১৩টি ইটভাটাই অবৈধ

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৫৭
Thumbnail image

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ১৩টি অবৈধ ইটভাটা চলছে অবাধে। মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ননীতি। একটি ভাটারও নেই জেলা প্রশাসনের অনুমতি সনদ (লাইসেন্স)। এর মধ্যে দুটি সরকারি খাসজমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। ১০টি ভাটার খুব কাছে রয়েছে সরকারি বনাঞ্চল।

তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইটভাটা চালু করলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ইটভাটাগুলোর মধ্যে মগধরা ইউনিয়নের গুপ্তছড়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় ১০টি, মাইটভাঙ্গা ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকায় একটি, আমানউল্লাহ ইউনিয়ন বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় একটি ও সারিকাইত ইউনিয়ন বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় একটি। ইটভাটাগুলো হলো বিবিএসটি ব্রিকস, জিআরএম ব্রিকস, আল্লার দান ব্রিকস, আকাশ ব্রিকস, ইয়েস ব্রিকস, তাজ ব্রিকস, এটিটি ব্রিকস, ম্যাক্স ব্রিকস, মাম ব্রিকস, বিবিএস ব্রিকস, বিডি ব্রিকস, রয়েল ব্রিকস ও এমটিটি ব্রিকস।

এর মধ্যে তাজ ব্রিকস ও ম্যাক্স ব্রিকস নামের ইটভাটা দুটি সরকারি খাস জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে।

ইটভাটাগুলোর মধ্যে ১২০ ফুট চিমনি রয়েছে ছয়টির। নিষিদ্ধ স্থায়ী চিমনি রয়েছে সাতটির। এর মধ্যে জিক জ্যাগ কিলন ছাড়া ভাটা সাতটি। জিক জ্যাগ কিলন রয়েছে এমন ভাটা ছয়টি। একটিতেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। বাংলা চিমনি বা ড্রাম শুধু একটিতে রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ ভাটার পাশে রয়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও সরকারি বনাঞ্চল। ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি কেটে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মগধরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধসংলগ্ন বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ইট পোড়ানোর সময় বিষাক্ত ধোঁয়ায় এবং গন্ধে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আমরা অসহায় হতদরিদ্র। চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। ইটভাটাগুলোর কারণে আমাদের ফসলি জমিতে কোনো ফসল ফলছে না।’

মগধরা ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোহেল রানা বলেন, ‘ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে বেড়িবাঁধসংলগ্ন বনাঞ্চল হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের আশপাশে কোনো ফসল হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সন্দ্বীপে শুধুমাত্র একটি ইটভাটার ছাড়পত্র রয়েছে। দুটির ছাড়পত্র বন বিভাগের অনাপত্তিপত্রের জন্য আটকে আছে।

ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র তাঁদের নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, পুরো বাংলাদেশে কয়টা ইটভাটার ছাড়পত্র আছে। সবাই যেভাবে চালাচ্ছে, তাঁরাও সেইভাবে চালাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) জনাব মুফিদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সন্দ্বীপে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করব।’

অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিজুস কুমার চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ডা. অলক পাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আমার এক ছাত্রসহ গবেষণা করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম না মেনে ভাটায় ইট পোড়ানো নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইট পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়ার কারণে মানুষের দেহে নানা রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে চোখে ছানি পড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত