নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আগামীকাল রোববার তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে বিভিন্ন ইউপিতে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে এসব ইউপিতে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়।

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পৌরসভা, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউপিতে আগামীকাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ২২০টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টিকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বহিরাগতদের দাপটে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রায়পুরের প্রার্থীরা। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, মাইক ভাঙচুর, হুমকি ও মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে। সংঘাত ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা। জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে গত বৃহস্পতিবার আচরণবিধি নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এ ধরনের অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা।

ইতিমধ্যে রায়পুর উপজেলায় তিন ইউপিতে চেয়ারম্যান ও দুই উপজেলায় সংরক্ষিত নারী ও পুরুষ সদস্য পদে ১৬ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৭৮ জন, ২০ ইউপিতে সংরক্ষিত নারী ও পুরুষ সদস্য পদে ৯৮৫ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় ৪ জন মেয়র ও ১০০ সংরক্ষিত নারী ও পুরুষ কাউন্সিলর মাঠে রয়েছেন।

তবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা, পাল্টা হামলা ও হুমকি-ধমকির অভিযোগ তুলেছেন। আবার অনেকে মামলা ও হামলার ভয়ে রয়েছেন আতঙ্কে।

এদিকে পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, এক পৌরসভা ও দুটি উপজেলায় ২২০টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেন সবাই নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নোয়াখালী: জেলার সেনবাগ পৌরসভা ও ৫টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারে মাঠে বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এদিকে ডমুরুয়া ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন কানন। বাকি ৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন ও পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সেনবাগ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, সেনবাগ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও ছাতারপাইয়া ইউপিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ইউপিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। টহলে থাকবে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফেনী: রাত পোহালেই ফেনীর ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম উপজেলার ৮টি ইউপির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে ৮টি ইউপিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাগলনাইয়ার পাঠানগড় ইউপির রফিকুল হায়দার চৌধুরী সোহেল, শুভপুরের আজিজুল হক মজ্নু ও পরশুরামের চিথলিয়া ইউপির জসিম উদ্দিনসহ মোট ৩ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ২২ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৮টি ইউপিতে ২৫১ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে মোট ৫৬ জন নির্বাচনে লড়ছেন।