেবে দেখি না, যে গাছটি কাটা হচ্ছে, সেটি হয়তো কুড়ি বছরে অমন বড় হয়েছে। তার মানে আজ যে গাছটি কাটা হচ্ছে, সেটি আমাদের কুড়ি বছর ধরে পৃথিবী ও মানুষের সেবা করে আসছে। যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন সে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করেই যাবে। আর যে চারা গাছটি আজ লাগানো হচ্ছে, সেটি অমন বড় হতে সেই কুড়ি বছরই লাগবে। তার মানে এই কুড়ি বছর আমরা সেভাবে সেই গাছের সেবা পাব না, যেটা সেই বয়স্ক গাছের কাছ থেকে আমরা পেয়েছিলাম।
আমাদের শ্বাসের বায়ু জোগাতে ও বায়ুমণ্ডলকে নির্মল রাখতে যে গাছ কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই ওখানে বেঁচে ছিল, সেখানে গাছটি কেটে ফেলার ফলে বিরাট শূন্যতা বিরাজ করবে অন্তত কয়েক বছর। তাই বড় গাছপালা কাটার আগে অনেকবার ভাবতে হবে এসব বিষয়ে। নবীন চারা গাছটিকে পরিচর্যা করে বড় না করা পর্যন্ত সেই প্রবীণ গাছটি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তাহলে গাছ থেকে সেই নির্দিষ্ট অণু পরিবেশে অক্সিজেনের সরবরাহ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিশোষণের একটি টেকসই সাম্যতা বিরাজ করবে। কিন্তু আমরা এই দিকগুলো না ভেবে তথাকথিত উন্নয়নের নামে কেবল অযথা গাছ কেটে চলেছি, এটি দুঃখজনক।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে, খুলনা সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুলনা থেকে মুজগুন্নী পর্যন্ত বাইপাস সড়কের মাঝে থাকা সড়ক বিভাজকের পাঁচ কিলোমিটারের সব গাছ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কেটে ফেলা হবে। খুলনা শহরের নতুন উপনগরীর মধ্য দিয়ে ধেয়ে চলা এ রাস্তাটি অন্যতম প্রধান সড়ক। ইতিমধ্যে কিছু গাছ কাটাও হয়েছে। এরূপ দুঃসংবাদের মধ্যেও ভালো খবর হলো, খুলনার পরিবেশকর্মীরা দলবদ্ধভাবে ১০ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের এই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেছেন, ‘আমরা আর একটা গাছও কাটা দেখতে চাই না। আমরা চাইব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো গাছ কাটার আগে খুবই বিবেচক হয়; বরং যেসব জায়গায় গাছ লাগানোর দরকার, সেখানে আরও বেশি গাছ লাগাক তারা। উন্নয়নের সময় আমাদের পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না।’
এ কথা প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া যাবে না। অথচ আমরা সে কাজ করেই চলেছি। ঢাকা ও খুলনার গাছ কাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দুই জায়গাতেই সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করেছে। সাধারণ মানুষ খুলনা সিটি করপোরেশনের এ কাজেরও প্রতিবাদ করেছে। খুলনার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে পরিবর্তন খুলনা, পরিবেশ সুরক্ষা, হিউম্যানিটি ওয়াচ, ছায়াবৃক্ষ, টিআইবিসহ অনেক সংগঠন। পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের জনসচেতনতা আমাদের উৎসাহিত করেছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ তথা অযথা গাছ কাটার সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার। গাছ লাগানো ভালো কথা, কিন্তু পুরোনো বয়সী গাছ নির্মমভাবে কেটে নয়। তার পাশে আরও গাছ লাগিয়ে বড় হওয়ার পর পুরোনো গাছগুলো সরানোর চিন্তা করা উচিত। এমনিতেই প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে আমাদের গাছপালা ঝড়-বাতাসে ভেঙে যাচ্ছে, রোগ-পোকা ও মানুষের লোভাতুর দৃষ্টিতে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি বন্ধুরা। তারপর যদি আমরা উন্নয়নের নামে গাছপালা কেটে ফেলি, তবে তা হবে নিজেদের বুকে নিজেদেরই ছুরি বসানো, আত্মহত্যার শামিল।
আমরা চাই খুলনা সিটি করপোরেশনসহ যাঁরা এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃতি-পরিবেশকে রক্ষা করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা দরকার।
পথের ধারে লাগাতে হয় পথতরু, যাতে পথচারীরা চলাচলের সময় তার ছায়ায় আরাম পায়। হয়তো কেউ কেউ বলবেন, মানুষ তো আর আগের মতো রাস্তায় হেঁটে চলে না, চলে গাড়িতে। তাই তাদের আর ছায়ার দরকার নেই। কিন্তু গাড়িতে চলার সময় অতিরিক্ত রোদ আর শুষ্কতায় যে পরিমাণ ধুলা ওড়ে তাতে কি তাদের চলার সেই আরাম থাকে? তা ছাড়া পথের ধারে এমন কিছু গাছ লাগানো উচিত যা শুধু শোভা বাড়াবে না, ছায়া দেবে না—দেবে পাখিদের খাদ্য। সেই সব গাছের ফল খেতে পাখিরা আসবে, কিচিরমিচির করে ডাকবে, পোকামাকড় খেয়ে ফসল বাঁচাবে। যে গাছের ডালপালা ও পাতা যত ছড়ানো ও বেশি হবে, সেই গাছ থেকে আমরা তত বেশি ছায়া ও অক্সিজেন পাব।
ভারতের দিল্লিতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে একেক পথের ধারে একেক রকমের গাছ লাগানো। নিম ও জামগাছ লাগিয়ে তারা দাবদাহ কমানোর পাশাপাশি পাখিদের খাবারেরও ব্যবস্থা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের এক রাস্তায় দেখেছি রুদ্রপলাশের রুদ্র নাচন। এরূপ একেক সড়কের পাশে একেক গাছের দীর্ঘ সারিতে নিশ্চয়ই সিটি করপোরেশনগুলোর সৌন্দর্য বিকাশের ইচ্ছা পূরণ হবে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে এখন দেখছি, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কিছু ছোট গুল্ম প্রকৃতির গাছ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে; অনেক সড়ক বিভাজকে লাগানো হচ্ছে বনজুঁই, রঙ্গন, রাধাচূড়া, করবী, চন্দ্রপ্রভা, বাগানবিলাস ইত্যাদি গাছ। এসব গাছের ফুল সৌন্দর্য দিলেও তা বড় বৃক্ষের তুলনায় পরিবেশে অবদান রাখে কম। তাই ছোট গাছ লাগালেও মাঝে মাঝে স্থান উপযোগী কিছু বড় গাছের কথা ভাবতে হবে।
সিটি করপোরেশন হয়তো ভেবেছে, মানুষেরা তো আর এখন মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে ওপরের দিকে তাকায় না, তাদের চোখ থাকে নিচের দিকে। তাই রাস্তার পাশে ছোট ঝোপাল গাছ লাগালে হয়তো তারা বুঝতে পারবে যে সিটি করপোরেশন পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কত কিছুই না করছে! কিন্তু তাদের মাথায় কি একবারও এ চিন্তা আসে না, এসব ক্ষণজীবী গাছ খুব বেশি দিন মানুষকে সেই আনন্দ দিতে পারবে না? আবার সেই সব গাছের যত্নও নিতে হবে অনেক বেশি। না হলে এক থেকে দুই বছরেই ওগুলো মরে যাবে। তখন আজ যেখান থেকে বড় গাছ কেটে ফেলা হলো, সেখানে আবার সেই শূন্যতা নেমে আসবে। তখন কি আবার আমরা ফের বড় গাছ তথা বৃক্ষ লাগানোর চিন্তা করব?
এ ধরনের অপরিকল্পিত পরিকল্পনা কখনোই পরিবেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না; বরং দীর্ঘজীবী গাছ একবার টিকে গেলে তা পরিবেশের সেবা করবে বহুদিন। শোভার কথা যদি ধরা হয়, তাহলে গ্রীষ্মে ফোটা জারুল, কনকচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, নাগেশ্বর, স্বর্ণচাঁপা, সোনালু, লাল সোনালু; বর্ষায় কদম, শরতে ছাতিম, বসন্তে শিমুল, পলাশ, রুদ্রপলাশ, বাসন্তিকা—এরূপ ফুলপ্রদায়ী অনেক ছায়াবৃক্ষ বা পথতরু পথের ধারে লাগানো যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে ঢাকায় চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশের রাস্তার দুই ধারে লাগানো কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য কোন পথচারীকে আনন্দিত না করে? জানি না, খুলনা সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনায় কী আছে?
পরিকল্পনায় যাই-ই থাকুক, একটি গাছ লাগানোর জন্য একটি গাছ কাটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ না। বৃক্ষপালনবিদেরা নিশ্চয়ই জানেন, বিদ্যমান গাছ রেখে কীভাবে নতুন গাছ লাগিয়ে সড়ককে নান্দনিক করা যায়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে