চিররঞ্জন সরকার
দেশ এখন যেন আগুনে পুড়ছে। একদিকে খরা, তাপপ্রবাহ, আরেক দিকে জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দাম। শহর-নগর-গ্রামে উত্তাপ, বাজারেও উত্তাপ। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি।
সৌদি আরব, দুবাই, কাতার বা আরব দেশের শহরগুলোর তাপমাত্রা যখন ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওদিকে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা টানা কয়েক দিন ধরে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আমরা যেন নরককুণ্ডে বসবাস করছি। যদিও ঈদের দু-তিন দিন আবহাওয়া খানিকটা ঠান্ডা ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
বৈশাখে প্রকৃতি তপ্ত হয়। এটা আবহমানকাল ধরেই হচ্ছে। কিন্তু দিন দিন তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও রাজশাহীর অধিবাসীরা রীতিমতো মরুভূমির মতো লু হাওয়ার অনুভূতি পাচ্ছে। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
পৃথিবীজুড়েই উষ্ণায়নের যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল, সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। কয়েক বছর ধরেই দেশের মেগাসিটিগুলোতে উত্তাপের বহর বাড়ছিল হু হু করে। ঘরবন্দী হয়ে থাকার সুযোগ কিছু ভাগ্যবান মানুষের কপালে জুটলেও বেশির ভাগ গরিব-মধ্যবিত্ত কিংবা দিন আনি দিন খাই ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের জন্য তা আকাশ-কুসুম কল্পনা। ফলে এমন তাপের দহনে পুড়ে মরা ছাড়া যেন আমাদের জীবনে অন্য কোনো যৌতুক নেই।
প্রশ্ন হলো, কেন এই অসহনীয় তাপমাত্রা? কেন ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় রাজধানী? ইতিমধ্যে স্বীকৃত যে জলবায়ুর এই বিষম গতি বাড়ছে বিকৃত এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে উষ্ণায়নের হাত ধরে। এখন দেশের ৩ শতাংশ জায়গাজুড়ে থাকা শহর-শহরতলি এলাকায় থাকে দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ, যারা তৈরি করছে দেশের ৬৩ শতাংশ সম্পদ। ভৌগোলিক মাপের নিরিখে নগরায়ণের বিপদের উৎসস্থল মাত্র শহুরে ৩ শতাংশ এলাকায় হলেও পরিবেশ দূষিত হয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে শহরের সীমা ছাড়িয়ে জেলা-গ্রামগঞ্জ—সর্বত্র। রাজধানী ঢাকাও এমন বিষম উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। যত মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে, তত চাপ বেড়েছে তার পরিবেশের ওপর। অল্প জায়গায় অনেক মানুষের মাথা গোঁজার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। গত ২০-২৫ বছরে ঢাকা শহরে নির্মাণ ক্ষেত্রের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ১০ বছরে শহরের সবুজ অংশের পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ।
সবুজ ধ্বংস করে কিংবা জলা-জমি বুজিয়ে নির্মাণও চলছে তরতরিয়ে। বহুতল ভবনের উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে বাড়ির দেয়ালের মোট ক্ষেত্রফল বাড়ছে শহরজুড়ে। ফলে উত্তপ্ত সেই দেয়ালজুড়ে বাড়ছে তাপের প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ। এখন চুন-সুরকির দেয়াল কিংবা খড়খড়ি দেওয়া জানালার দিন শেষ। এখন কংক্রিট, স্টিল, কাচ, অ্যালুমিনিয়ামের রাজত্ব। ফলে নতুন নির্মাণের ধাক্কায় নতুন প্রযুক্তির প্রভাবে তাপের ঘনঘটা বেড়ে চলছে শহরজুড়ে। বাড়ছে বাড়ির ঘনত্ব, পিচঢালা রাস্তার পরিমাণ, কংক্রিট আর ইস্পাতে তৈরি উড়ালসেতু। পিচের কালো রাস্তা কিংবা সাদা সিমেন্ট কংক্রিট কাঠামো, এরা আমাদের বায়ুমণ্ডলের তাপ শুষে নিয়ে নিজেরা আরও বেশি তেতে ওঠে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি, তখন তেতে ওঠা নির্মাণকাঠামোর উষ্ণতা তার দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। সেই তেতে থাকা নির্মাণকাঠামোয় জমে থাকা তাপ বেরিয়ে স্বাভাবিক হতে লাগে দীর্ঘ সময়। তাই কেবল দিনের বেলায় সূর্যের তেজে দহন নয়, দহনজ্বালা বজায় থাকে রাতেও। এমন বিষম নির্মাণকাঠামো বৃদ্ধির জন্য আটকে যাচ্ছে শহরজুড়ে বায়ু চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ। অবরুদ্ধ হচ্ছে উত্তুরে কিংবা দখিনা বাতাস। উচ্চবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের ঘরে ঢুকে পড়েছে এসির বাক্স। ঘর সাময়িক ঠান্ডা হচ্ছে বটে, কিন্তু সেই মেশিনের গরম হাওয়ার ঝাপটা আছড়ে পড়ছে ঘরের বাইরে, শহরজুড়েই। শহরগুলো এখন তাপরুদ্ধ দ্বীপের মতো।
ঢাকায় যানবাহনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ অনেক কম, তাই এই শহরে ‘যান-ঘনত্ব’ অত্যন্ত বেশি। যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানদূষণ ভয়াবহ। আর এই যানদূষণে তৈরি হওয়া মিহি দানার দূষণ (পিএম-২.৫) এবং মোটা দানার দূষণ (পিএম-১০) বিষাক্ত তাপ বয়ে নিয়ে বেড়ায় শহরজুড়ে। শহর-লাগোয়া শিল্পের জন্য ঘটছে বায়ুদূষণ, যাতে বায়ুমণ্ডলে তাপের সুরক্ষাকবচ হিসেবে থাকা ওজোনস্তর ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সূর্যের আলোয় থাকা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি রক্ষাকবচ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে উত্তপ্ত করছে মাঠঘাট, গাড়ি-বাড়ি সবকিছুই।
এতকাল ছিল গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতার বিপদ। এবার তাতে যোগ হচ্ছে তাপপ্রবাহের বিপদ। নগরায়ণের নিয়ন্ত্রণ না এলে এই বিপদ এড়ানো অসম্ভব। এই অস্বাভাবিক ও অসহনীয় গরমে মানুষ যে কেবল কষ্ট পাচ্ছে তা-ই নয়, এর ফলে আরও নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যা কমছে তা হলো, মানুষের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ গত বছর ৫০টি শহরের ওপর করা একটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কমেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ঢাকায় প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ (বিভিন্ন কাজে ঢাকার বাইরে থেকে আসাসহ) তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার চেয়ে কম কাজ করতে পারছে।
বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে প্রতিবছর বাংলাদেশে ২ হাজার ১০০ কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হতে পারে। যদি গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে নষ্ট হতে পারে ৩ হাজার ১০০ কোটি শ্রমঘণ্টা। তাপমাত্রা যত বাড়বে, শ্রমঘণ্টার ক্ষতি ততই বাড়বে।
পৃথিবীর বেশির ভাগ শহরে জলাভূমি ও গাছপালা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং বেশি বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশে কিছুই হচ্ছে না। উল্টো মহানগরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
পরিবেশবিদেরা দুই দশক ধরে বলছেন, বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার করতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাভূমি, বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যথাসম্ভব গাড়ি, এসির ব্যবহার কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। নদী-খাল-বিল উদ্ধার ও খনন করতে হবে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ব্যস্ত আছেন সব মেগা প্রকল্প আর উন্নয়নের ধারাপাত শোনানো নিয়ে। দেশ তাপে পুড়ুক, দেশের মানুষ গোল্লায় যাক, তাতে কার কী?
দেশ এখন যেন আগুনে পুড়ছে। একদিকে খরা, তাপপ্রবাহ, আরেক দিকে জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দাম। শহর-নগর-গ্রামে উত্তাপ, বাজারেও উত্তাপ। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি।
সৌদি আরব, দুবাই, কাতার বা আরব দেশের শহরগুলোর তাপমাত্রা যখন ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওদিকে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা টানা কয়েক দিন ধরে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আমরা যেন নরককুণ্ডে বসবাস করছি। যদিও ঈদের দু-তিন দিন আবহাওয়া খানিকটা ঠান্ডা ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
বৈশাখে প্রকৃতি তপ্ত হয়। এটা আবহমানকাল ধরেই হচ্ছে। কিন্তু দিন দিন তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও রাজশাহীর অধিবাসীরা রীতিমতো মরুভূমির মতো লু হাওয়ার অনুভূতি পাচ্ছে। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
পৃথিবীজুড়েই উষ্ণায়নের যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল, সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। কয়েক বছর ধরেই দেশের মেগাসিটিগুলোতে উত্তাপের বহর বাড়ছিল হু হু করে। ঘরবন্দী হয়ে থাকার সুযোগ কিছু ভাগ্যবান মানুষের কপালে জুটলেও বেশির ভাগ গরিব-মধ্যবিত্ত কিংবা দিন আনি দিন খাই ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের জন্য তা আকাশ-কুসুম কল্পনা। ফলে এমন তাপের দহনে পুড়ে মরা ছাড়া যেন আমাদের জীবনে অন্য কোনো যৌতুক নেই।
প্রশ্ন হলো, কেন এই অসহনীয় তাপমাত্রা? কেন ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় রাজধানী? ইতিমধ্যে স্বীকৃত যে জলবায়ুর এই বিষম গতি বাড়ছে বিকৃত এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে উষ্ণায়নের হাত ধরে। এখন দেশের ৩ শতাংশ জায়গাজুড়ে থাকা শহর-শহরতলি এলাকায় থাকে দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ, যারা তৈরি করছে দেশের ৬৩ শতাংশ সম্পদ। ভৌগোলিক মাপের নিরিখে নগরায়ণের বিপদের উৎসস্থল মাত্র শহুরে ৩ শতাংশ এলাকায় হলেও পরিবেশ দূষিত হয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে শহরের সীমা ছাড়িয়ে জেলা-গ্রামগঞ্জ—সর্বত্র। রাজধানী ঢাকাও এমন বিষম উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। যত মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে, তত চাপ বেড়েছে তার পরিবেশের ওপর। অল্প জায়গায় অনেক মানুষের মাথা গোঁজার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। গত ২০-২৫ বছরে ঢাকা শহরে নির্মাণ ক্ষেত্রের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ১০ বছরে শহরের সবুজ অংশের পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ।
সবুজ ধ্বংস করে কিংবা জলা-জমি বুজিয়ে নির্মাণও চলছে তরতরিয়ে। বহুতল ভবনের উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে বাড়ির দেয়ালের মোট ক্ষেত্রফল বাড়ছে শহরজুড়ে। ফলে উত্তপ্ত সেই দেয়ালজুড়ে বাড়ছে তাপের প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ। এখন চুন-সুরকির দেয়াল কিংবা খড়খড়ি দেওয়া জানালার দিন শেষ। এখন কংক্রিট, স্টিল, কাচ, অ্যালুমিনিয়ামের রাজত্ব। ফলে নতুন নির্মাণের ধাক্কায় নতুন প্রযুক্তির প্রভাবে তাপের ঘনঘটা বেড়ে চলছে শহরজুড়ে। বাড়ছে বাড়ির ঘনত্ব, পিচঢালা রাস্তার পরিমাণ, কংক্রিট আর ইস্পাতে তৈরি উড়ালসেতু। পিচের কালো রাস্তা কিংবা সাদা সিমেন্ট কংক্রিট কাঠামো, এরা আমাদের বায়ুমণ্ডলের তাপ শুষে নিয়ে নিজেরা আরও বেশি তেতে ওঠে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি, তখন তেতে ওঠা নির্মাণকাঠামোর উষ্ণতা তার দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। সেই তেতে থাকা নির্মাণকাঠামোয় জমে থাকা তাপ বেরিয়ে স্বাভাবিক হতে লাগে দীর্ঘ সময়। তাই কেবল দিনের বেলায় সূর্যের তেজে দহন নয়, দহনজ্বালা বজায় থাকে রাতেও। এমন বিষম নির্মাণকাঠামো বৃদ্ধির জন্য আটকে যাচ্ছে শহরজুড়ে বায়ু চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ। অবরুদ্ধ হচ্ছে উত্তুরে কিংবা দখিনা বাতাস। উচ্চবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের ঘরে ঢুকে পড়েছে এসির বাক্স। ঘর সাময়িক ঠান্ডা হচ্ছে বটে, কিন্তু সেই মেশিনের গরম হাওয়ার ঝাপটা আছড়ে পড়ছে ঘরের বাইরে, শহরজুড়েই। শহরগুলো এখন তাপরুদ্ধ দ্বীপের মতো।
ঢাকায় যানবাহনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ অনেক কম, তাই এই শহরে ‘যান-ঘনত্ব’ অত্যন্ত বেশি। যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানদূষণ ভয়াবহ। আর এই যানদূষণে তৈরি হওয়া মিহি দানার দূষণ (পিএম-২.৫) এবং মোটা দানার দূষণ (পিএম-১০) বিষাক্ত তাপ বয়ে নিয়ে বেড়ায় শহরজুড়ে। শহর-লাগোয়া শিল্পের জন্য ঘটছে বায়ুদূষণ, যাতে বায়ুমণ্ডলে তাপের সুরক্ষাকবচ হিসেবে থাকা ওজোনস্তর ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সূর্যের আলোয় থাকা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি রক্ষাকবচ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে উত্তপ্ত করছে মাঠঘাট, গাড়ি-বাড়ি সবকিছুই।
এতকাল ছিল গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতার বিপদ। এবার তাতে যোগ হচ্ছে তাপপ্রবাহের বিপদ। নগরায়ণের নিয়ন্ত্রণ না এলে এই বিপদ এড়ানো অসম্ভব। এই অস্বাভাবিক ও অসহনীয় গরমে মানুষ যে কেবল কষ্ট পাচ্ছে তা-ই নয়, এর ফলে আরও নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যা কমছে তা হলো, মানুষের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ গত বছর ৫০টি শহরের ওপর করা একটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কমেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ঢাকায় প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ (বিভিন্ন কাজে ঢাকার বাইরে থেকে আসাসহ) তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার চেয়ে কম কাজ করতে পারছে।
বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে প্রতিবছর বাংলাদেশে ২ হাজার ১০০ কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হতে পারে। যদি গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে নষ্ট হতে পারে ৩ হাজার ১০০ কোটি শ্রমঘণ্টা। তাপমাত্রা যত বাড়বে, শ্রমঘণ্টার ক্ষতি ততই বাড়বে।
পৃথিবীর বেশির ভাগ শহরে জলাভূমি ও গাছপালা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং বেশি বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশে কিছুই হচ্ছে না। উল্টো মহানগরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
পরিবেশবিদেরা দুই দশক ধরে বলছেন, বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার করতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাভূমি, বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যথাসম্ভব গাড়ি, এসির ব্যবহার কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। নদী-খাল-বিল উদ্ধার ও খনন করতে হবে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ব্যস্ত আছেন সব মেগা প্রকল্প আর উন্নয়নের ধারাপাত শোনানো নিয়ে। দেশ তাপে পুড়ুক, দেশের মানুষ গোল্লায় যাক, তাতে কার কী?
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৭ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে