হিল্লোল দত্ত
সত্তরের দশক মুক্তির দশক বলে আন্দোলনের মন্ত্র গেঁথেছিল নকশালেরা। বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তখন উত্তাল। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যাঙ্গনে তখন তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্ব শেষ। উঠে আসছেন তরুণ লেখকেরা। এর কিছু আগে, ১৯৬৭ সালে, একজন নাট্যকার, যিনি উত্তরবঙ্গ থেকে উঠে এসেছেন তিস্তার জলে সাঁতরে, তিনি খেয়ালবশে দেশ পত্রিকায় একটা গল্প পাঠিয়ে দিলেন। সেই গল্প ছাপানোর পর বন্ধুদের নিয়ে তিনি কফি হাউসে আরামসে কদিন কফি আর খাবার খেয়ে টাকাটা উড়িয়ে দিলেন। বন্ধুদের চাপে পড়ে তিনি আরও গল্প লিখে পাঠাতে থাকলেন পত্রিকায়। এভাবেই লেখক হয়ে গেলেন হবু নাট্যকার সমরেশ মজুমদার।
এরপর ১৯৭৫ সালে দেশ পত্রিকায় উপন্যাস বেরোল। তারপর ধারাবাহিক উপন্যাস শুরু হলো। ধারাবাহিক উপন্যাস লেখার জন্য দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের প্রস্তাব শুনেই আঁতকে উঠলেন তিনি। কিন্তু পরে লিখলেন এবং জয় করলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সমরেশ মজুমদার বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বেশ কয়েক বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি তিনি অক্ষরও সব ভুলে যান। এরপর ধীরে ধীরে অ, আ শিখে আবারও ফেরেন সাহিত্যজগতে। এ রকম দ্বিতীয়বার জন্মানো লেখক বাংলা ভাষায় তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও সম্ভবত বিরল। কদিন ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ছিলেন।
দুদিন আগেও তাঁর মেয়ে দোয়েল মজুমদারের বরাতে শোনা গিয়েছিল, তিনি সেরে উঠছেন। কিন্তু আজ অচিন পাখি উড়াল দিল আট কুঠুরি নয় দরজা ফেলে কালপুরুষের পানে।
সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন উপন্যাসের দীপাবলি এখনো অনেক নারীর জীবনে সংগ্রামের আদর্শ। আরও রোমান্টিক যাঁরা, তাঁরা প্রেরণা নিয়েছেন অনিমেষ-মাধবীলতার সম্পর্ক থেকে। আধুনিকতম নারীদেরও তিনি তুলে এনেছেন তাঁর উপন্যাসে, যাঁরা আদর্শমণ্ডিত, অথচ গোঁড়া নন, উদার ও সফল।
সমরেশ কিশোরদের জন্য গোয়েন্দা অর্জুন চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, যে নিজেকে বলত সত্যসন্ধানী। রহস্যের সন্ধানে সে নানা জায়গায় ছুটে বেরিয়েছে, এমনকি পাড়ি দিয়েছে কালান্তরেও। শারদীয় আনন্দমেলায় অর্জুনের রহস্যোপন্যাস কিশোরদের পছন্দের ছিল দুই বাংলাতেই। কিছুটা ফেলুদার আদলে গড়া অর্জুনের গল্পে বিষ্টুবাবুর দেখা মেলে, যে অনেকটা জটায়ুর মতন। আবার মজার চরিত্র মেজরও রয়েছে তাতে। বাংলা ভাষায় অনন্য কিছু থ্রিলারও লিখেছেন সমরেশ, যা রীতিমতো বিশ্বসাহিত্যে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
কাহিনি ও চরিত্রের সন্ধানে সমরেশ নানান পথে ঘুরে বেরিয়েছেন। অশোকের ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ ভারতবর্ষ, চোর থেকে গণিকা, নকশাল আন্দোলনকারী থেকে মার্কিনপ্রবাসী সিলেটি, প্রথম চা-বাগানের শ্রমিক থেকে সাহসী নারী লেখক, প্রত্যন্ত অঞ্চলের খ্রিষ্টান পাদরি থেকে উত্তর কলকাতার বনেদি অবক্ষয়ী বাবু—এমনই কত কিছু আর কতজনই যে তাঁর লেখায় ঠাঁই করে নিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। দেড় শর বেশি বই লিখেছেন তিনি, যেগুলোর প্রায় প্রতিটিই আলাদা। তাঁর সৃজিত বিশ্ব বিস্ময়কর বৈকি বৈচিত্র্যময়তায়। তাঁর বেশ কিছু লেখা রূপ নিয়েছে টিভি সিরিজ ও চলচ্চিত্রে। তাঁর সৃষ্ট নকশাল আন্দোলন এবং চা-বাগান নিয়ে সমালোচনা হয়েছে যে তিনি পুরোপুরি সত্যি তুলে ধরেননি, কিন্তু তিনি ফিকশনের কল্পনাতেই আস্থাশীল ছিলেন।
বাংলাদেশে তাঁর বন্ধু ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, যাঁকে তিনি ভালোবাসতেন খুব। হুমায়ূনকে পশ্চিমবঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি নিঃসংকোচ ও অগ্রগামী ছিলেন। দেশ পত্রিকায় লিখেছেন তাঁকে নিয়ে, বারবার বলেছেন নানা জায়গায় তাঁর কথা, দেশ-এ হুমায়ূনের উপন্যাস ছাপানোর ব্যাপারেও তিনি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তসলিমা নাসরিনের লেখালেখি নিয়েও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাঁর চরিত্রের আদলে একটি নারী চরিত্রও সৃষ্টি করেছেন একটি উপন্যাসে। কিন্তু পরবর্তীকালে তসলিমার ‘ক’ নামের আত্মজীবনী নিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের সাহিত্যে আরবি-ফারসি শব্দের প্রাবল্য নিয়ে অনুযোগ ছিল তাঁর। তিনি মনে করতেন, ১৯৭১-এর পর এই প্রবণতা বেড়েছে। বাংলা ভাষার প্রমিতকরণের ব্যাপারেও আগ্রহী ছিলেন তিনি। তবে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের চেয়ে বাংলাদেশের পাঠকদের তিনি ধর্মীয়ভাবে অনেক উদার ভাবতেন এবং প্রায়শই বলতেন, বাংলাদেশই টিকিয়ে রাখবে বাংলা সাহিত্য।
বাংলা সাহিত্যজগতে তিনি অমর হয়ে রইবেন কি না, সেই জবাব দেবে মহাকাল এবং পাঠকসমাজ। কিন্তু আজ (গতকাল) রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রয়াণের দিনে তিনি অমর হয়ে রইলেন এবং থাকবেনও ভবিষ্যতে।
সত্তরের দশক মুক্তির দশক বলে আন্দোলনের মন্ত্র গেঁথেছিল নকশালেরা। বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তখন উত্তাল। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যাঙ্গনে তখন তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্ব শেষ। উঠে আসছেন তরুণ লেখকেরা। এর কিছু আগে, ১৯৬৭ সালে, একজন নাট্যকার, যিনি উত্তরবঙ্গ থেকে উঠে এসেছেন তিস্তার জলে সাঁতরে, তিনি খেয়ালবশে দেশ পত্রিকায় একটা গল্প পাঠিয়ে দিলেন। সেই গল্প ছাপানোর পর বন্ধুদের নিয়ে তিনি কফি হাউসে আরামসে কদিন কফি আর খাবার খেয়ে টাকাটা উড়িয়ে দিলেন। বন্ধুদের চাপে পড়ে তিনি আরও গল্প লিখে পাঠাতে থাকলেন পত্রিকায়। এভাবেই লেখক হয়ে গেলেন হবু নাট্যকার সমরেশ মজুমদার।
এরপর ১৯৭৫ সালে দেশ পত্রিকায় উপন্যাস বেরোল। তারপর ধারাবাহিক উপন্যাস শুরু হলো। ধারাবাহিক উপন্যাস লেখার জন্য দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের প্রস্তাব শুনেই আঁতকে উঠলেন তিনি। কিন্তু পরে লিখলেন এবং জয় করলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সমরেশ মজুমদার বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বেশ কয়েক বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি তিনি অক্ষরও সব ভুলে যান। এরপর ধীরে ধীরে অ, আ শিখে আবারও ফেরেন সাহিত্যজগতে। এ রকম দ্বিতীয়বার জন্মানো লেখক বাংলা ভাষায় তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও সম্ভবত বিরল। কদিন ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ছিলেন।
দুদিন আগেও তাঁর মেয়ে দোয়েল মজুমদারের বরাতে শোনা গিয়েছিল, তিনি সেরে উঠছেন। কিন্তু আজ অচিন পাখি উড়াল দিল আট কুঠুরি নয় দরজা ফেলে কালপুরুষের পানে।
সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন উপন্যাসের দীপাবলি এখনো অনেক নারীর জীবনে সংগ্রামের আদর্শ। আরও রোমান্টিক যাঁরা, তাঁরা প্রেরণা নিয়েছেন অনিমেষ-মাধবীলতার সম্পর্ক থেকে। আধুনিকতম নারীদেরও তিনি তুলে এনেছেন তাঁর উপন্যাসে, যাঁরা আদর্শমণ্ডিত, অথচ গোঁড়া নন, উদার ও সফল।
সমরেশ কিশোরদের জন্য গোয়েন্দা অর্জুন চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, যে নিজেকে বলত সত্যসন্ধানী। রহস্যের সন্ধানে সে নানা জায়গায় ছুটে বেরিয়েছে, এমনকি পাড়ি দিয়েছে কালান্তরেও। শারদীয় আনন্দমেলায় অর্জুনের রহস্যোপন্যাস কিশোরদের পছন্দের ছিল দুই বাংলাতেই। কিছুটা ফেলুদার আদলে গড়া অর্জুনের গল্পে বিষ্টুবাবুর দেখা মেলে, যে অনেকটা জটায়ুর মতন। আবার মজার চরিত্র মেজরও রয়েছে তাতে। বাংলা ভাষায় অনন্য কিছু থ্রিলারও লিখেছেন সমরেশ, যা রীতিমতো বিশ্বসাহিত্যে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
কাহিনি ও চরিত্রের সন্ধানে সমরেশ নানান পথে ঘুরে বেরিয়েছেন। অশোকের ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ ভারতবর্ষ, চোর থেকে গণিকা, নকশাল আন্দোলনকারী থেকে মার্কিনপ্রবাসী সিলেটি, প্রথম চা-বাগানের শ্রমিক থেকে সাহসী নারী লেখক, প্রত্যন্ত অঞ্চলের খ্রিষ্টান পাদরি থেকে উত্তর কলকাতার বনেদি অবক্ষয়ী বাবু—এমনই কত কিছু আর কতজনই যে তাঁর লেখায় ঠাঁই করে নিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। দেড় শর বেশি বই লিখেছেন তিনি, যেগুলোর প্রায় প্রতিটিই আলাদা। তাঁর সৃজিত বিশ্ব বিস্ময়কর বৈকি বৈচিত্র্যময়তায়। তাঁর বেশ কিছু লেখা রূপ নিয়েছে টিভি সিরিজ ও চলচ্চিত্রে। তাঁর সৃষ্ট নকশাল আন্দোলন এবং চা-বাগান নিয়ে সমালোচনা হয়েছে যে তিনি পুরোপুরি সত্যি তুলে ধরেননি, কিন্তু তিনি ফিকশনের কল্পনাতেই আস্থাশীল ছিলেন।
বাংলাদেশে তাঁর বন্ধু ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, যাঁকে তিনি ভালোবাসতেন খুব। হুমায়ূনকে পশ্চিমবঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি নিঃসংকোচ ও অগ্রগামী ছিলেন। দেশ পত্রিকায় লিখেছেন তাঁকে নিয়ে, বারবার বলেছেন নানা জায়গায় তাঁর কথা, দেশ-এ হুমায়ূনের উপন্যাস ছাপানোর ব্যাপারেও তিনি প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তসলিমা নাসরিনের লেখালেখি নিয়েও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাঁর চরিত্রের আদলে একটি নারী চরিত্রও সৃষ্টি করেছেন একটি উপন্যাসে। কিন্তু পরবর্তীকালে তসলিমার ‘ক’ নামের আত্মজীবনী নিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের সাহিত্যে আরবি-ফারসি শব্দের প্রাবল্য নিয়ে অনুযোগ ছিল তাঁর। তিনি মনে করতেন, ১৯৭১-এর পর এই প্রবণতা বেড়েছে। বাংলা ভাষার প্রমিতকরণের ব্যাপারেও আগ্রহী ছিলেন তিনি। তবে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের চেয়ে বাংলাদেশের পাঠকদের তিনি ধর্মীয়ভাবে অনেক উদার ভাবতেন এবং প্রায়শই বলতেন, বাংলাদেশই টিকিয়ে রাখবে বাংলা সাহিত্য।
বাংলা সাহিত্যজগতে তিনি অমর হয়ে রইবেন কি না, সেই জবাব দেবে মহাকাল এবং পাঠকসমাজ। কিন্তু আজ (গতকাল) রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রয়াণের দিনে তিনি অমর হয়ে রইলেন এবং থাকবেনও ভবিষ্যতে।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪