‘এই উত্তাল জোয়ারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০৮: ৩৭

৫ মার্চ ছিল একাত্তরের উত্তাল মার্চের পঞ্চম দিন আর স্বাধীনতাকামী জাগ্রত বাঙালির লাগাতার হরতাল-আন্দোলনের চতুর্থ দিন। ঢাকাসহ সারা দেশে পূর্ণ হরতাল, স্বাধিকারকামী জনতার বিক্ষুব্ধ মিছিল, গণজমায়েত ও শপথের মধ্য দিয়ে বাংলার মুক্তি আন্দোলনের দিনটি অতিবাহিত হয়। বিভিন্ন স্থানে ক্ষুব্ধ জনতা পাকিস্তানি পতাকা ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবিতে আগুন দেয়।

সকালে সেনাবাহিনীর গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় ৪ শ্রমিক নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এতে ঢাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

ছাত্রলীগের উদ্যোগে ছাত্র-জনতা টঙ্গীর শ্রমিকদের লাশ নিয়ে ঢাকায় মিছিল বের করেন। গুলিতে চট্টগ্রামে ৩ জন নিহত হন। ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ১৪ জন আহত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রামে আন্দোলনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮। গুলিতে খুলনায় দুজন ও রাজশাহীতে একজন নিহত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানান, কেবল ঢাকা ও আশপাশেই সেনাবাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২০০ জন আহত হয়েছেন। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

পরদিন ৬ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘বাংলার বুকে এ গণহত্যা বন্ধ কর!’ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্য এটি। তাঁর তথ্যানুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মিলিটারির গুলিতে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই নরহত্যা বন্ধ করার দাবি জানান তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘নির্বিচারে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

ছাত্রলীগের শোক মিছিলের খবর স্থান পায় ইত্তেফাকের প্রথম পাতায়। পূর্বাঞ্চলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের জন্য ৫ মার্চ লাহোরে প্রধান প্রধান মসজিদেও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মার্চের ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ‘লাহোরে বিশেষ প্রার্থনা’ শিরোনামে উঠে এসেছে সেই খবর।

ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রছাত্রীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া) উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রজমায়েত। পাকিস্তান লেখক সংঘ গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে মিছিল বের করে। বিকেলে কবি, সাহিত্যিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাজপথে মিছিল করেন। এ-সংক্রান্ত খবর পরদিন দৈনিক পাকিস্তান প্রকাশ করে ‘আমাদের লেখনী হবে সংগ্রামের বুলেট ও বেয়োনেট’ শিরোনামে। ‘এই উত্তাল জোয়ারে’ শিরোনামে ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়, ঢাকায় ৫ মার্চ বিকেলে নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মিছিল করে রাজপথে নেমে আসেন।

রাতে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানানোর কথা সরাসরি অস্বীকার করেন বঙ্গবন্ধু। পরদিন দৈনিক পাকিস্তানে খবরটি ছাপা হয় ‘মার্কিন সাহায্য চাইনি’ শিরোনামে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত