Ajker Patrika

অবকাশে গিয়ে ভোগান্তিতে চার লাখ পর্যটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৬
অবকাশে গিয়ে  ভোগান্তিতে চার  লাখ পর্যটক

বেড়ানোর মৌসুম শুরু, টানা তিন দিন সরকারি ছুটি আর করোনা পরিস্থিতিও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। ঘুরে আর একটু অবকাশে কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য মানুষ যে বেরিয়ে পড়বেন, তা মোটামুটি আন্দাজে ছিল। সে প্রস্তুতিও ছিল দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনস্থল কক্সবাজারে। কিন্তু অনুমানের চেয়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষ যে সেখানে গিয়ে হাজির হবেন, তা মোটেই আন্দাজ করা যায়নি। আর তাই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অবকাশ কাটাতে যাওয়া পর্যটকদের।

পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ঘিরে হোটেল-মোটেলে লাখদেড়েক পর্যটকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ পর্যটক এসেছেন বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির তিন দিনে। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। করোনা-পরবর্তী এটিই সবচেয়ে বড় পর্যটকসমাগম।

মূলত গত বুধবার বিকেল থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হন। এরই মধ্যে কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের হোটেলগুলোতে তিন দিনের কক্ষ ভাড়া শেষ হয়েছে। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী আটটি জাহাজের টিকিটও বেচাকেনা শেষ। হোটেলে কক্ষ না পেয়ে হাজার হাজার পর্যটক ভোগান্তিতে পড়েন। কেউ কেউ স্থানীয় বাসাবাড়ি, স্কুল ও সৈকতের বালিয়াড়ির চেয়ারে রাত যাপন করছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি পর্যটকেরা খাওয়া-দাওয়া নিয়েও বিপদে পড়েছেন। পর্যটকেরা অভিযোগ করেছেন, কোথাও কক্ষ খালি পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব কক্ষ খালি রয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বেড়াতে এসেছেন কলেজশিক্ষক আজিজুল হক। তিনি গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার পৌঁছেছি। কলাতলী সৈকতের পাশে হোটেল না পেয়ে শহরের ভেতরে একটি কক্ষ নিয়েছি ৫ হাজার টাকায়, যা হাজার দেড়েকের বেশি হওয়ার কথা নয়।’

ফেনীর দাগনভুঁইয়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল আলমও পরিবার নিয়ে পৌঁছেছেন গতকাল শুক্রবার দুপুরে। তিনি বলেন, ২ হাজার টাকার কক্ষ ভাড়া নিতে হয়েছে ৮ হাজার টাকায়। তাও একটি পরিবার চলে যাওয়াতে থাকার সুযোগ হয়েছে। থাকার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন খাবার নিয়ে। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের ৫০০ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে মোটামুটি দেড় লাখ পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। টানা তিন দিনের ছুটিতে আগে থেকেই বেশির ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। যেসব কক্ষ খালি ছিল, তাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, তা দুঃখজনক। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পর্যটকের চাপ বাড়লে এ ধরনের কৃত্রিম সংকট করে থাকেন।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে একসঙ্গে দুই লাখের ওপরে পর্যটক এলে থাকার জায়গা পান না।

সৈকতকর্মী বেলাল হোসেন জানান, হাজারো পর্যটক হোটেলে কক্ষ না পেয়ে সৈকতের চেয়ারে রাত যাপন করেছেন। অনেকেই স্থানীয় বাসাবাড়িতে উঠেছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা দিতে সৈকতের পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকেরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সৈকতকর্মীরা কাজ করছেন। পাশাপাশি সৈকতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত