প্রতারকচক্রের নারী সদস্যরা কৌশলে বাসায় ডেকে নেন। পরে নারী সদস্যদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তোলা হয়।

ওই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। গত সোমবার রাতে দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

লক্ষ্মীপুর এলাকায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে আসেন এক শিক্ষক। নার্গিস নাহার হেলেনা নামের এক নারীর সঙ্গে তাঁর হঠাৎ দেখা। কথাবার্তার একপর্যায়ে হেলেনা তাঁকে জানান, তাঁর মতো একজন শিক্ষকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তিনি খুব খুশি। নাতির জন্য প্রাইভেট শিক্ষক খুঁজছিলেন। ওই শিক্ষককে অনুরোধ করেন যেন তিনি হেলেনার ওই নাতিকে পড়াতে বাসায় আসেন। ঠিকানাও দেন। এ ঘটনা গত ৪ অক্টোবরের। পরে ওই শিক্ষক সরল মনে যান হেলেনার বাসায়।

হেলেনা ও তাঁর সহযোগীরা ওই শিক্ষককে জিম্মি করেন। ভয় দেখিয়ে নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তোলেন। পরে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। এ অভিযোগ পেয়ে দুই নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওই শিক্ষকের মতো অনেকেই এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সবশেষ ফাঁদে পড়েন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। চক্রের সদস্যরা তাঁর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযোগ পেয়ে, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল গত সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন রাজশাহীর কাটাখালী থানার সমসাদিপুর এলাকার সায়েম উদ্দিন ওরফে শ্যাম, বোয়ালিয়া থানার হাদির মোড় নদীর ধারের মো. পারভেজ, এয়ারপোর্ট থানার বায়া তেরিপাড়া এলাকার রাজিয়া সুলতানা ওরফে সুমা ও চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি খুদির বটতলা গ্রামের শরিফা আক্তার ওরফে সামী। তাঁদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

নগর ডিবির উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, চক্রটি গত এক মাসে এ ধরনের তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রথম দুজন পুলিশে অভিযোগ করেননি। 
আরেফিন জুয়েল আরও বলেন, ‘রাজশাহীর বাইরের অনেক মানুষ নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতারকচক্রটি মূলত তাদের টার্গেট করে। তবে বাইরের জেলা থেকে এসে কেউ এমন ফাঁদে পড়লে আর অভিযোগ করে না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকেই মান-সম্মানের ভয়ে ঘটনা চেপে যান।’

পুলিশের পর্যবেক্ষণ, কয়েকটি চক্রের শতাধিক নারী-পুরুষ রয়েছে। চক্রের নারী সদস্যদের কেউ কেউ লক্ষ্মীপুর এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নার্স, অভ্যর্থনা কর্মী কিংবা রোগী বহনকারী ট্রলি ঠেলার কাজ করেন।

এ ছাড়া রাজশাহীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকা, উপশহর, ভদ্রা, কলাবাগান, বিলসিমলা, বায়া, নওদাপাড়া, আম চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতারকচক্রের সদস্যরা মানুষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করছে।

সম্প্রতি পদ্মা আবাসিকের একটি বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়েন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা। উপশহরে গিয়ে ফেঁসেছিলেন রেলের এক কর্মকর্তা। 
আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে তা আমাদের জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। ভুক্তভোগীদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।’