পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া হলো না সাজিদের

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
Thumbnail image

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বিলকুকরী গ্রামের বাসিন্দা বিমানবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) জিয়াউল হকের ছেলে ইকরামুল হক সাজিদ। কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুরের ১০ নম্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

সাজিদের মাথার পেছনে গুলি লেগে ডান চোখ দিয়ে বের হয়ে যায়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। গত বুধবার হেরে গেছেন সাজিদ। রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের বাড়ি বিলকুকরীতে সাজিদের লাশ দাফন করা হয়েছে। এর আগে বাঐজান স্কুল মাঠে জানাজা হয়। এতে ডাক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়াদুদ তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ অংশ নেন। 

পরে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নিহতের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকে সাজিদদের এই আত্মত্যাগের কারণে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। তাঁর আত্মত্যাগ দেশের মানুষ, ছাত্রসমাজ কোনো দিন ভুলবে না। খুনিদের বিচার অবশ্যই করা হবে এই বাংলার মাটিতে। অবশ্যই তাদের কঠোরতম শাস্তির আওতায় আনবই।’

নিহত সাজিদের বাবা জিয়াউল হক বিমানবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরের পর ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাজিদ বলেছিল, কয়েক মাস পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটা হয়ে যাবে। তারপর চাকরি হলেই আমাকে আর কিছু করতে দেবে না। বাবাকে বিশ্রাম দিয়ে পুরো সংসারের দায়িত্ব নেবে। সেই সাজিদ চিরবিশ্রামে চলে গেল।’

জিয়াউল হক আরও বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি সাজিদ ঢাকায় টিউশনি করত। গ্রামের সব আত্মীয়স্বজনকে একদিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে চেয়েছিল। ওর কথামতো স্বজনদের তালিকাও করেছিলাম; কিন্তু আর খাওয়ানো হলো না।’

সাজিদের মামা আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাজিদ ঢাকায় বেড়ে উঠলেও গ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। বাড়িতে এলেই সবার সঙ্গে সময় কাটাত তাঁর। সর্বশেষ মাসখানেক আগে বাড়িতে এসেছিল সাজিদ।

সাজিদের মা লিপি বেগম আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমার সাজিদের নাম মিশা গেল গো..., আমি দুনিয়ায় কেমনে বাঁচমু গো...। আমারে আর কেউ মা বইলা ডাকব না গো...। মাথায় হাত বুলাইয়া আদর করব না গো...।’

সাজিদের বোন ফারজানা হক জানান, শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাজিদ সক্রিয় ছিলেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিন ঢাকার কাফরুলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা বাধা দেন; কিন্তু সাজিদ কথা না শুনে আন্দোলনে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত