ইজাজুল হক
জাহেলি যুগে আরবে যে কয়টি বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, তার একটি ছিল ‘সুক হাবাশা’ বা ‘হাবাশা বাজার’। যৌবনের প্রথম প্রহরে মহানবী (সা.) এখানেই ব্যবসা পরিচালনা করতে এসেছিলেন। এত দিন এর অবস্থান অমীমাংসিত ছিল। সম্প্রতি সৌদি আরবের তিনটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বাজারটির প্রকৃত অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। লিখেছেন ইজাজুল হক।
হাবাশা বাজার ও মহানবী (সা.)
ইসলামের আবির্ভাবের পরে জাহেলি যুগের যে কয়টি বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, তার মধ্যে হাবাশা বাজারই সবার শেষে বিলুপ্ত হয়। ইয়েমেন থেকে মক্কা হয়ে সিরিয়া-লেবানন-ফিলিস্তিনের প্রাচীন বাণিজ্যিক সড়কেই ছিল এটির অবস্থান। এখানে শস্য, খেজুর, চামড়া, সোনা, সিসাসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা হতো। আরবের অন্যান্য বাজারের মতো এটিও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। বাণিজ্যিক কাফেলাগুলো এখানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারত। প্রতিবছর রজব মাসের প্রথম আট দিন এই বাজার বসত এবং ১৯৭ হিজরি পর্যন্ত এটি চালু ছিল।
হাবাশা বাজারের সঙ্গে মহানবী (আ.)-এর ব্যবসায়িক জীবনের স্মৃতি জড়িত। ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবুয়ত লাভের আগে বিবি খাদিজার ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে তিনি এখানে আসতেন। ঐতিহাসিক ইয়াকুত আল-হামাভি হাবাশা বাজার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘রাসুল (সা.) যখন তারুণ্যের মধ্য গগনে কিন্তু তাঁর তেমন পুঁজি ছিল না, তখন খাদিজা তাঁকে তিহামায় অবস্থিত হাবাশা বাজারে ব্যবসার কাজে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে কোরাইশের আরও এক ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেন।’ (মুজামুল বুলদান)
যেভাবে বিলুপ্ত হয়
সেকালের রীতি ছিল, প্রতিবছরই বাণিজ্য মৌসুমে বাজারের নিরাপত্তায় সৈন্য পাঠানো হতো। রীতি অনুযায়ী ১৯৭ হিজরি সনে সৈন্য পাঠানো হলে ব্যবসায়ীরা বিদ্রোহ করেন এবং সৈন্যদের হত্যা করেন। ফলে মক্কার গভর্নর উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দেন, সেখানেই তাঁদের সমাহিত করেন এবং বাজারটি বিলুপ্ত করে দেন। (আখবারু মক্কা) হাবাশা বাজারের বর্তমানে চিহ্নিত করা স্থানে প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্রের অনেক নিদর্শনই দেখা যায়। এর মধ্যে জাহেলি যুগ ও ইসলামের প্রথম যুগের বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ, নুড়ি পাথরের স্তূপ করা পৌত্তলিকদের কবর, পাথরের শিলালিপি এবং সোনা পেষার কাজে ব্যবহৃত পাথরের যন্ত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
যেভাবে আবিষ্কৃত হলো
হাবাশা বাজারের অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের বর্ণনার ভিত্তিতে একাধিক মত তৈরি হয়েছিল। মক্কা ও তিহামার একাধিক অঞ্চলে এই বাজারের অবস্থান ছিল বলে বিশ্বাস করা হলেও এত দিন কেউ সুনির্দিষ্ট করে জায়গাটির অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেননি। ২০২১ সালের অক্টোবরে কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও প্রত্নতত্ত্ব কমিশনের যৌথ উদ্যোগে এর অবস্থান চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। গবেষক দল দেড় বছর পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় এবং মক্কার উপকূলীয় শহর আরদিয়াতের কানুনা উপত্যকার দক্ষিণ দিককেই হাবাশা বাজারের স্থান বলে সিদ্ধান্ত দেয়। কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভসের সাধারণ সম্পাদক ও হাবাশা বাজারবিষয়ক সায়েন্টিফিক কমিটির প্রধান ফাহাদ আল-সামারি জানিয়েছেন, আরবের আরেক ঐতিহাসিক বাজার ওকাজের নথিপত্র, মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত একাধিক স্থান ও ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে এই অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল্লাহ আল-জাহরানি বলেছেন, ‘হাবাশা বাজার চিহ্নিত করতেই এই যৌথ কমিটি গঠিত হয়েছিল। এখানে গবেষক, ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ, নবীজীবন বিশেষজ্ঞ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ছিলেন।’
সৌদি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, হাবাশা বাজারের অবস্থান নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে প্রাচীন অর্থনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দেশটির বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে ব্যাপক অবদান রাখতে এই আবিষ্কার দারুণভাবে সাহায্য করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
সূত্র ও ছবি: আল-জাজিরা অ্যারাবিক,
আরব নিউজ
জাহেলি যুগে আরবে যে কয়টি বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, তার একটি ছিল ‘সুক হাবাশা’ বা ‘হাবাশা বাজার’। যৌবনের প্রথম প্রহরে মহানবী (সা.) এখানেই ব্যবসা পরিচালনা করতে এসেছিলেন। এত দিন এর অবস্থান অমীমাংসিত ছিল। সম্প্রতি সৌদি আরবের তিনটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বাজারটির প্রকৃত অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। লিখেছেন ইজাজুল হক।
হাবাশা বাজার ও মহানবী (সা.)
ইসলামের আবির্ভাবের পরে জাহেলি যুগের যে কয়টি বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, তার মধ্যে হাবাশা বাজারই সবার শেষে বিলুপ্ত হয়। ইয়েমেন থেকে মক্কা হয়ে সিরিয়া-লেবানন-ফিলিস্তিনের প্রাচীন বাণিজ্যিক সড়কেই ছিল এটির অবস্থান। এখানে শস্য, খেজুর, চামড়া, সোনা, সিসাসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা হতো। আরবের অন্যান্য বাজারের মতো এটিও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। বাণিজ্যিক কাফেলাগুলো এখানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারত। প্রতিবছর রজব মাসের প্রথম আট দিন এই বাজার বসত এবং ১৯৭ হিজরি পর্যন্ত এটি চালু ছিল।
হাবাশা বাজারের সঙ্গে মহানবী (আ.)-এর ব্যবসায়িক জীবনের স্মৃতি জড়িত। ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবুয়ত লাভের আগে বিবি খাদিজার ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে তিনি এখানে আসতেন। ঐতিহাসিক ইয়াকুত আল-হামাভি হাবাশা বাজার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘রাসুল (সা.) যখন তারুণ্যের মধ্য গগনে কিন্তু তাঁর তেমন পুঁজি ছিল না, তখন খাদিজা তাঁকে তিহামায় অবস্থিত হাবাশা বাজারে ব্যবসার কাজে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে কোরাইশের আরও এক ব্যক্তিকেও নিয়োগ দেন।’ (মুজামুল বুলদান)
যেভাবে বিলুপ্ত হয়
সেকালের রীতি ছিল, প্রতিবছরই বাণিজ্য মৌসুমে বাজারের নিরাপত্তায় সৈন্য পাঠানো হতো। রীতি অনুযায়ী ১৯৭ হিজরি সনে সৈন্য পাঠানো হলে ব্যবসায়ীরা বিদ্রোহ করেন এবং সৈন্যদের হত্যা করেন। ফলে মক্কার গভর্নর উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দেন, সেখানেই তাঁদের সমাহিত করেন এবং বাজারটি বিলুপ্ত করে দেন। (আখবারু মক্কা) হাবাশা বাজারের বর্তমানে চিহ্নিত করা স্থানে প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্রের অনেক নিদর্শনই দেখা যায়। এর মধ্যে জাহেলি যুগ ও ইসলামের প্রথম যুগের বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ, নুড়ি পাথরের স্তূপ করা পৌত্তলিকদের কবর, পাথরের শিলালিপি এবং সোনা পেষার কাজে ব্যবহৃত পাথরের যন্ত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
যেভাবে আবিষ্কৃত হলো
হাবাশা বাজারের অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের বর্ণনার ভিত্তিতে একাধিক মত তৈরি হয়েছিল। মক্কা ও তিহামার একাধিক অঞ্চলে এই বাজারের অবস্থান ছিল বলে বিশ্বাস করা হলেও এত দিন কেউ সুনির্দিষ্ট করে জায়গাটির অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেননি। ২০২১ সালের অক্টোবরে কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও প্রত্নতত্ত্ব কমিশনের যৌথ উদ্যোগে এর অবস্থান চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। গবেষক দল দেড় বছর পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় এবং মক্কার উপকূলীয় শহর আরদিয়াতের কানুনা উপত্যকার দক্ষিণ দিককেই হাবাশা বাজারের স্থান বলে সিদ্ধান্ত দেয়। কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভসের সাধারণ সম্পাদক ও হাবাশা বাজারবিষয়ক সায়েন্টিফিক কমিটির প্রধান ফাহাদ আল-সামারি জানিয়েছেন, আরবের আরেক ঐতিহাসিক বাজার ওকাজের নথিপত্র, মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত একাধিক স্থান ও ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে এই অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল্লাহ আল-জাহরানি বলেছেন, ‘হাবাশা বাজার চিহ্নিত করতেই এই যৌথ কমিটি গঠিত হয়েছিল। এখানে গবেষক, ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ, নবীজীবন বিশেষজ্ঞ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ছিলেন।’
সৌদি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, হাবাশা বাজারের অবস্থান নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে প্রাচীন অর্থনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দেশটির বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে ব্যাপক অবদান রাখতে এই আবিষ্কার দারুণভাবে সাহায্য করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
সূত্র ও ছবি: আল-জাজিরা অ্যারাবিক,
আরব নিউজ
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে