ফল আমদানিতে বাধা পেয়ে নিজেই উদ্যোক্তা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৪৮

পুরান ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক হাজি সিরাজুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ফল আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস আমদানিকারক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ডলারসংকট কাটাতে সরকার বিদেশি ফল আমদানিতে কড়াকড়ি করায় তা শাপে বর হয়েছে তাঁর জন্য। কারণ আমদানিতে বাধা পেয়ে তিনি নিজেই এখন উদ্যোক্তা হয়েছেন।

সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি আপেলের দাম ৭০ সেন্ট থেকে মাত্র ১ ডলার। আর এই ফল আমদানি করতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৬৫ টাকা। এক কেজি নাশপাতিতে ৬৫-৭০ টাকা আর আঙুরে ৮০-৯০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। আগে যে ফল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল তা বেড়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদেশি ফল আমদানি কম হওয়ায় দাম অনেকটা বেড়েছে। সে সঙ্গে মানুষও কম খাচ্ছে। এসব কারণে তিনি নিজেই ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমি দেশকে কী দিলাম। ব্যবসা করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছি। সেখানে ফল চাষ দেখে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ হয়েছে। সবার মনে এই আবেগ থাকলে দেশ একসময় অবশ্যই উন্নত বিশ্বে রূপান্তর হবে।’

ঠাকুরগাঁওয়ে নিজের বাগানে উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলামসিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফল চাষ হলে তা কেন বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তিনি এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্বল্পমূল্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় জমি খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনেন। সেখানে এখন উন্নতজাতের লিচু, আম, স্ট্রবেরি ও ড্রাগন চাষ হচ্ছে। তাঁর বাগানের উৎপাদিত ফলমূল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সামনে তিনি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবেন বলে আশা করছেন। ফলগাছের নিচে আলু, সবজির আবাদও করা হচ্ছে। এখন তাঁর বাগানে দুই শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি ফলমূল, শাকসবজি, আলু ও বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য ১০টি কোল্ডস্টোরেজ গড়ে তুলেছেন। এখন তাঁর মনে হচ্ছে, আমদানি কমার ফলে, দেশীয় ফল উৎপাদন করতে পারছেন, তাতে মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। আবার এ থেকে মানুষও পুষ্টিকর খাবারের জোগান পাচ্ছে। তিনি উন্নতমানের স্ট্রবেরি আবাদের জন্য এরই মধ্যে নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তারা আবাদ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে দেখাশোনা করবে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকার দেশে বাংলাদেশি ফলের চাহিদা রয়েছে। আমরা ব্যবসায়ী। যেখানে ব্যবসা ভালো হবে সেখানেই ব্যবসা করবে। দেশি ফলের ভালো ব্যবসা হচ্ছে। তাই শতভাগ নিরাপদ ফল উৎপাদন করেই তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’

তিনি জানান, আমদানি কড়াকড়ি আমার চোখ খুলে দিয়েছে। দেশি ফল যেমন সাশ্রয়ী, তেমন সহজলভ্য। বিদেশি ফলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে দেশি ফল অনেক সস্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত