‘ফাতেমা’ ধানে ৩ গুণ ফলন

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
Thumbnail image

মনিরামপুরে ‘ফাতেমা’ নামের একটি জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ মিনারুল ইসলাম নামের এক কৃষক। নিজের জমি না থাকায় ইজারা নিয়ে এক বিঘা জমিতে তিনি এ জাতের ধান চাষ করেন।

রোহিতা শেখপাড়ায় মিনারুলের খেতজুড়ে বাতাসে দুলছে লম্বা লম্বা সোনালি ধানের শিষ। প্রতি শিষে ধান হবে ৮০০ থেকে ১ হাজারটি; যা অন্য ধানের জাতের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

মিনারুলের উচ্চফলনশীল ধান দেখতে নিয়মিত আশপাশের কৃষকেরা তাঁর খেতে যাচ্ছেন। ধানের ফলন দেখে অবাক হচ্ছেন সবাই। ভবিষ্যতে তাঁর কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজেদের খেতে চাষের কথা ভাবছেন স্থানীয় চাষিরা।

মিনারুলের পেশা কৃষি নয়। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থাকার পর করোনার আগে গ্রামের বাড়ি মনিরামপুরের রোহিতা শেখপাড়ায় ফেরেন তিনি। এরপর করোনার কারণে আর বিদেশে যেতে না পেরে ধান চাষের কথা ভাবেন মিনারুল।

ধান চাষে সাধারণ আর দশজন কৃষকের থেকে আলাদা চিন্তা করেন এ যুবক। খুঁজতে থাকেন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত। একপর্যায়ে ইউটিউবের বদৌলতে ফাতেমা ধানের সন্ধান পান মিনারুল। এরপর মাগুরার এক কৃষকের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চলতি বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে চাষ করেন। এখন শতকে এক মণের অধিক ফলনের আশা এ কৃষকের।

মিনারুল বলেন, ‘কয়েক বছর আগে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার এক কৃষক আফতাব নামে এক জাতের হাইব্রিড ধানের চাষ করেন। সেখান থেকে ব্যতিক্রম তিনটি শিষ আলাদা করেন ওই কৃষকের মা ফাতেমা। পরের বছর তিনটি শিষের ধানের বীজতলা তৈরি করে সে চারা জমিতে লাগিয়ে উচ্চ ফলন পান সে কৃষক। এরপর মার নামে ধানের নামকরণ করেন ‘‘ফাতেমা’’ ধান।’

মিনারুল বলেন, ‘ইউটিউব দেখে মাগুরার এক কৃষকের সন্ধান পাই। তাঁর কাছ থেকে ৩০০ টাকা দরে ৭ কেজি ধান কিনি। শুরুতে আড়াই বিঘা চাষের চিন্তা করে বীজ সংগ্রহ করি। পরে জমি না পেয়ে ইজারা নিয়ে এক বিঘায় ধান লাগিয়েছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। প্রতিটি ধান গাছে বড় বড় শিষ। একেক শিষে ৮০০-১ হাজার পাকা ধান ঝুলছে। আশা করছি বিঘায় ৩৫-৪০ মণ ফলন পাব।’

এ চাষি বলেন, ‘ফাতেমা ধানের গাছ অন্য ধানগাছ থেকে বেশ মোটা ও শক্ত। ধান গাছের দৈর্ঘ্য ৫ ফুটের বেশি। প্রতিটি গাছের পাতা থেকে এক দেড় ফুট নিচে ১৩ ইঞ্চি পাকা শিষ ঝুলছে। ঝড় বৃষ্টিতে এ ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। গাছ শক্ত হওয়ায় ঝড়ে দমে না।’

মিনারুল বলেন, ২০-২২ দিনের মধ্যে বীজতলা থেকে চারা তুলে খেতে ২-৩টি করে চারা রোপণ করতে হয়। বোরো চাষে ফাতেমা ধানের ফলন আসতে চার মাস মতো লাগে। ধান প্রায় পেকে গেছে। ঈদের পর কাটব।’

এ কৃষক বলেন, ‘আমার আশপাশের অনেকে ৫-৭ বার করে খেতে সার দিয়েছেন। আমি দিছি মাত্র ৩ বার। সাধারণ ধানের চেয়ে কম সারে এ জাতের চাষ ভালো হয়। এ ছাড়া ধানে রোগ বালাইও কম।’

আলোড়ন সৃষ্টি করা মিনারুল বলেন, ‘আমি নিজে ৩০০ টাকা করে ধানের বীজ কিনেছি। কৃষকেরা এ বীজ নিতে চাইলে কম দামে দিয়ে দেব। আমার উদ্দেশ, কৃষকেরা অল্প খরচে বেশি ফলন পাক।’

মামুদকাটি গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘শেখপাড়ার ওই কৃষকের ধানের বাইল (শিষ) দেখে তাজ্জব মেরে গিছি। এবার মাঠে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে রকেট জাতের মিনিকেট ধানের। সে ধানের একটা শিষ গুনে ৩২৫টি ধান পাইছি। আর মিনারুলের খেতের একটা শিষ গুনে ধান পাইছি ৮০০ টি। এত লম্বা ধানের শিষ আগে দেখিনি। যত কৃষক এ শিষ দেখেছেন, সবাই অবাক হয়েছেন। আগামী বছর এ জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করব।’ 
তবে মিনারুলের এ ধানের চাষে খুশি নন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান।

আবুল হাসান বলেন, এ ‘ধান সরকার অনুমোদিত না। আমরা কৃষকদের এ জাতের চাষে বাধা দিই। এবার হয়তো ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। পরের বার যখন ফলন খারাপ হবে, তখন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত