মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ রংপুরে নেই জনসচেতনতা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ১০
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইয়েলো জোন (মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ) ঘোষিত রংপুরে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব উধাও হয়ে গেছে। সবার মধ্যে একধরনের উদাসীনতা রয়েছে।

জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তেমন প্রচারও নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধে ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে নেই কোনো তৎপরতা। এমনকি রংপুর জেলাকে ইয়েলো জোন হিসেবে ঘোষণা করা হলেও তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানেন না সিভিল সার্জন।

গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, হাটবাজার, হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের মতোই মানুষ চলাফেরা করছেন। মুখে মাস্ক নেই, গাঁয়ে গা ঘেঁষে চলছে কেনাবেচা। গণপরিবহনগুলোতে সব আসনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। হাটবাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে লোকজন। কারও মধ্যে তেমন করোনা ভীতি নেই।

মহামারি শুরুর দিকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট, টহল, ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চলেছে। কিন্তু এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে আরোপ করা বিধিনিষেধ কার্যকর করতে তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজার দিয়ে একদল শিক্ষার্থী সারিবদ্ধ হয়ে টিকা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে যাচ্ছিল। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাস্ক পকেটে আছে। আমরা করোনার টিকা দিতে যাচ্ছি। টিকা দিলে তো আর মাস্ক লাগবে না।’

তারাগঞ্জের চৌপথী, ইকরচালী, পাগলাপীর, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড় বাসস্ট্যান্ডে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস, ইজিবাইক ও অটোরিকশা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ চালক ও সহকারীর মুখে মাস্ক ছিল না। বাকিদের মাস্ক থাকলেও তা নামানো ছিল থুতনিতে। বাসগুলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছিল। যাত্রীদের মধ্যে অল্প কয়েকজনের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

বিআরটিসি বাসের চালক হায়দার আলী বলেন, ‘পান খাচ্ছিলাম, এ জন্য মাস্ক খুলে রাখছি। যাত্রীদের আমরা মাস্ক পরতে বলছি। তাঁরা শুনছেন না। উল্টো আমাদের গালমন্দ করেন।’

থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে রাখা এইচএ পরিবহনের সুপারভাইজারের সুমন মিয়া বলেন, ‘যাত্রীর সঙ্গে সব সময় কথা বলতে হয়। তাই মাস্ক নামিয়ে রাখছি। আর যাত্রীদের গাড়িতে ওঠার সময় বারবার মুখে মাস্ক পরতি বলি। তাঁরা মাস্ক না পরলে তো আমরা পরিয়ে দিতে পারি না।’

তারাগঞ্জের মাছ ও কাঁচাবাজারে গিজগিজ করছিল মানুষ। ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে বাজার করতে আসা দৌলতপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুইটা টিকা দিছি। আর কিসের ভয়। তা ছাড়া মাস্ক না পরলে তো এখন জরিমানা করে না। সেই জন্যে মাস্ক পরি নাই।’

রংপুর মেডিকেল মোড়ে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ মাস্ক বিক্রেতা রজব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, মানুষ আগের মতো মাস্ক কিনে না। আগে একটি মাস্ক ১০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন দুটি মাস্ক ৫ টাকায়ও নেয় না। খালি মুখে মানুষ ঘুরে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। তাঁরা জটলা বেঁধে গল্প করছিলেন। হাসপাতালের প্রধান ফটকে কথা হয় বদরগঞ্জের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোগীর চিন্তায় সবাই ব্যস্ত, মাস্ক পরব কখন। আর টিকা নিছি তো, মাস্ক লাগবে কেন?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল জেলা সিভিল সার্জন শামীম আহমেদ বলেন, ‘রংপুর ইয়েলো জোনে, এমন কোনো চিঠি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা পাইনি। তবে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত