ইমতিয়াজ মাহমুদ
সমাজের রক্ষণশীল অংশটি নারীকে অবরোধে ফিরিয়ে নেওয়ার মতলবে নানা ধরনের অপপ্রচার করে থাকে। এটি সব দেশেই কমবেশি কোনো না কোনোভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং আমাদের দেশে যে একদল মানুষ বিভিন্নভাবে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার চেষ্টা করে যাবে, তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই; বরং আমাদের দেশে এ রকম ক্যাম্পেইন পশ্চিমের দেশগুলোর চেয়ে একটু তীব্র হবে—এটাই স্বাভাবিক।
নারীকে এসব বিরোধ মোকাবিলা করে, লড়াই করে তবেই এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে এবং এ রকম লড়াই করেই যেতে হবে আরও দীর্ঘদিন। এটি সব নারীবাদী এবং নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরই জানা কথা। সচেতন কোনো নারীই মিছে প্রত্যাশা করেন না যে বর্তমান সমাজকাঠামোর মধ্যে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো নারী ও পুরুষের পূর্ণ সমতা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসবে। বিদ্যমান সমাজে নারীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বিবেচনা করা হয় না; এখানে নারী হচ্ছে পুরুষের তুলনায় অধম, পুরুষের চেয়ে একটু কম মানুষ—উনমানুষ। রাষ্ট্রের কাছে এবং সমাজের কাছে একজন নারী অধিকারকর্মী কেবল এটুকু প্রত্যাশা করে যে রাষ্ট্র নারীর জন্য ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু নিশ্চিত করবে এবং নারীকে তাঁর নিজের অধিকারের কথা বলতে দেবে।
এই প্রত্যাশার ভিত্তি কী? ভিত্তি হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতার চেতনা এবং আমাদের সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে দেশটি অর্জন করেছি, সেটি হওয়ার কথা এমন একটি দেশ, যেখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে অন্তত আইনগতভাবে বৈষম্য করা হবে না। একজন নাগরিক হিসেবে নারী তাঁর নিজের কথাটুকু স্বাধীনভাবে বলতে পারবেন। এই যে নীতিগত অবস্থান, এটির বাস্তব প্রয়োগ কীভাবে হবে? বৈষম্য যদি রাষ্ট্র দূর করতে না-ও পারে, অন্তত বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারী যেন কথা বলতে পারেন, সেই নিশ্চয়তাটুকু রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আমার প্রতি যে অন্যায় হচ্ছে, সেই অন্যায় দূর করার সামর্থ্য আপনাদের নেই, কিন্তু আমাকে অন্তত কণ্ঠ ছেড়ে কাঁদতে তো দেবেন? এটুকুও যদি রাষ্ট্র না করে, তাহলে এই রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাঁড়ায়? নারীর পক্ষে তো এই রাষ্ট্র থাকলই না, তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও থাকল না।
রাষ্ট্র নিজে নারীকে তাঁর অধিকারের কথা বলতে বাধা দেবে না এবং অন্য কেউ যাতে বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করবে। এটিই হচ্ছে নারীর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ন্যূনতম প্রয়োগ।
আমাদের এখানে এটিই হয়ে আসছে কিছুদিন ধরে। একদল প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাৎপদ নারী ও পুরুষ নারীর ওপর তাঁদের পছন্দমতো ড্রেস কোডের নামে অবরোধ চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে তাঁরা নারীদের ওপর শারীরিক ও বাচনিক হামলা পরিচালনা করছেন পরিবহনে, রেলস্টেশনে এবং সমাজের সর্বত্র। এই তথাকথিত ড্রেস কোডের ভিত্তি হচ্ছে নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা। তাঁদের কথা হচ্ছে, নারী যেহেতু মানুষ নয়, নিতান্তই পুরুষের ভোগের বস্তু, সুতরাং অন্য সব খাবার ইত্যাদির মতো নারীকেও ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। নারীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর যাঁরা, তাঁরা সেটার প্রতিবাদ করেছেন, বলতে চেয়েছেন—না, নারীও মানুষ। নারীর পোশাক হবে নারীর নিজের যা পছন্দ, সেটিই। রাষ্ট্র ও সরকারের এখানে সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক দায়িত্ব ছিল নারীর এই প্রতিবাদ করার অধিকারটুকু রক্ষা করা। নিতান্ত প্রতিবাদের কারণে যাতে উল্টো প্রতিবাদী নারীদের হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা।
আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার নারীর এই প্রতিবাদের অধিকারটুকু রক্ষার জন্যও এগিয়ে আসেনি। না, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে অধিকার রক্ষার তো প্রয়োজন নেই বা যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের পক্ষে যদি সরকার অবস্থান নিতে না যায়, তাহলেও অসুবিধা নেই। সরকার যদি প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তত এটুকু বলে যে না, নারীর অধিকার আছে, ওদের নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার—তাহলেও কিছুটা কাজ হয়। সরকার সেটিও করেনি।
এটিই হচ্ছে নারীর জন্য বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা। লড়াই ছাড়া নারীর জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই। নারীকে লড়তে হবে নিজেদের স্বাধীনতা, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য—এই লড়াই নারীকে প্রতিদিন, প্রতি পদে পদে লড়তেই হয়। আর এখন বলতেই হচ্ছে, এমনকি নিজের কথাটা স্পষ্ট করে বলার জন্যও নারীকে লড়তে হবে। নারীকে এই লড়াই পরিচালনা করতে হবে বাস্তব অবস্থা জেনে ও বুঝে। নারীর অধিকারের সংগ্রামে নারীর পাশে কেউ থাকবে না—সমাজ তো বৈরী বটেই, রাষ্ট্রও পুরুষতান্ত্রিক। এই রাষ্ট্র, এই সরকার বিদ্যমান সব প্রথা প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস—কেউই নারীকে এমনকি কথা বলতেও দিতে রাজি নয়। সুতরাং লড়াই ছাড়া আর উপায় কী?
সুখের কথা হচ্ছে, নারীর অবস্থা সমাজে এত খারাপ এবং অসহায় যে এই লড়াইয়ে নারীর জয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প যেমন নেই, তেমনি হারানোরও কিছু নেই।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
সমাজের রক্ষণশীল অংশটি নারীকে অবরোধে ফিরিয়ে নেওয়ার মতলবে নানা ধরনের অপপ্রচার করে থাকে। এটি সব দেশেই কমবেশি কোনো না কোনোভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং আমাদের দেশে যে একদল মানুষ বিভিন্নভাবে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার চেষ্টা করে যাবে, তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই; বরং আমাদের দেশে এ রকম ক্যাম্পেইন পশ্চিমের দেশগুলোর চেয়ে একটু তীব্র হবে—এটাই স্বাভাবিক।
নারীকে এসব বিরোধ মোকাবিলা করে, লড়াই করে তবেই এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে এবং এ রকম লড়াই করেই যেতে হবে আরও দীর্ঘদিন। এটি সব নারীবাদী এবং নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরই জানা কথা। সচেতন কোনো নারীই মিছে প্রত্যাশা করেন না যে বর্তমান সমাজকাঠামোর মধ্যে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এবং সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো নারী ও পুরুষের পূর্ণ সমতা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসবে। বিদ্যমান সমাজে নারীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বিবেচনা করা হয় না; এখানে নারী হচ্ছে পুরুষের তুলনায় অধম, পুরুষের চেয়ে একটু কম মানুষ—উনমানুষ। রাষ্ট্রের কাছে এবং সমাজের কাছে একজন নারী অধিকারকর্মী কেবল এটুকু প্রত্যাশা করে যে রাষ্ট্র নারীর জন্য ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু নিশ্চিত করবে এবং নারীকে তাঁর নিজের অধিকারের কথা বলতে দেবে।
এই প্রত্যাশার ভিত্তি কী? ভিত্তি হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতার চেতনা এবং আমাদের সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে দেশটি অর্জন করেছি, সেটি হওয়ার কথা এমন একটি দেশ, যেখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে অন্তত আইনগতভাবে বৈষম্য করা হবে না। একজন নাগরিক হিসেবে নারী তাঁর নিজের কথাটুকু স্বাধীনভাবে বলতে পারবেন। এই যে নীতিগত অবস্থান, এটির বাস্তব প্রয়োগ কীভাবে হবে? বৈষম্য যদি রাষ্ট্র দূর করতে না-ও পারে, অন্তত বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারী যেন কথা বলতে পারেন, সেই নিশ্চয়তাটুকু রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আমার প্রতি যে অন্যায় হচ্ছে, সেই অন্যায় দূর করার সামর্থ্য আপনাদের নেই, কিন্তু আমাকে অন্তত কণ্ঠ ছেড়ে কাঁদতে তো দেবেন? এটুকুও যদি রাষ্ট্র না করে, তাহলে এই রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাঁড়ায়? নারীর পক্ষে তো এই রাষ্ট্র থাকলই না, তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও থাকল না।
রাষ্ট্র নিজে নারীকে তাঁর অধিকারের কথা বলতে বাধা দেবে না এবং অন্য কেউ যাতে বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করবে। এটিই হচ্ছে নারীর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ন্যূনতম প্রয়োগ।
আমাদের এখানে এটিই হয়ে আসছে কিছুদিন ধরে। একদল প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাৎপদ নারী ও পুরুষ নারীর ওপর তাঁদের পছন্দমতো ড্রেস কোডের নামে অবরোধ চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে তাঁরা নারীদের ওপর শারীরিক ও বাচনিক হামলা পরিচালনা করছেন পরিবহনে, রেলস্টেশনে এবং সমাজের সর্বত্র। এই তথাকথিত ড্রেস কোডের ভিত্তি হচ্ছে নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা। তাঁদের কথা হচ্ছে, নারী যেহেতু মানুষ নয়, নিতান্তই পুরুষের ভোগের বস্তু, সুতরাং অন্য সব খাবার ইত্যাদির মতো নারীকেও ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। নারীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর যাঁরা, তাঁরা সেটার প্রতিবাদ করেছেন, বলতে চেয়েছেন—না, নারীও মানুষ। নারীর পোশাক হবে নারীর নিজের যা পছন্দ, সেটিই। রাষ্ট্র ও সরকারের এখানে সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক দায়িত্ব ছিল নারীর এই প্রতিবাদ করার অধিকারটুকু রক্ষা করা। নিতান্ত প্রতিবাদের কারণে যাতে উল্টো প্রতিবাদী নারীদের হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা।
আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার নারীর এই প্রতিবাদের অধিকারটুকু রক্ষার জন্যও এগিয়ে আসেনি। না, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে অধিকার রক্ষার তো প্রয়োজন নেই বা যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের পক্ষে যদি সরকার অবস্থান নিতে না যায়, তাহলেও অসুবিধা নেই। সরকার যদি প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তত এটুকু বলে যে না, নারীর অধিকার আছে, ওদের নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার—তাহলেও কিছুটা কাজ হয়। সরকার সেটিও করেনি।
এটিই হচ্ছে নারীর জন্য বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা। লড়াই ছাড়া নারীর জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই। নারীকে লড়তে হবে নিজেদের স্বাধীনতা, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য—এই লড়াই নারীকে প্রতিদিন, প্রতি পদে পদে লড়তেই হয়। আর এখন বলতেই হচ্ছে, এমনকি নিজের কথাটা স্পষ্ট করে বলার জন্যও নারীকে লড়তে হবে। নারীকে এই লড়াই পরিচালনা করতে হবে বাস্তব অবস্থা জেনে ও বুঝে। নারীর অধিকারের সংগ্রামে নারীর পাশে কেউ থাকবে না—সমাজ তো বৈরী বটেই, রাষ্ট্রও পুরুষতান্ত্রিক। এই রাষ্ট্র, এই সরকার বিদ্যমান সব প্রথা প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস—কেউই নারীকে এমনকি কথা বলতেও দিতে রাজি নয়। সুতরাং লড়াই ছাড়া আর উপায় কী?
সুখের কথা হচ্ছে, নারীর অবস্থা সমাজে এত খারাপ এবং অসহায় যে এই লড়াইয়ে নারীর জয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প যেমন নেই, তেমনি হারানোরও কিছু নেই।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে