বাষ্পে উড়ে যায় মিষ্টি গন্ধ

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৪
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪৫

কুয়াশামাখা ভোর। এক হাতে হাঁড়ি নিয়ে ৪০ ফুট লম্বা খেজুরগাছে তরতর করে উঠে গেলেন আবদুল হান্নান। হাঁড়িভর্তি রস নামিয়ে এনে সাইকেলে লাগানো জারকিনে ঢেলে দিলেন।

হান্নানের সঙ্গে দেখা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামে। সকাল ৭টায়। একটু কথা বলতে চাইলে হান্নান বললেন, ‘এখুন কথা বুলার সুমায় নাই যে ভাই। আরও ২০টা গাছের রস নামান্যা বাকি।’ খেজুরের রস নিয়ে রোজ ভোরে হান্নানের খুব ব্যস্ততা। রস নামানো, সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানানো। খেজুরের রস নিয়ে খাজুরে আলাপ করার সময় কোথায়!

হান্নানের মতো রাজশাহীর পুঠিয়া, চারঘাট আর বাঘা উপজেলার অসংখ্য গাছির ব্যস্ততা এখন খেজুরের রস ও গুড় নিয়ে। ভোরের আলো ফোটার আগেই মাঘের শীত গায়ে মেখে তাঁরা বেরিয়ে পড়ছেন সাইকেল নিয়ে। একটার পর একটা গাছের রস নামিয়ে ফিরছেন বাড়ি। তারপর রস জ্বাল দিয়ে শুরু হচ্ছে গুড় বানানোর কাজ। এ কাজটা করে দিচ্ছেন বাড়ির নারীরা। পুরুষেরা আবার সেই গুড় বিক্রি করে আসছেন হাটে। খেজুরের গুড় বিক্রির সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাঁরা অনলাইনে বিক্রি করছেন খাঁটি খেজুরের গুড়।

তাওয়ার ওপর পরিষ্কার কাপড় ধরে জারকিন থেকে খেজুরের রস ঢেলে দেওয়া হয়। সেই রস পড়ে তাওয়ায়। জ্বাল দেওয়ার আগে এভাবেই রস ছেঁকে নেওয়া হয়। সকালে গাছিদের বাড়িতে গেলে টাটকা খেজুরের রস আর মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অতিথিদের জন্য খেজুরের জ্বাল দেওয়া রস দিয়ে রান্না হয় পায়েস। খাঁটি খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হয় নানা রকম শীতের পিঠা।

গাছিদের সবারই নিজেদের খেজুরের গাছ নেই। গাছের মালিকদের কাছ থেকে তাঁরা এক মৌসুমের জন্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় গাছ ইজারা নেন। তারপর গাছ কেটে প্রস্তুত করেন শীতের শুরুতেই। রস নামার সময় হলে গাছে গাছে নলির সঙ্গে বেঁধে দেন মাটির হাঁড়ি। গাছিরা এসব হাঁড়িকে বলেন ‘কোর’। টলটলে রস পেতে কোরের ভেতরে মাখিয়ে দেন কিছুটা চুন। ভোরে রস নামাতে গাছিরা সাইকেলে বাঁধা জারকিন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাড়িতে রস আনার পর কাপড়ে ছেঁকে তা দেওয়া হয় চুলোয় বসানো তাওয়ায়।

তারপর বাড়ির নারীরা জ্বাল দিতে থাকেন চুলোয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বাষ্প হয়ে উড়তে থাকে খেজুরের রসের মিষ্টি গন্ধ। জ্বাল দিতে দিতে একটা সময় তাওয়ায় থাকে শুধু নালি গুড়। অনেকে এই নালি গুড়ই বয়ামে ভরে বিক্রি করেন। কেউ কেউ আবার এই নালি গুড় ফর্মায় বসিয়ে করেন খেজুর গুড়ের পাটালি। পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘার বাড়ির উঠোনে উঠোনে চলে এমন কর্মযজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত