শিক্ষার্থীদের অপেক্ষায় শিক্ষকেরা

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৮: ৪২
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৯

খোলা বারান্দায় রোদের আনাগোনা। ক্লাসরুম তালাবদ্ধ। ১৫ দিন ধরে নেই শিক্ষার্থীদের পদচারণ। যদিও শিক্ষকেরা নিয়মিত আসছেন। এ দৃশ্য মাগুরা সদরের ২১ নম্বর সৈয়দ রুপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলটি জগদল ইউনিয়নে। গত ১৫ অক্টোবর দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে কোনো শিক্ষার্থী স্কুলমুখী হচ্ছে না।

১০২ জন শিক্ষার্থীর এই স্কুলটি শিক্ষকদের জন্যও বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী সম্প্রতি নির্বাচনী সহিংসতায় আলোচিত চার হত্যাকাণ্ড, এমনটাই দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ জান্নাত হোসেনের।

গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি মাত্র তিনজন। শিশু শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীদের বাড়ি সংঘর্ষ এলাকার বাইরে। এ জন্য তারা স্কুলে এসেছে। প্রধান শিক্ষক জান্নাত হোসেন জানান, গত ১৫ অক্টোবর এই এলাকায় যে চারজন খুন হলো, তখন পূজার ছুটি চলছিল স্কুলে। পূজার ছুটি শেষ হয় ১৭ অক্টোবর। স্কুল খোলার পর শিক্ষকেরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। কারণ, স্কুলটি সংঘর্ষে জড়ানো দুই পক্ষের মাঝের এলাকায় পড়েছে। তিনি বলেন, আমিসহ মোট পাঁচজন এই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আছি। জগদল ইউনিয়নের ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিশুরাই এই স্কুলটির শিক্ষার্থী। যেহেতু ঘটনার পর থেকে অনেকে বাড়ি ছেড়েছে। দুই পক্ষের মামলায় অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারের লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। সেই পরিবার এই এলাকা ছেড়ে দিয়েছে।

স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা ফোনে অনেক অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, বাচ্চার নিরাপত্তা দিতে পারলে স্কুলে পাঠাবেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, যেসব মেয়েশিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে কিন্তু শারীরিক দিক দিয়ে বেড়ে উঠেছে, সেসব ছাত্রীর অভিভাবক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

স্কুলটির তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘মেয়ের বাবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আসামি। গুষ্টিগত দলাদলিতে আমরা কখনোই ছিলাম না। একই এলাকায় থাকতে হলে ইচ্ছা না থাকলেও এসব সামাজিক দলাদলির ভেতরে আমরা নিরীহ মানুষ জড়িয়ে পড়ি। ওর বাবা দিনমজুর। এখন আমার ঘরে খাবারের সমস্যা। বাচ্চা স্কুলে যাবে, তার থেকে বড় চিন্তা কী খেয়ে বেঁচে থাকব আমরা।’

শিক্ষকেরা জানান, অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার যে মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করত, তা বন্ধ। তাঁরা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সিম নম্বরও পরিবর্তন করেছে।

এ বিষয়ে মাগুরা সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু প্রাথমিক স্কুলে শিশুরা পড়ে। ওই এলাকায় যে ঘটনা ঘটল এতে তো বড়রাই নেই বলে আমি জেনেছি। বাড়ির বড়রা নেই মানে শিশুরাও তাদের সঙ্গে জায়গা বদল করেছে। শিক্ষকদের স্কুল খুলে থাকতে বলেছি। পরিবেশ অনুকূল হলে আশা করি শিক্ষার্থীরা স্কুল আসবে।’

১৫ অক্টোবর জগদল ইউনিয়নে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সবুর মোল্লা, কবির মোল্লা ও রহমান মোল্লা খুন হন। একই ঘটনায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণপাড়ার বিপক্ষ গ্রুপের ইমরান নামে এক যুবক খুন হন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রার্থী নিয়ে বিরোধে এ ঘটনা ঘটে। এতে সবুর মোল্লার পরিবার থেকে ৬৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। পরদিন ইমরান হত্যার ঘটনায় ৫২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুন হোসেন জানান, ওই এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝে এই প্রাথমিক স্কুল। স্কুলে শিক্ষার্থীদের যেতে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই। যেহেতু অনেকের নামে মামলা হয়েছে। তাই অনেকে বাড়িতে আসছে না। তবে স্কুলে যেতে কোন সমস্যা নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত