শেখ হাসিনা কোথায় ঠাঁই পাবেন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছেড়ে বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে শুরু হয়েছে, তিনি কোথায় থিতু হচ্ছেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল মঙ্গলবার যা বললেন, তাতে শেখ হাসিনার ভারতে বসবাস সংক্ষিপ্ত হওয়ার আভাস মিলছে। 

জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় এক বিবৃতিতে দাবি করেন, শেখ হাসিনা অতি অল্প সময় দিয়ে তাঁকে সাময়িকভাবে ভারতে যেতে দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। 

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মালবাহী একটি সি-১৩০জে উড়োজাহাজে শেখ হাসিনা গত সোমবার ভারতে পৌঁছান।

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারই তাঁর কাছ থেকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্যরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও তাঁর (হাসিনার) পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান।

১৯৭৫ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় সপরিবার খুন হওয়ার পর তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ছয় বছর কড়া নিরাপত্তায় দিল্লিতে ছিলেন। এবার তিনি কত দিন ভারতে থাকতে চাইবেন, অথবা দেশটির সরকার তাঁকে কত দিন থাকতে দেবেন, সে বিষয়েও নানামুখী আলোচনা আছে।

হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অথবা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে যেতে চাইতে পারেন। জয় যুক্তরাষ্ট্রের আর রেহানা যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
অবশ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিনদের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকায় শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনার কথা বলছেন দলটির নেতারা। রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির লেবার সরকারের একজন কনিষ্ঠ মন্ত্রী।

দিল্লি, লন্ডন ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের একজন করে কূটনীতিক আজকের পত্রিকাকে প্রায় অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া অথবা অনেক দিন থাকতে দেওয়া একটা স্পর্শকাতর বিষয়। তেমনটি হলে বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের টানাপোড়েন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

এ প্রসঙ্গে কূটনীতিকেরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসেন। তাঁরা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ঢাকার সঙ্গে লন্ডনের সরকারি পর্যায়ের প্রতিটি আলোচনায় শেখ হাসিনার সরকার তারেক রহমানকে ফেরত দিতে যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, দেশটি তাঁর ভিসা বাতিল করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, ভিসা যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী একটি গোপনীয় বিষয়। এ কারণে কারও ব্যক্তিগত ভিসার বিষয়ে দূতাবাস মন্তব্য করে না।

যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গ
লন্ডনের ডেইলি সান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের দেওয়া আগের ভিসার মেয়াদ থাকা সাপেক্ষে তা ব্যবহার করে কেবল ভ্রমণে যেতে পারবেন। কিন্তু অনেক দিন টানা থাকার পরিকল্পনা থাকলে তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে হতে পারে। যদিও দেশটির বর্তমান আইন অনুযায়ী, তাঁর পক্ষে অন্য দেশে অবস্থান করে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক আশ্রয় অথবা সাময়িক শরণার্থী হিসেবে থাকার জন্য যুক্তরাজ্য কাউকে সে দেশে ভ্রমণে যেতে অনুমতি দেয় না। আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তি যেখানে আছেন, সেখান থেকেই তাঁকে এ বিষয়ে আবেদন করতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত