হাসান আলী
সমাজের প্রয়োজনে একদিন গড়ে উঠেছিল পরিবার। পরিবার ছিল বিপদে আশ্রয়, ক্ষুধায় খাবার, সন্তান জন্মদান ও লালনপালনের কেন্দ্র হিসেবে। মূলত গোষ্ঠীকেন্দ্রিক জীবন বিকশিত হয়ে যৌথ পরিবারে রূপ নেয়। সমাজের বিশেষ পরিস্থিতিতে যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে একক পরিবারে রূপ নিয়েছে। সেই একক পরিবারও হালে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে যে একক পরিবার ছিল, সেটি এখন ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র আলাদা। পড়াশোনা, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে ছেলেমেয়েদের আলাদা জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বার্ধক্যে এসে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সুযোগ পান না। কেউ একজন আগে মরে গিয়ে ‘একজন’ হয়ে পড়েন। সেই একজন গরিব হলে অসুখ-বিসুখ, অভাব-অনটন মোকাবিলা করতে না পেরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
আবার যাঁদের টাকাপয়সা থাকে, তাঁরা সেবাযত্ন, খাবার-দাবার, চিকিৎসা সময়মতো পান। অধিক বয়সী প্রবীণদের জীবনে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসে।
এই নিঃসঙ্গতা ভয়ংকর নিষ্ঠুর হয় যদি তিনি শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হন। মানুষ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, দায়িত্ব-কর্তব্য, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা এক পাশে সরিয়ে রেখে টিকে থাকার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। কী করলে টিকে থাকা যাবে, সেই পথ খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
এই টিকে থাকার জন্য তার সামনে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা অপসারণে চরম মূল্য দিতে কোনো দ্বিধা করে না। সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে এসে মানুষ সভ্যতা-সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ তৈরি যেমন করেছে, তেমনি আবার ভেঙে ফেলেছে যখন তা বিরক্তিকর ও কষ্টকর হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের প্রবীণেরা বেশির ভাগই শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন যৌথ পরিবারে। যৌথ পরিবারের উত্তাপ, মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসায় তাঁর মনোজগৎ গড়ে উঠেছে। যৌথ পরিবার ভাঙার জন্য যেসব যুবক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, আজ তাঁদের অনেকেই যৌথ পরিবারের জন্য আক্ষেপ করছেন।
অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনকে বোঝা মনে করে একদল মানুষ নিজের ক্যারিয়ারের জন্য যৌথ পরিবার থেকে নিজেকে কার্যত সরিয়ে এনেছিলেন। ৩০-৪০ বছর আগেও বিয়ে করে স্ত্রীকে মা-বাবার কাছে রেখে আসার রেওয়াজ ছিল। তারপর খাওয়ার কষ্ট, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে স্ত্রীকে নিজের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা অথবা আলাদা সংসার করার রেওয়াজ চালু হয়।
পৃথিবীর ইতিহাস হলো সামনে এগিয়ে যাওয়া। অতীতে ফিরে যাওয়া নয়। অতীতের নানা ঘটনা-স্মৃতি মানুষকে নতুন করে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিতে রসদ জোগায় কিন্তু অতীতে বসবাস করার সুযোগ দেয় না।
মানুষ তার অতীত ঐতিহ্য জাদুঘরে সংরক্ষণ করে। সময়-সুযোগ করে পরিবার-পরিজনসহ দেখে আসে।
মানুষ বসবাস করে বর্তমানে। অতীত শুধু বর্তমানকে এগিয়ে নিতে প্রেরণা দেয়। যৌথ পরিবার আর ফিরে আসবে না। একক পরিবারে চলছে ভাঙনের সুর। ৫০ বছর পর পরিবারের ধরন পাল্টে যেতে পারে। সেটা আমরা এই মুহূর্তে কল্পনাও করতে পারছি না। তবে মানুষের এই উপলব্ধি তৈরি হয়েছে একা একা, বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়বে। একদিন মানুষ আলাদা বাড়িঘর তৈরি করার জন্য উদ্গ্রীব ছিল, তুচ্ছ ঘটনায় যৌথ পরিবারের মাঝ উঠানে দেয়াল টেনেছে, দালান তুলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। শহরে নিজের একটা বাড়ি করার জন্য কেউ কেউ মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। অবশেষে ফ্ল্যাট বাড়ির ধারণা তৈরি হলে দ্রুত তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফ্ল্যাট বাড়ি মানে একই দালানে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসবাস। গড়ে ওঠা ফ্ল্যাট মালিক সমিতি কল্যাণমূলক কর্মসূচি নিচ্ছে। সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কনডোমনিয়াম। যেখানে শত শত পরিবার একত্রে বসবাস করে। ভেতরে থাকে শপিং মল, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ, এটিএম বুথ, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
মানুষ যেমন একদিন পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তেমনি আবার একত্র হওয়ার তোড়জোড় চলছে। শহরের মানুষ চিন্তা-চেতনায়, রুচি-সংস্কৃতিতে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকায় শহরেই যৌথ জীবনের চর্চা শুরু হয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সামাজিক এসব পরিবর্তনকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ধরতে পেরেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের দেড় কোটি প্রবীণের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩, প্রবীণদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা, ৫০ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত করা।
আমাদের নীতিনির্ধারক মহল বিদেশের আদলে বৃদ্ধাশ্রম, প্রবীণ নিবাস তৈরি করেছিল। এতে প্রবীণদের মতামত, সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে প্রয়োজন থাকলেও বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাসে থাকার লোকজন তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তায় ভিক্ষা করে, নির্যাতন-অপমান সয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকার দার্শনিক ব্যাখ্যা আমরা করতে পারিনি। আমরা বিবেচনায় নিয়েছি প্রবীণের থাকা-খাওয়া আর চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়।
আবেগিক সম্পর্ক, মর্যাদা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, স্বাধীনতা, পরিবারে অবস্থান, বিনোদন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকে আমরা বিবেচনায় নিতে চাইনি। এগুলো মামুলি ব্যাপার বলে এড়িয়ে গিয়েছি। পিকেএসএফ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণের জন্য গড়ে তুলেছে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র। দেশের ৬১ জেলার ১৫৩ উপজেলায় ২১৮টি ইউনিয়নে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পিকেএসএফ প্রবীণদের জন্য বয়স্ক ভাতা, প্রবীণদের সম্মাননা প্রদান, সেবা প্রদানকারী সন্তানকে শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্মান প্রদান, অতিদরিদ্র ও সক্ষম প্রবীণকে প্রশিক্ষণ ও বিশেষ ঋণ প্রদান, প্রবীণ ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য জীবন-সহায়ক সামগ্রী প্রদান করে।
প্রবীণকল্যাণে গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি। কমিটিগুলো প্রবীণের চলমান সমস্যা নিরসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমি নিজে ৪০টি প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। প্রবীণদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছি। তাঁদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা শুনেছি। দেখলাম, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্রবীণ কেন্দ্রে প্রবীণেরা উপস্থিত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন, দাবা, লুডু, ক্যারম খেলছেন। ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করে দিচ্ছেন, যাতে করে বাদী-বিবাদী উভয়েই সন্তুষ্ট হচ্ছেন। প্রত্যেক মানুষের সম্মান-মর্যাদাকে বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রে নেতারা কাজ করছেন। কমিটির নেতারা সরকারের বিভিন্ন মহলে নিজেদের প্রয়োজনীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রবীণেরা যেন কোনোভাবেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। যেসব ছেলেমেয়ে মা-বাবাকে কষ্ট দিচ্ছেন, তাঁদের বুঝিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। প্রবীণেরা দল বেঁধে বেড়াতে যাচ্ছেন, এতে স্থানীয় জনসাধারণ সমর্থন-সহযোগিতা করছে।
প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে তাদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। বাতের ব্যথা থেকে খানিকটা রেহাই পেতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা প্রদানের প্রশংসনীয় উদ্যোগও রয়েছে।
প্রবীণেরা জীবনের শেষ দিনগুলো পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের সান্নিধ্যে কাটাতে চান। এখান থেকে সরিয়ে নিলে তাঁদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। যাঁদের থাকা-খাওয়া, দেখাশোনা, চিকিৎসাসেবা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তাঁদের অবশ্যই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। নানা কারণে জীবনের শেষ দিনগুলোতে মানুষ একা হয়ে পড়েন। একা মানুষটি পরিচিত পরিবেশে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থাকলে ভালো থাকেন।
প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র স্বস্তিদায়ক, শান্তিপূর্ণ প্রবীণ জীবনের জন্য কাজ করছে। এ মডেলটি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্রের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সমাজের প্রয়োজনে একদিন গড়ে উঠেছিল পরিবার। পরিবার ছিল বিপদে আশ্রয়, ক্ষুধায় খাবার, সন্তান জন্মদান ও লালনপালনের কেন্দ্র হিসেবে। মূলত গোষ্ঠীকেন্দ্রিক জীবন বিকশিত হয়ে যৌথ পরিবারে রূপ নেয়। সমাজের বিশেষ পরিস্থিতিতে যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে একক পরিবারে রূপ নিয়েছে। সেই একক পরিবারও হালে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে যে একক পরিবার ছিল, সেটি এখন ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কর্মক্ষেত্র আলাদা। পড়াশোনা, চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে ছেলেমেয়েদের আলাদা জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বার্ধক্যে এসে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সুযোগ পান না। কেউ একজন আগে মরে গিয়ে ‘একজন’ হয়ে পড়েন। সেই একজন গরিব হলে অসুখ-বিসুখ, অভাব-অনটন মোকাবিলা করতে না পেরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
আবার যাঁদের টাকাপয়সা থাকে, তাঁরা সেবাযত্ন, খাবার-দাবার, চিকিৎসা সময়মতো পান। অধিক বয়সী প্রবীণদের জীবনে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসে।
এই নিঃসঙ্গতা ভয়ংকর নিষ্ঠুর হয় যদি তিনি শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হন। মানুষ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, দায়িত্ব-কর্তব্য, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা এক পাশে সরিয়ে রেখে টিকে থাকার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। কী করলে টিকে থাকা যাবে, সেই পথ খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
এই টিকে থাকার জন্য তার সামনে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা অপসারণে চরম মূল্য দিতে কোনো দ্বিধা করে না। সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে এসে মানুষ সভ্যতা-সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ তৈরি যেমন করেছে, তেমনি আবার ভেঙে ফেলেছে যখন তা বিরক্তিকর ও কষ্টকর হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের প্রবীণেরা বেশির ভাগই শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন যৌথ পরিবারে। যৌথ পরিবারের উত্তাপ, মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসায় তাঁর মনোজগৎ গড়ে উঠেছে। যৌথ পরিবার ভাঙার জন্য যেসব যুবক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, আজ তাঁদের অনেকেই যৌথ পরিবারের জন্য আক্ষেপ করছেন।
অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনকে বোঝা মনে করে একদল মানুষ নিজের ক্যারিয়ারের জন্য যৌথ পরিবার থেকে নিজেকে কার্যত সরিয়ে এনেছিলেন। ৩০-৪০ বছর আগেও বিয়ে করে স্ত্রীকে মা-বাবার কাছে রেখে আসার রেওয়াজ ছিল। তারপর খাওয়ার কষ্ট, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে স্ত্রীকে নিজের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা অথবা আলাদা সংসার করার রেওয়াজ চালু হয়।
পৃথিবীর ইতিহাস হলো সামনে এগিয়ে যাওয়া। অতীতে ফিরে যাওয়া নয়। অতীতের নানা ঘটনা-স্মৃতি মানুষকে নতুন করে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিতে রসদ জোগায় কিন্তু অতীতে বসবাস করার সুযোগ দেয় না।
মানুষ তার অতীত ঐতিহ্য জাদুঘরে সংরক্ষণ করে। সময়-সুযোগ করে পরিবার-পরিজনসহ দেখে আসে।
মানুষ বসবাস করে বর্তমানে। অতীত শুধু বর্তমানকে এগিয়ে নিতে প্রেরণা দেয়। যৌথ পরিবার আর ফিরে আসবে না। একক পরিবারে চলছে ভাঙনের সুর। ৫০ বছর পর পরিবারের ধরন পাল্টে যেতে পারে। সেটা আমরা এই মুহূর্তে কল্পনাও করতে পারছি না। তবে মানুষের এই উপলব্ধি তৈরি হয়েছে একা একা, বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়বে। একদিন মানুষ আলাদা বাড়িঘর তৈরি করার জন্য উদ্গ্রীব ছিল, তুচ্ছ ঘটনায় যৌথ পরিবারের মাঝ উঠানে দেয়াল টেনেছে, দালান তুলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। শহরে নিজের একটা বাড়ি করার জন্য কেউ কেউ মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। অবশেষে ফ্ল্যাট বাড়ির ধারণা তৈরি হলে দ্রুত তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফ্ল্যাট বাড়ি মানে একই দালানে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসবাস। গড়ে ওঠা ফ্ল্যাট মালিক সমিতি কল্যাণমূলক কর্মসূচি নিচ্ছে। সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কনডোমনিয়াম। যেখানে শত শত পরিবার একত্রে বসবাস করে। ভেতরে থাকে শপিং মল, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ, এটিএম বুথ, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
মানুষ যেমন একদিন পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তেমনি আবার একত্র হওয়ার তোড়জোড় চলছে। শহরের মানুষ চিন্তা-চেতনায়, রুচি-সংস্কৃতিতে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকায় শহরেই যৌথ জীবনের চর্চা শুরু হয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সামাজিক এসব পরিবর্তনকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ধরতে পেরেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের দেড় কোটি প্রবীণের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩, প্রবীণদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা, ৫০ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত করা।
আমাদের নীতিনির্ধারক মহল বিদেশের আদলে বৃদ্ধাশ্রম, প্রবীণ নিবাস তৈরি করেছিল। এতে প্রবীণদের মতামত, সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে প্রয়োজন থাকলেও বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাসে থাকার লোকজন তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তায় ভিক্ষা করে, নির্যাতন-অপমান সয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকার দার্শনিক ব্যাখ্যা আমরা করতে পারিনি। আমরা বিবেচনায় নিয়েছি প্রবীণের থাকা-খাওয়া আর চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়।
আবেগিক সম্পর্ক, মর্যাদা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, স্বাধীনতা, পরিবারে অবস্থান, বিনোদন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকে আমরা বিবেচনায় নিতে চাইনি। এগুলো মামুলি ব্যাপার বলে এড়িয়ে গিয়েছি। পিকেএসএফ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণের জন্য গড়ে তুলেছে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র। দেশের ৬১ জেলার ১৫৩ উপজেলায় ২১৮টি ইউনিয়নে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পিকেএসএফ প্রবীণদের জন্য বয়স্ক ভাতা, প্রবীণদের সম্মাননা প্রদান, সেবা প্রদানকারী সন্তানকে শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্মান প্রদান, অতিদরিদ্র ও সক্ষম প্রবীণকে প্রশিক্ষণ ও বিশেষ ঋণ প্রদান, প্রবীণ ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য জীবন-সহায়ক সামগ্রী প্রদান করে।
প্রবীণকল্যাণে গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি। কমিটিগুলো প্রবীণের চলমান সমস্যা নিরসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমি নিজে ৪০টি প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। প্রবীণদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছি। তাঁদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা শুনেছি। দেখলাম, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্রবীণ কেন্দ্রে প্রবীণেরা উপস্থিত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন, দাবা, লুডু, ক্যারম খেলছেন। ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করে দিচ্ছেন, যাতে করে বাদী-বিবাদী উভয়েই সন্তুষ্ট হচ্ছেন। প্রত্যেক মানুষের সম্মান-মর্যাদাকে বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রে নেতারা কাজ করছেন। কমিটির নেতারা সরকারের বিভিন্ন মহলে নিজেদের প্রয়োজনীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রবীণেরা যেন কোনোভাবেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। যেসব ছেলেমেয়ে মা-বাবাকে কষ্ট দিচ্ছেন, তাঁদের বুঝিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। প্রবীণেরা দল বেঁধে বেড়াতে যাচ্ছেন, এতে স্থানীয় জনসাধারণ সমর্থন-সহযোগিতা করছে।
প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে তাদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। বাতের ব্যথা থেকে খানিকটা রেহাই পেতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা প্রদানের প্রশংসনীয় উদ্যোগও রয়েছে।
প্রবীণেরা জীবনের শেষ দিনগুলো পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের সান্নিধ্যে কাটাতে চান। এখান থেকে সরিয়ে নিলে তাঁদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। যাঁদের থাকা-খাওয়া, দেখাশোনা, চিকিৎসাসেবা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তাঁদের অবশ্যই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। নানা কারণে জীবনের শেষ দিনগুলোতে মানুষ একা হয়ে পড়েন। একা মানুষটি পরিচিত পরিবেশে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থাকলে ভালো থাকেন।
প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র স্বস্তিদায়ক, শান্তিপূর্ণ প্রবীণ জীবনের জন্য কাজ করছে। এ মডেলটি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্রের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে