হামলা, স্থগিত, বর্জন ও ইভিএম জটিলতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট। প্রশাসনের দাবি, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও খোকসা, চুয়াডাঙ্গা সদর ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কেন্দ্রগুলোতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর–

চুয়াডাঙ্গা: গতকাল সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শুরু হয়। কিন্তু দুপুরের দিকে কারচুপির অভিযোগ তুলে চারজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। মাঠে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও সদর উপজেলার আলুকদিয়া, কুতুবপুর, পদ্মবিলা ও মোমিনপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ ছিল একাধিক। তবে প্রশাসন থেকে বলা হয়, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। যে কেন্দ্রগুলোতে অভিযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। আলুকদিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাসের দুই কর্মীকে কুপিয়ে জখমেরও অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সদর ইউনিয়ন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভুলটিয়া ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলুকদিয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি আমরা জানি। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’ জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে।’

খোকসা (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে সকাল থেকেই ইভিএম মেশিন জটিলতার কারণে নারী ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ নারী ভোটার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন্দ্রে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁদের ভোট নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, মেশিনের কোনো ত্রুটি নেই। ভোটারদের হাতের আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে এই ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। পরে প্রিসাইডিং অফিসারের বিশেষ ক্ষমতাবলে যাঁরা ভোট দিতে পারেননি তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে সন্ধ্যার পর ভোট নেওয়া হয়।

কুমারখালী (কুষ্টিয়া): কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় খুব সকাল থেকেই কেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। উৎসবমুখর পরিবেশে তাঁরা ভোট দেন। তবে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের জাল ভোট দিতে গিয়ে এক কিশোর (১৭) ধরা খেয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার শিরিনা আক্তার বানু বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।’

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে উৎসব মুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে ভোট। সকাল ৮টা থেকে সদর উপজেলার ১৫ ইউপিতে ভোট শুরু হয়। সারা দিন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। সকালে কেন্দ্রগুলোতে পুরুষদের থেকে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি ছিল। বিকেল ৩টার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। টিকারী বাজার ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবু সালেহ জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসন কড়া নজরদারি করেছে। ভোট শুরুর তিন ঘণ্টায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ফুরসন্দি ইউনিয়নের মাঢ়ুন্দি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা বিথি রানি জানান, সুষ্ঠু এবং উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরে খুশি। তবে সকালে সংসারের কাজ ফেলে ভোট দিতে এসে দীর্ঘ লাইন দেখে কিছুটা হতাশ হলেও নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে ভালো লেগেছে।