সেতু দিয়ে গড়া বন্ধন

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ০৯: ৪৭
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ০৯: ৫৪

গো পা ল গ ঞ্জে র
জয়া আহসান
অভিনেত্রী

দৃঢ় সংকল্পের উদাহরণ এই সেতু

গোপালগঞ্জে দাদার বাড়ি যাওয়ার সময় পাড়ি দিতে হতো পদ্মা নদী। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে পদ্মা পার হওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। স্মৃতি থেকে অন্য সবকিছু মুছে গেলেও পদ্মাকে মুছে দেয় সাধ্য কার! তার সে কী বিশালতা! যেন এক সাগর। ছোটবেলায় সাগর দেখিনি, মনে হতো সাগর পাড়ি দিচ্ছি।

বাংলাদেশে সব নদীর রানি পদ্মা। ফেরিতে আমরা পদ্মা পাড়ি দিতাম। স্পিডবোটেও গিয়েছি। পদ্মার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরার আনন্দ। দীর্ঘ পথে পদ্মা মর্মে মর্মে বুঝিয়ে দেয় ওর অস্তিত্ব। বুঝিয়ে দেয়, সে আছে—সৌন্দর্যে, বিশালত্বে, আবেগে, বাংলাদেশের মূল ধমনি হয়ে আমাদের জীবনযাত্রায়। বাংলাদেশের গহন থেকে উঠে এসে পদ্মা তার তীব্র স্রোত নিয়ে ঢুকে গেছে আমাদের জীবনের গভীরে। সেই পদ্মা নদীর দুই পার এবার যুক্ত হলো সেতুবন্ধে। সেতুটি দক্ষিণবঙ্গের বিপুল জনপদকে বিচ্ছিন্নতা থেকে উদ্ধারের এক পরম পথ। পদ্মা সেতু রচনায় যে অনমনীয় নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থির প্রতিজ্ঞায় বীরের মতো সেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। একদিন যখন তিনি থাকবেন না, এই সেতু থাকবে তাঁর দৃঢ় সংকল্পের উদাহরণ হয়ে, বাংলাদেশের অসম্ভব প্রাণশক্তির এক নিদর্শন হয়ে।

এই সেতু গড়ে ওঠার পথে পদে পদে ছিল বাধা। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু সম্ভবত তাঁর শ্রেষ্ঠতম অবদান, এই বঙ্গবাসীর জন্য। মানুষ নশ্বর, কিন্তু এই সেতু তাঁর স্মৃতি জাগিয়ে রাখবে। পদ্মা সেতু বাঙালির ক্ষয় হতে থাকা সাহস আবার আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিল। পদ্মা সেতু ভবিষ্যতে আমাদের কী দেবে, সেটা পরের কথা। আপাতত আমাদের হারিয়ে যাওয়া সাহস ফিরিয়ে দেওয়াই এর সবচেয়ে বড় কীর্তি। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় সংকল্পের এক অমোঘ চিহ্ন।

 ব র গু না র
মীর সাব্বির
অভিনেতা

দক্ষিণবঙ্গের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার

পদ্মা সেতু আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ। দক্ষিণবঙ্গের নিচু এক এলাকা বরগুনায় আমার বাড়ি। সেখান থেকে আমার বাপ-দাদারা হয়তো দেড়-দুই দিন সময় নিয়েও ঢাকা এসেছেন। এখন সকালে রওনা দিলে হয়তো কাজ শেষ করে রাতে আবার বাড়ি ফিরতে পারবেন। আমার বাপ-দাদারা তো ঢাকা আসতেই চাইতেন না। মনে হতো, এত দূর ঢাকা! এত ঝামেলার পথ!

আমার দাদা ধানমন্ডিতে জমি কিনতে এসেছিলেন। তখন নাকি এখানে ধানি জমি। উনি বললেন, এই জমি তো আমাদের এলাকাতেই আছে, সেখানে কিনব। আমি মনে করি, সেই বরগুনা এখন এত কাছে হয়ে গেছে যে আমার ছেলেরা হয়তো দাদার এলাকায় জমি কিনবে। ওরা তো ঢাকায় বড় হয়েছে। কিন্তু ওই যে যাওয়ার ঝামেলা, সেটা থাকবে না। গাড়ি নিয়ে সহজেই চলে যেতে পারবে।

একবার আমার ছোট খালাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরিঘাটে আটকে পড়লাম। কী যে অসহায় লাগছিল সেদিন! আমাদের আশপাশের এমন কত ঘটনাই ঘটে শুনি। এখন চিকিৎসার জন্য সহজেই ঢাকা আসা যাবে। আবার চিকিৎসকেরাও দক্ষিণবঙ্গে যেতে অনাগ্রহী হবেন না। দক্ষিণবঙ্গের চিকিৎসা, ব্যবসা—সর্বক্ষেত্রে অনেক ধাপ এগিয়ে নিল এই সেতু। প্রধানমন্ত্রী যেন দক্ষিণবঙ্গের সব দুঃখ এক নিমেষে পদ্মা সেতু দিয়ে দূর করে দিলেন।

 খু ল না র
পিয়া জান্নাতুল
মডেল ও অভিনেত্রী

পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বড় এক পাওয়া। আমাদের মতো দেশে এত বড় একটা প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন এবং সফলভাবে এত অল্প সময়ে সম্পন্ন করেছেন, এটা খুবই প্রশংসনীয়। অনেকে ভেবেছিলেন এ রকম বড় একটা প্রজেক্ট বিদেশি সহায়তা ছাড়া করতে পারব না আমরা। এখন আমরা বলতে পারছি, আমাদের টাকায় সেতুটা হয়েছে। হ্যাঁ, একটা কথা বলতেই হয়, টাকা থাকলেই সব হয় না। এক্সিকিউট করার মানসিকতা লাগে। সাহস লাগে। কনফিডেনস লাগে। শত বাধার মুখেও নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকতে সবাই পারেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেটা করে দেখিয়েছে। হ্যাটস অব টু দেম।

আমাদের বাবা-মায়েরা বলতেন, যদি আমাদের একটা সেতু হয়ে যেত তাহলে তো আমাদের আর কষ্ট থাকত না। আমাদের বাবা-মায়েরাও পেল কাঙ্ক্ষিত এক সেতু। আমাদের দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমি এখনো পদ্মা সেতু দেখতে পারিনি। টেলিভিশন বা পত্রিকায় যা দেখেছি, আমি উন্মুখ হয়ে আছি কবে দেখতে যাব। পদ্মা সেতু আমাদের সবচেয়ে বড় একটা স্থাপনা হয়ে গেল। বাণিজ্যিকভাবেও যদি দেখি, ওই দিকে মোংলা পোর্ট আছে। সব মিলিয়ে এটা একটা ল্যান্ডমার্ক। স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু যেন আমরা সুন্দরভাবে রাখতে পারি, সঠিক ব্যবহার করতে পারি, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত