মন্ত্রীদের বাংলোয় আমলাদের বাস

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ৩৯
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৫

রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাংলো বাড়িগুলোয় একসময় শুধু মন্ত্রীরাই থাকতেন। এ জন্য মিন্টো রোডকে বলা হয় মন্ত্রিপাড়া। সেই মন্ত্রিপাড়ায় এখন আমলাদের আধিক্য। বাংলো বাড়িগুলোয় বাস করছেন সরকারের সচিব, বিচারক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর মন্ত্রিপাড়ায় ঠাঁই না পেয়ে সরকারি আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটে বাস করছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কেউ কেউ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিন্টো রোড এলাকায় ১২টি বাংলো আছে। এ ছাড়া গুলশান ও ধানমন্ডিতে আছে আরও ১৪টি পৃথক বাংলো। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এসব বাংলোয় বর্তমান ও সাবেক সচিব, বিচারপতি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব, জেলা জজ, ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বসবাস করছেন। 

সরকারের সচিবদের জন্য রয়েছে সচিব নিবাস, আর বিচারপতিদের জন্য আছে জাজেস কমপ্লেক্স। এসব কর্মকর্তার বাসাবাড়ি মেরামত করতে বছরে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ কর্মকর্তা সরকারি প্রকল্প থেকে প্লট-ফ্ল্যাটও বরাদ্দ পেয়েছেন। তারপরও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য রাখা বাংলোই পছন্দ তাঁদের অনেকের। 

জানতে চাইলে আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. শহিদুল ইসলাম ভূঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলোগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে মূলত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। উনাদের দিয়ে যদি খালি থাকে তাহলে সরকারের সচিবদের দেওয়া হয়। তবে কিছু মন্ত্রীকে বাংলো দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, সচিবেরা আগে থেকেই বসবাস করছেন। এখন একজন থাকা অবস্থায় তো অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব হয় না।’ 

যেসব কর্মকর্তা বাংলোতে থাকেন 
মিন্টো রোডের ১২ নম্বর বাংলোতে বাস করেন এক সচিব, ৯ নম্বরে সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা, ১১ নম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের নামে বরাদ্দ করা বাসায় সাবেক সচিব সুরাইয়া বেগম, ৩৭ নম্বরে সচিব পদমর্যাদার একজন একটি সংস্থার চেয়ারম্যান, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের বাংলো নামে পরিচিত বাংলোটিতে একজন কর্মকর্তা, ৪৪ ও ৪১ নম্বরে দুজন বিচারপতি, ৩২ নম্বরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ৩৬ নম্বরে ঢাকার জেলা জজ, ২৮ নম্বরে ঢাকার জেলা প্রশাসক, ৩৯ নম্বরে বিটিআরসির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, সার্কিট হাউস রোডের বাংলোতে সাবেক পূর্তসচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, পুলিশ সুপারের বাসভবনসংলগ্ন বাংলোয় এক সচিব বসবাস করেছেন। 

এ আমলারা ছাড়াও মিন্টো রোডে ঠাঁই পেয়েছেন মাদারীপুর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ। তিনি সেখানকার ৪২ নম্বর বাংলোয় বসবাস করছেন। 

মিন্টো রোড ছাড়াও রাজধানীর গুলশান ও ধানমন্ডিতে কিছু বাড়ি আছে, যেখানে আমলারা বাস করেন। গুলশানের ৬ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লটটি দুই বিঘা আয়তনের। এ বাংলোতে দীর্ঘ সময় বসবাস করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমীন উল্লাহ নূরী। জানতে চাইলে আমীন উল্লাহ নূরী জানিয়েছেন তিনি সম্প্রতি এ বাংলোটি ছেড়েও দিয়েছেন।

গুলশানের ১১৪ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে সাবেক সচিব ড. মোজাম্মেল হক, ১৬ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ৩১ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে একজন বিচারপতি, ৭৪ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে একজন বিচারপতি, ৩৬ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িতে একজন বিচারপতি, ২৬ নম্বর রোডের ৮৪ নম্বর বাড়িতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, মোহাম্মদপুরের ৮/১৭ ব্লকে স্যার সৈয়দ রোডের বাড়িতে একজন বিচারপতি, ধানমন্ডির ৭/এ রোডের ৯২/এ নম্বর বাড়িতে একজন বিচারপতি, ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে একটি সংস্থার কমিশনার এবং ধানমন্ডি ৬/এ রোডের ৬১ নম্বর বাড়িটিতে সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার বসবাস করেন। 

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ১৬ নভেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নন্দিতা রাণী সাহা এক চিঠিতে বেইলি রোডের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের দোতলা বাসাটি এক সচিবের নামে বরাদ্দের জন্য চিঠি দেন। এরপর আরেক চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত বিভাগ-১) আতিকুল ইসলাম এ বাসাটি মূল বেতনের সাড়ে ৭ ভাগ হারে ভাড়া নির্ধারণ করে বরাদ্দ দেন। মূলত এটি একটি দোতলা বাড়ি। সেখানে নিচে থাকা বিদ্যুতের সাবস্টেশন সরিয়ে মেরামতের পর তা সচিবের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার ভাড়া কমবেশি ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

সার্কিট হাউস রোডে আরেকটি দোতলা বাড়িতে প্রায় সাত বছর ধরে বসবাস করেন সাবেক পূর্তসচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (সার্কেল-১) জন্য নির্ধারিত এ বাসাটিতে তিনি সচিব হওয়ার পরপরই বসবাস শুরু করেন। বাংলোটিতে এখনো সাবেক এ আমলা বসবাস করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার আজকের পত্রিকাকে বলেল, ‘আমি নিয়মিত ভাড়া দিয়ে এখানে থাকছি। আগে এখানে একজন প্রকৌশলী ছিলেন। এখন বাড়িটি মেরামত করে বসবাস করছি।’ 

ফ্ল্যাটে থাকেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী 
আমলারা বাংলোতে বাস করলেও মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট নামে মিন্টো রোডের একটি আবাসিক ভবনে থাকছেন ১০ জন সদ্য সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা হলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। নতুন মন্ত্রিপরিষদে যাদের স্থান হয়নি তাঁরা এখনো এসব বাসাতেই বসবাস করছেন। গণপূর্ত সূত্র বলছে, এসব বাসা খালি হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। 

সরকারি বাড়ি বরাদ্দ এবং দেখভালের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিব চাইলে তো অনেক বড় বাসায় থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলো টাইপ এসব বাসা তুলনামূলক ছোট। উনারা (সচিব) মেরামত করে থাকেন। এটা আসলে ওই রকম কোনো অনিয়ম না। আমরা মাসিক হিসেবে ভাড়া কেটে নিচ্ছি। আর অন্য বাংলোগুলোর বরাদ্দ মূলত আবাসন অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডুপ্লেক্স বাড়ি থেকে পর্যটন স্পট, কী নেই কম্পিউটার অপারেটর নাজমুলের

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ট্রেনে হামলা, কয়েকজন জখম, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ঢাকার যানজট নিরসনে ৫ কোটির সিগন্যাল ব্যবস্থা, বাস্তবায়নে লাগবে ৬ মাস

মহাখালী সড়ক ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা, সচিবালয়ে প্রতিনিধিদল

সীতাকুণ্ডে বাসচাপায় নারী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত