ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেটাকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার বলছি। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, তারা জনগণের অভিপ্রায় নিয়ে নির্বাচিত সরকার। এ সরকারে যাঁরা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু সে জায়গা থেকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের যে নানা ধরনের দুঃখ-দুর্দশা, বঞ্চনা আছে, সেটা শুধু গত ১৫ বছরের নয়, সেটা ৫৩ বছর ধরে চলছে। সেই বঞ্চনা নিরসনের দায়িত্ব তাঁদের নিতে হবে। এই দায়িত্বের জায়গায় তাঁরা আরও যোগ্য হয়ে উঠবেন এবং জনগণের বঞ্চনার জায়গাটা অনুভব করে সেই জায়গাগুলোতে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
আমরা মনে করি, ব্যক্তির সততার চেয়ে সিস্টেমের পরিবর্তন করা খুব জরুরি। উপদেষ্টাদের নিজের দায়বোধ থেকে এবং গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়কে ধারণ করে কাজ করতে হবে। সেটা না হলে আমরা আসলে অনেকাংশে বিফল হব। অন্তর্বর্তী সরকার যদি এসব দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই গণ-অভ্যুত্থান আবারও ব্যর্থ হবে।
জনগণের বিপুল সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সরকারের স্থবিরতা কাটছে না কেন?
এসবের জন্য বিবিধ কারণ আছে। এ দেশের মানুষের ৫৩ বছরের বঞ্চনা আছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে যা যা করা হয়েছে তাতে নাগরিকের আত্মমর্যাদাবোধ এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এখানে নাগরিক বলতে কোনো প্রকার ধারণার আর অস্তিত্ব নেই। নাম না জানা অনেকগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। আমরা নাগরিক হিসেবে তারা কে ও কী, সেটা জানি না। এখনো সবগুলোর পরিচয় উন্মোচিত হয়নি। এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কার, তাদের কী কাজ, সেটা আমরা জানি না।
র্যাব, পুলিশ, বিজিবি—সবগুলোকে আমরা এক করে দেখছি। কিন্তু প্রত্যেক বাহিনীর তো আলাদা আলাদা দায়িত্ব আছে। তাদের আলাদা আলাদা চরিত্র আছে। সেই বাহিনীগুলো গঠন করা হয়েছে আলাদা আলাদা কাজ করার জন্য। কিন্তু গত ১৫ বছরে এসব বাহিনীর আলাদা আলাদা কাজের বৈশিষ্ট্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
আমরা চাই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জনগণের পক্ষের এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভরসার জায়গা হয়ে উঠুক। অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিরোধী মত থাকতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচল করা দরকার। এ প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কথা বিশেষভাবে বলা জরুরি। তাদের সংস্কার করতে হবে। তারাও যে গত ১৫ বছর দলীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা নিয়ে তাদের কোনো কথা ছিল না। এই জায়গাগুলো আমাদের লক্ষ করা দরকার। এই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলেই অন্তর্বর্তী সরকার মন্থর গতিতে চলছে। এসব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা উচিত। প্রথমেই এ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যদি ঠিক করা না যায়, তাহলে জরুরি যেসব বিষয়ে সংলাপ করা দরকার, সেসব করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন?
অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় দুই মাস পার করছে। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা তাদের প্রথম কাজ ছিল। যখন শেখ হাসিনা এ দেশ ছেড়ে চলে যান, সেই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়া দরকার ছিল। জনগণের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা দরকার ছিল। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো যেন না ঘটতে পারে সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল। চেষ্টাটা তাদের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগের পাঁচ দিন ছিল একটা দুর্বিষহ সময়। কিন্তু সে সময়ে সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে প্রতিরোধ করেছে। যেভাবে গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষ অর্জন করেছে, সেই স্পিরিট নিয়ে তারা ডাকাতির ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করেছে। আবার সেই স্পিরিট নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছে। আমাদের কথা হলো, জনগণ তো রাষ্ট্রকে তার ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্র বা নতুন সরকার কেন এসব নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে না? আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যোগদানের জন্য। এখন পর্যন্ত শতভাগ যোগদান সম্পন্ন হয়নি। এটা কেন হচ্ছে না, সেটা সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। যাঁরা বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত আছেন, তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে।
আপনাদের উদ্যোগ কি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাবে?
বাংলাদেশের মানুষ এখনো পূর্বের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে ট্রমাটাইজড অবস্থায় আছে। এ অবস্থার মধ্যেও তারা পরিবর্তন, সংস্কার, পুনর্গঠন এবং নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করছে। এত শহীদ এবং অসংখ্য মানুষের হতাহতের পরেই কাঙ্ক্ষিত গণ-অভ্যুত্থান আমরা পেয়েছি। আমরা মনে করি না, এত মানুষের ত্যাগের পর শুধু নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হলে এর উদ্দেশ্য সফল হবে।
বাংলাদেশের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। এই সবকিছু ঠিক করা এখন আশু কর্তব্য। বাংলাদেশের মানুষের যে নাগরিকত্ব, সার্বভৌমত্বের জায়গাগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়েছে—সেগুলো ফিরিয়ে আনা খুব জরুরি। এ কারণে আমরা মনে করছি, জাতীয় নাগরিক কমিটি এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। কিন্তু আমরা যদি এখনই নির্বাচনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করি, তাহলে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আটকে যাব, তখন আর দেশের মানুষের মনের কথা বলতে পারব না। তাই রাজনৈতিক দল হবে কি না, সেটা আপাতত বলা যাচ্ছে না।
তরুণদের নেতৃত্বের কথাও বলছি। এই তরুণ নেতৃত্ব যদি মনে করে রাজনৈতিক দলের অংশ হতে চায়, সেটা তারা হতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করছি, যেকোনো রাজনৈতিক, সামাজিক উদ্যোগের চেয়েও এ দেশের মানুষের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একটি সামষ্টিক উদ্যোগ। আর সামষ্টিক উদ্যোগের কারণে গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে। এটাকে সমুন্নত রাখা আশু কর্তব্য।
আপনাদের অ্যাজেন্ডা তো অন্য পার্টি বাস্তবায়ন করবে না। পার্টি গঠন না করলে তো গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ভূলুণ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আমরা এর আগেও দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধে একটা দেশের সব মানুষের সামষ্টিক অর্জনকে কীভাবে একটা দলীয় অর্জনে পরিণত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের একটা কমন প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার, যেখানে যে কেউ রাজনৈতিক দল ব্যতীত তার রাজনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে
দেশ ও জনগণ নিয়ে কথা এবং কাজ করতে চায়। এ রকম একটা প্ল্যাটফর্ম থাকা অতীব জরুরি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও মানুষের ট্রমা আছে। সেটা কাটানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা খুব জরুরি। জনগণের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে এবং তাদের কথা বলার জন্যই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে।
আপনাদের সংগঠনের প্রথম প্রস্তাবনায় বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।’ কীভাবে করবেন?
গণ-অভ্যুত্থানের সময় অধিকাংশ মানুষ মাঠে যে সক্রিয় ছিলেন, সেটা শুধু শেখ হাসিনাকে হটানোর ব্যাপার ছিল না। তিনি যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটার পুরোটা বিলোপ করার জন্য তাঁরা মাঠে নেমেছিলেন। আগামী দিনে যে কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য কি এ দেশের মানুষ বারবার রক্ত ঝরাবে? তারা বারবার তাদের ত্যাগ স্বীকার করে অধিকার নিশ্চিত করতে থাকবে? সেটা তো হতে পারে না।
১৫০০-এর ওপরে চলে গেছে শহীদের সংখ্যা। আর কত জন আছেন, সেটা আমরা জানি না। খুঁজে পাব কি না, সেটাও নিশ্চিত নই। এতগুলো মানুষের শহিদি মৃত্যু কখনো একজনকে হঠানোর আন্দোলন ছিল না। এ জন্য দরকার পুরো ব্যবস্থার বিলোপ। যে কারণে এত দিন বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল, সেটাকে হটানোর আন্দোলন হিসেবে এটাকে দেখতে হবে।
এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ লাগবে। যাতে করে এ দেশে এমন একটা স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয়, যেখানে রাজনৈতিক সহাবস্থান তৈরি হয় সবার মধ্যে, যিনি যে মতাদর্শেরই হোন না কেন। কারণ, আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে কখনো ক্ষমতার হস্তান্তর শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। এসব ব্যাপার আমাদের বারবার রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা শুধু একটা কেন্দ্রে ছিল না। এর বাইরে আরও আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা নাগরিক কমিটির কাজ।
আপনি ছাত্রজীবনে তেল-গ্যাস রক্ষা থেকে নানা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এখন এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলেন। এই পরিবর্তনের কারণ কী?
ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষার চেয়ে আমি সামষ্টিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিই। আমি নিজেও তা করে থাকি। কিন্তু একটা কথা না বললেই না যে, আমাদের প্রজন্ম শেখ হাসিনার শাসনামল দেখে বড় হয়েছে। আমাদের তারুণ্য, যৌবনের সময়গুলো হাসিনা রেজিমের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে নানা ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলাম, সবার চেষ্টা ছিল এ অবস্থার পরিবর্তন করা যায় কীভাবে, এ দেশে কীভাবে একটা জনমুখী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়। সেই ভাবনা থেকে কাজ করতে গিয়ে নানা সময়ে নানা বাঁক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেরাও যেমন পরিবর্তিত হয়েছি, তেমনি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়েও আমাদের চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। তাই জনমুখী আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আন্দোলন করতে হয়েছে। ছাত্রসহ জনগণের নানা অধিকারভিত্তিক আন্দোলন করতে হয়েছে। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। এসব কর্মকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। কখনো আমাদের মিছিলে অনেক কম লোক ছিল, আবার কখনো বেশি ছিল। কিন্তু এই ধারাবাহিক প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা শেখ হাসিনা রেজিমের একজন ব্যক্তিকে সরাতে পেরেছি।
এই সিস্টেমের অসংখ্য মানুষ এখনো সক্রিয় আছে। আমরা মনে করি, মানুষের ধারাবাহিক প্রতিবাদের যে যাত্রা চলমান আছে, সে যাত্রাকে সামনে আরও বহুদূর এগিয়ে নিতে হবে। এভাবে মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের যাত্রা চলমান থাকবে। এটা কোনো একক ব্যক্তির ব্যাপার না, সামষ্টিক চিন্তার ব্যাপার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেটাকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার বলছি। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, তারা জনগণের অভিপ্রায় নিয়ে নির্বাচিত সরকার। এ সরকারে যাঁরা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু সে জায়গা থেকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের যে নানা ধরনের দুঃখ-দুর্দশা, বঞ্চনা আছে, সেটা শুধু গত ১৫ বছরের নয়, সেটা ৫৩ বছর ধরে চলছে। সেই বঞ্চনা নিরসনের দায়িত্ব তাঁদের নিতে হবে। এই দায়িত্বের জায়গায় তাঁরা আরও যোগ্য হয়ে উঠবেন এবং জনগণের বঞ্চনার জায়গাটা অনুভব করে সেই জায়গাগুলোতে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
আমরা মনে করি, ব্যক্তির সততার চেয়ে সিস্টেমের পরিবর্তন করা খুব জরুরি। উপদেষ্টাদের নিজের দায়বোধ থেকে এবং গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়কে ধারণ করে কাজ করতে হবে। সেটা না হলে আমরা আসলে অনেকাংশে বিফল হব। অন্তর্বর্তী সরকার যদি এসব দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই গণ-অভ্যুত্থান আবারও ব্যর্থ হবে।
জনগণের বিপুল সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সরকারের স্থবিরতা কাটছে না কেন?
এসবের জন্য বিবিধ কারণ আছে। এ দেশের মানুষের ৫৩ বছরের বঞ্চনা আছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে যা যা করা হয়েছে তাতে নাগরিকের আত্মমর্যাদাবোধ এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এখানে নাগরিক বলতে কোনো প্রকার ধারণার আর অস্তিত্ব নেই। নাম না জানা অনেকগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। আমরা নাগরিক হিসেবে তারা কে ও কী, সেটা জানি না। এখনো সবগুলোর পরিচয় উন্মোচিত হয়নি। এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কার, তাদের কী কাজ, সেটা আমরা জানি না।
র্যাব, পুলিশ, বিজিবি—সবগুলোকে আমরা এক করে দেখছি। কিন্তু প্রত্যেক বাহিনীর তো আলাদা আলাদা দায়িত্ব আছে। তাদের আলাদা আলাদা চরিত্র আছে। সেই বাহিনীগুলো গঠন করা হয়েছে আলাদা আলাদা কাজ করার জন্য। কিন্তু গত ১৫ বছরে এসব বাহিনীর আলাদা আলাদা কাজের বৈশিষ্ট্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
আমরা চাই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জনগণের পক্ষের এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভরসার জায়গা হয়ে উঠুক। অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিরোধী মত থাকতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচল করা দরকার। এ প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কথা বিশেষভাবে বলা জরুরি। তাদের সংস্কার করতে হবে। তারাও যে গত ১৫ বছর দলীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা নিয়ে তাদের কোনো কথা ছিল না। এই জায়গাগুলো আমাদের লক্ষ করা দরকার। এই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলেই অন্তর্বর্তী সরকার মন্থর গতিতে চলছে। এসব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা উচিত। প্রথমেই এ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যদি ঠিক করা না যায়, তাহলে জরুরি যেসব বিষয়ে সংলাপ করা দরকার, সেসব করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন?
অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় দুই মাস পার করছে। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা তাদের প্রথম কাজ ছিল। যখন শেখ হাসিনা এ দেশ ছেড়ে চলে যান, সেই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়া দরকার ছিল। জনগণের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা দরকার ছিল। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো যেন না ঘটতে পারে সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল। চেষ্টাটা তাদের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগের পাঁচ দিন ছিল একটা দুর্বিষহ সময়। কিন্তু সে সময়ে সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে প্রতিরোধ করেছে। যেভাবে গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষ অর্জন করেছে, সেই স্পিরিট নিয়ে তারা ডাকাতির ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করেছে। আবার সেই স্পিরিট নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছে। আমাদের কথা হলো, জনগণ তো রাষ্ট্রকে তার ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্র বা নতুন সরকার কেন এসব নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে না? আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যোগদানের জন্য। এখন পর্যন্ত শতভাগ যোগদান সম্পন্ন হয়নি। এটা কেন হচ্ছে না, সেটা সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। যাঁরা বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত আছেন, তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে।
আপনাদের উদ্যোগ কি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাবে?
বাংলাদেশের মানুষ এখনো পূর্বের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে ট্রমাটাইজড অবস্থায় আছে। এ অবস্থার মধ্যেও তারা পরিবর্তন, সংস্কার, পুনর্গঠন এবং নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করছে। এত শহীদ এবং অসংখ্য মানুষের হতাহতের পরেই কাঙ্ক্ষিত গণ-অভ্যুত্থান আমরা পেয়েছি। আমরা মনে করি না, এত মানুষের ত্যাগের পর শুধু নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হলে এর উদ্দেশ্য সফল হবে।
বাংলাদেশের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। এই সবকিছু ঠিক করা এখন আশু কর্তব্য। বাংলাদেশের মানুষের যে নাগরিকত্ব, সার্বভৌমত্বের জায়গাগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়েছে—সেগুলো ফিরিয়ে আনা খুব জরুরি। এ কারণে আমরা মনে করছি, জাতীয় নাগরিক কমিটি এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। কিন্তু আমরা যদি এখনই নির্বাচনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করি, তাহলে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আটকে যাব, তখন আর দেশের মানুষের মনের কথা বলতে পারব না। তাই রাজনৈতিক দল হবে কি না, সেটা আপাতত বলা যাচ্ছে না।
তরুণদের নেতৃত্বের কথাও বলছি। এই তরুণ নেতৃত্ব যদি মনে করে রাজনৈতিক দলের অংশ হতে চায়, সেটা তারা হতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করছি, যেকোনো রাজনৈতিক, সামাজিক উদ্যোগের চেয়েও এ দেশের মানুষের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একটি সামষ্টিক উদ্যোগ। আর সামষ্টিক উদ্যোগের কারণে গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে। এটাকে সমুন্নত রাখা আশু কর্তব্য।
আপনাদের অ্যাজেন্ডা তো অন্য পার্টি বাস্তবায়ন করবে না। পার্টি গঠন না করলে তো গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ভূলুণ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আমরা এর আগেও দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধে একটা দেশের সব মানুষের সামষ্টিক অর্জনকে কীভাবে একটা দলীয় অর্জনে পরিণত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের একটা কমন প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার, যেখানে যে কেউ রাজনৈতিক দল ব্যতীত তার রাজনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে
দেশ ও জনগণ নিয়ে কথা এবং কাজ করতে চায়। এ রকম একটা প্ল্যাটফর্ম থাকা অতীব জরুরি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও মানুষের ট্রমা আছে। সেটা কাটানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা খুব জরুরি। জনগণের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে এবং তাদের কথা বলার জন্যই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে।
আপনাদের সংগঠনের প্রথম প্রস্তাবনায় বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।’ কীভাবে করবেন?
গণ-অভ্যুত্থানের সময় অধিকাংশ মানুষ মাঠে যে সক্রিয় ছিলেন, সেটা শুধু শেখ হাসিনাকে হটানোর ব্যাপার ছিল না। তিনি যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটার পুরোটা বিলোপ করার জন্য তাঁরা মাঠে নেমেছিলেন। আগামী দিনে যে কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য কি এ দেশের মানুষ বারবার রক্ত ঝরাবে? তারা বারবার তাদের ত্যাগ স্বীকার করে অধিকার নিশ্চিত করতে থাকবে? সেটা তো হতে পারে না।
১৫০০-এর ওপরে চলে গেছে শহীদের সংখ্যা। আর কত জন আছেন, সেটা আমরা জানি না। খুঁজে পাব কি না, সেটাও নিশ্চিত নই। এতগুলো মানুষের শহিদি মৃত্যু কখনো একজনকে হঠানোর আন্দোলন ছিল না। এ জন্য দরকার পুরো ব্যবস্থার বিলোপ। যে কারণে এত দিন বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল, সেটাকে হটানোর আন্দোলন হিসেবে এটাকে দেখতে হবে।
এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ লাগবে। যাতে করে এ দেশে এমন একটা স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয়, যেখানে রাজনৈতিক সহাবস্থান তৈরি হয় সবার মধ্যে, যিনি যে মতাদর্শেরই হোন না কেন। কারণ, আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে কখনো ক্ষমতার হস্তান্তর শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। এসব ব্যাপার আমাদের বারবার রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা শুধু একটা কেন্দ্রে ছিল না। এর বাইরে আরও আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা নাগরিক কমিটির কাজ।
আপনি ছাত্রজীবনে তেল-গ্যাস রক্ষা থেকে নানা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এখন এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলেন। এই পরিবর্তনের কারণ কী?
ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষার চেয়ে আমি সামষ্টিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিই। আমি নিজেও তা করে থাকি। কিন্তু একটা কথা না বললেই না যে, আমাদের প্রজন্ম শেখ হাসিনার শাসনামল দেখে বড় হয়েছে। আমাদের তারুণ্য, যৌবনের সময়গুলো হাসিনা রেজিমের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে নানা ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলাম, সবার চেষ্টা ছিল এ অবস্থার পরিবর্তন করা যায় কীভাবে, এ দেশে কীভাবে একটা জনমুখী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়। সেই ভাবনা থেকে কাজ করতে গিয়ে নানা সময়ে নানা বাঁক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেরাও যেমন পরিবর্তিত হয়েছি, তেমনি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়েও আমাদের চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। তাই জনমুখী আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আন্দোলন করতে হয়েছে। ছাত্রসহ জনগণের নানা অধিকারভিত্তিক আন্দোলন করতে হয়েছে। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। এসব কর্মকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। কখনো আমাদের মিছিলে অনেক কম লোক ছিল, আবার কখনো বেশি ছিল। কিন্তু এই ধারাবাহিক প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা শেখ হাসিনা রেজিমের একজন ব্যক্তিকে সরাতে পেরেছি।
এই সিস্টেমের অসংখ্য মানুষ এখনো সক্রিয় আছে। আমরা মনে করি, মানুষের ধারাবাহিক প্রতিবাদের যে যাত্রা চলমান আছে, সে যাত্রাকে সামনে আরও বহুদূর এগিয়ে নিতে হবে। এভাবে মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের যাত্রা চলমান থাকবে। এটা কোনো একক ব্যক্তির ব্যাপার না, সামষ্টিক চিন্তার ব্যাপার।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে