শব্দদূষণ মানমাত্রার দ্বিগুণ

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ৩৫
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৫৬

রাজশাহী শহরের দুটি এলাকাকে ‘নীরব’ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা দুটিতে গাড়ির হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঠিকই হর্ন বাজছে নীরব এলাকায়। নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। অথচ রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগে এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি।

দুটি নীরব এলাকার একটি হলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এলাকা। আরেকটি এলাকা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং আদালতপাড়া এলাকা। গত সোমবার সকালে এলাকা দুটিতে গিয়ে দেখা গেছে, দিব্যি হর্ন বাজাচ্ছেন চালকেরা। খোদ পুলিশ-প্রশাসনের গাড়ির চালকদেরও হর্ন বাজাতে দেখা গেছে।

তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এলাকায় একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। এতে লেখা আছে, ‘আদালত এলাকা, হর্ন বাজানো নিষেধ’। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পে’র আওতায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে রামেক হাসপাতালের আশপাশের এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং তার চারদিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাও নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় রাজশাহী শহরে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, নীরব এলাকায় মানমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি শব্দ। ওই জরিপের মাধ্যমে রাজশাহী শহরের ১৫টি স্থানের বর্তমান পরিস্থিতি জানা গেছে। স্থানগুলোর প্রতিটিতেই শব্দের মাত্রা শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ নির্দেশিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে। ফলাফল অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে, দুটি নীরব এলাকার মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এলাকায় শব্দদূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ১১৯ দশমিক ৪ ডেসিবেল। আর সর্বনিম্ন ৫৪ দশমিক ৭ ডেসিবেল। দিনে, সন্ধ্যায় ও রাতে এ এলাকায় শব্দের গড় মাত্রা ১২৫ দশমিক ৫ ডেসিবেল যা মানমাত্রার দ্বিগুণের বেশি। রামেক হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ১০০ দশমিক ৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ থাকে।

ওই জরিপে প্রতিটি স্থানে ১৫ জন করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এতে অর্ধেক উত্তরদাতা শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছে। আর ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা কখনো শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগ করতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়ার আগের গত ছয় মাসে প্রায় ১১ শতাংশ ব্যক্তি কানের চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।

সোমবার সকালে রামেক হাসপাতাল এলাকায় হর্ন বাজাচ্ছিলেন হাবিবুর রহমান। এটি নীরব এলাকা জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এটা জানি না।’ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, ‘অফিসের সামনের রাস্তাটাও নীরব এলাকা। সাইনবোর্ডও লাগানো আছে। কিন্তু কখনো কি হর্ন বাজানো বন্ধ হয়েছে? হয়নি।’

নীরব এলাকায় হর্ন বাজানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার শারমিন আকতার বলেন, ‘নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে ট্রাফিক আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে আমি আসার পর এ ধরনের কোনো মামলা দেখিনি। যদিও অন্যান্য ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে নিয়মিতই মামলা করা হচ্ছে। জরিমানা আদায় হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কয়দিন আগেও একটা কর্মশালায় এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আপাতত নেই। তিনি আসার পর আমরা আবার আলোচনা করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত