আসিফ
আজও পৃথিবীর মানুষ ভয়েজার মহাকাশযান আত্তীকরণে সক্ষম হয়নি। ১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ও ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার-১ ও ২ নামের দুটি মহাকাশযান সৌরজগৎকে উন্মোচনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এতে নাসার পক্ষে কার্ল সাগানের নেতৃত্বে একটি দল ওই অভিযানের বিষয়বস্তু নির্বাচন করে।
বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার মুখোমুখি হলে পৃথিবীর শিশুদের পক্ষ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশু, নিক সাগান বলে উঠবে: ‘হ্যালো, ফ্রম চিলড্রেন অব দ্য প্ল্যানেট আর্থ’। বাংলায়, ‘পৃথিবীর শিশুদের পক্ষ থেকে অভিবাদন’।
এমন একটি শুভেচ্ছাসহ বহু বার্তা নিয়ে ভয়েজার মহাকাশযান ছুটে চলেছে আন্তনাক্ষত্রিক শূন্যতার মহাসাগরে। এখানে ৫ ঘণ্টার একটি রেকর্ডে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, ছবি, সংগীত, অনুভূতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে নেই উঁচুনিচু, নেই বিভেদ, নেই ক্ষমতা আর সম্পদের বড়াই; রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা, সম্প্রীতি, আর সৃজনশীলতার প্রকাশ।
অভিযানের রেকর্ডের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। ভয়েজার বার্তাটিতে যুক্ত প্রতিটি রেকর্ডে রয়েছে আমাদের গ্রহের ১১৮টি ফটোগ্রাফ; ‘দ্য সাউন্ডস অব আর্থ’ শিরোনামে একটি বিবর্তনীয় অডিও, যেমন সার্ফ, বাতাস, বজ্রপাত এবং প্রাণীদের দ্বারা তৈরি করা (পাখি এবং তিমির গানসহ) আমাদের সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট সংগীত, প্রায় ৯০ মিনিট এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের পৃথিবীর পক্ষ থেকে অভিবাদনসহ প্রায় ৬০টি মানব ভাষার অডিও। এখানে আরও রয়েছে তিমির ভাষার অভিবাদন। এই রেকর্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের একটি লিখিত শুভেচ্ছাবার্তা রয়েছে।
জ্যোতির্পদার্থবিদ কার্ল সাগানের তত্ত্বাবধানে ড্রেক সমীকরণের স্রষ্টা এফ ডি ড্রেক, ডকুমেন্টারি প্রযোজক ও পরিচালক এবং বিজ্ঞানকে জনবোধ্য করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ অ্যান ড্রয়ান, নৃতাত্ত্বিক গণিতবিদ ও বিজ্ঞান লেখক টিমথি ফেরিস, মহাজাগতিক শিল্পী ও সায়েন্স জার্নালিস্ট জন লোমবার্গ, শিল্পী ও লেখক এবং পায়োনীয় মহাকাশযানের বার্তা ফলকের শিল্পকর্মটির নির্মাতা লিন্ডা সালজম্যান সাগানের প্রচেষ্টায় প্রস্তুত হয়েছিল ৫ ঘণ্টার এই গোল্ডেন রেকর্ডটি। কার্ল সাগান বলেছেন, ‘মহাকাশযানটির মুখোমুখি হলেই রেকর্ডটি চালানো হবে। যদি আন্তনাক্ষত্রিক মহাকাশে উন্নত মহাকাশ-যাত্রী সভ্যতা থাকে, তবে মহাজাগতিক উৎক্ষেপণ এই গ্রহের জীবন সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক কিছু বলবে।’
বার্তাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় ছিল তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিবের শুভেচ্ছা বক্তব্য: ‘জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে, ১৪৭ সদস্যরাষ্ট্রের একটি সংস্থা, যারা পৃথিবীর প্রায় সব মানববাসীর প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আমাদের গ্রহের মানুষের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছি। আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বে কেবল শান্তি এবং বন্ধুত্বের অন্বেষণ করে। যদি আমাদের শেখানোর অভিপ্রায়ে আহ্বান করা হয়, তবে আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করব। আমরা পুরোপুরি জানি যে আমাদের গ্রহ এবং এর সব বাসিন্দা পৃথিবীর চারপাশে বিরাজমান বিশাল মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি অংশ। আশা করি, বিনয়ের সঙ্গে এটি আমরা গ্রহণ করব।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এই বার্তা পাঠানোর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, এটি দূরবর্তী ক্ষুদ্র বিশ্ব থেকে একটি উপহার: আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের চিত্র, আমাদের সংগীত, আমাদের চিন্তাভাবনা এবং আমাদের অনুভূতির একটি চিহ্ন। আমরা আমাদের সময় বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি, যাতে আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারি।’
এ রেকর্ডটিকে পৃথিবীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অবয়বটি কেমন, সে-সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে আমরা বিবেচনা করতে পারি। যেকোনো কাজ একবারে পূর্ণতা পায় না, তবে এ ধরনের ধারাবাহিকতা একটি পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই হিসেবে এটাকে প্রাথমিক চেষ্টা বলে অভিহিত করা হলেও, পৃথিবীর বা আর্দিয়ান সংস্কৃতির একটি অখণ্ড রূপ হিসেবে দেখতে পাবে।
আমার কাছে মনে হয়েছে, বিংশ শতাব্দীর সাতের দশকের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের তৎকালীন প্রধান কুট ওয়ার্ল্ড হেইমের অভিবাদন যুক্ত করা যথার্থ ছিল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অভিবাদন থাকার কথা বিবেচনা করলে তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের বাণীও থাকা দরকার ছিল। এতে পূর্ণতা পেত গোল্ডেন রেকর্ডটি পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল বার্তা হিসেবে।
তবে সাংস্কৃতিক এবং জীবনযাপন সংক্রান্ত যা কিছু এ বার্তাটিতে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে স্কুল শিক্ষায় এই রেকর্ড বড় মাপের হাতিয়ার হতে পারে। পৃথিবীব্যাপী স্কুলগুলোয় এটাকে সিলেবাসের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করতে পারলে আজ যে ধরনের সাংস্কৃতিক সংঘাতের মুখোমুখি মানুষ হচ্ছে, এর পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে আসত। আমি আমার ডিসকাশন প্রজেক্টের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান বক্তৃতার কাজে যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই এই গোল্ডেন রেকর্ডটি শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
যেমন সম্ভাষণসূচক অংশটির বিবেচনা করলে: শুরু হয়েছিল সুমেরীয় শুভকামনার মধ্য দিয়ে। প্রাচীন গ্রিক ভাষার শুভেচ্ছা বার্তাটির অনুবাদ করলে দাঁড়ায়—তোমরা যেই হও না কেন, তোমাদের শুভেচ্ছা, বন্ধুত্বের আহ্বান নিয়ে এসেছি। বাংলায়, নমস্কার, বিশ্বে শান্তি হোক; আরবিতে, ‘তাহিয়্যাতুনা লিল-আসদিকা ফিল-নুজুম। ইয়া লায়তা ইয়াজমাউনা আল-জামান’; অর্থাৎ নক্ষত্রের বাসিন্দারা শুভেচ্ছা, একটা সময় আমরা একত্র হব; উর্দুতে, ‘আসসালামু আলাইকুম।
হাম জামিনকে রেহনেওয়ালোঁ কি তরফ সে আপ কো খুশ আমদিদ কেহতে হ্যায়’; অর্থাৎ আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমরা এই পৃথিবীর অধিবাসী, আপনাদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাচ্ছি; হিন্দিতে, ‘ধরতি কে বাসিয়োন কি অর সে নমস্কার’, অর্থাৎ পৃথিবীর অধিবাসীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। হিব্রুতে ‘শালোম’, অর্থাৎ শান্তি; পার্সিতে ‘দরুদ বার সাকেনিন মাওরাহ আসেমান-হা’; অর্থাৎ শুভেচ্ছা দূর আকাশের অধিবাসীরা; লাতিনে ‘সালভেট কুইকুম এস্টিস, বোনাম এর্গা ভস ভলিউন্টাটেম হেবেমাস, ইতি পেসেম পার অ্যাস্ট্রা ফেরিমাস’; অর্থাৎ ‘তোমরা যেই হও না কেন, তোমাদের শুভেচ্ছা। তোমাদের প্রতি আমাদের সদিচ্ছা আছে এবং মহাকাশে শান্তি আনতে হবে।’
এই সম্ভাষণসূচক বাণীগুলো লিন্ডা সালজম্যান সাগানের তত্ত্বাবধানে রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। লিন্ডা সালজম্যান একজন শিল্পী ও লেখক। পায়োনিয়র মহাকাশযানের বার্তা ফলকের শিল্পকর্মটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন। ছিলেন ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ডের একজন সহপ্রযোজক। এই সম্ভাষণসূচক বার্তা থেকে আমরা বুঝতে পারি, পৃথিবীর সংস্কৃতি ও সমাজগুলোর কতটা বৃহত্তর উপলব্ধি থেকে উঠে আসছে, যেখানে সবার লক্ষ্য রয়েছে বন্ধুত্ব, শান্তি ও ঐক্য এবং বৈচিত্র্য রক্ষায় মহাজাগতিক আহ্বান। তাহলে এত অসহিষ্ণুতা, অনমনীয়তা এবং যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে কেন পৃথিবীবাসীর মধ্যে? সমস্যাটি আসলে কোথায়?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
আজও পৃথিবীর মানুষ ভয়েজার মহাকাশযান আত্তীকরণে সক্ষম হয়নি। ১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ও ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার-১ ও ২ নামের দুটি মহাকাশযান সৌরজগৎকে উন্মোচনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এতে নাসার পক্ষে কার্ল সাগানের নেতৃত্বে একটি দল ওই অভিযানের বিষয়বস্তু নির্বাচন করে।
বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার মুখোমুখি হলে পৃথিবীর শিশুদের পক্ষ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশু, নিক সাগান বলে উঠবে: ‘হ্যালো, ফ্রম চিলড্রেন অব দ্য প্ল্যানেট আর্থ’। বাংলায়, ‘পৃথিবীর শিশুদের পক্ষ থেকে অভিবাদন’।
এমন একটি শুভেচ্ছাসহ বহু বার্তা নিয়ে ভয়েজার মহাকাশযান ছুটে চলেছে আন্তনাক্ষত্রিক শূন্যতার মহাসাগরে। এখানে ৫ ঘণ্টার একটি রেকর্ডে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, ছবি, সংগীত, অনুভূতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে নেই উঁচুনিচু, নেই বিভেদ, নেই ক্ষমতা আর সম্পদের বড়াই; রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা, সম্প্রীতি, আর সৃজনশীলতার প্রকাশ।
অভিযানের রেকর্ডের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। ভয়েজার বার্তাটিতে যুক্ত প্রতিটি রেকর্ডে রয়েছে আমাদের গ্রহের ১১৮টি ফটোগ্রাফ; ‘দ্য সাউন্ডস অব আর্থ’ শিরোনামে একটি বিবর্তনীয় অডিও, যেমন সার্ফ, বাতাস, বজ্রপাত এবং প্রাণীদের দ্বারা তৈরি করা (পাখি এবং তিমির গানসহ) আমাদের সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট সংগীত, প্রায় ৯০ মিনিট এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের পৃথিবীর পক্ষ থেকে অভিবাদনসহ প্রায় ৬০টি মানব ভাষার অডিও। এখানে আরও রয়েছে তিমির ভাষার অভিবাদন। এই রেকর্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের একটি লিখিত শুভেচ্ছাবার্তা রয়েছে।
জ্যোতির্পদার্থবিদ কার্ল সাগানের তত্ত্বাবধানে ড্রেক সমীকরণের স্রষ্টা এফ ডি ড্রেক, ডকুমেন্টারি প্রযোজক ও পরিচালক এবং বিজ্ঞানকে জনবোধ্য করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ অ্যান ড্রয়ান, নৃতাত্ত্বিক গণিতবিদ ও বিজ্ঞান লেখক টিমথি ফেরিস, মহাজাগতিক শিল্পী ও সায়েন্স জার্নালিস্ট জন লোমবার্গ, শিল্পী ও লেখক এবং পায়োনীয় মহাকাশযানের বার্তা ফলকের শিল্পকর্মটির নির্মাতা লিন্ডা সালজম্যান সাগানের প্রচেষ্টায় প্রস্তুত হয়েছিল ৫ ঘণ্টার এই গোল্ডেন রেকর্ডটি। কার্ল সাগান বলেছেন, ‘মহাকাশযানটির মুখোমুখি হলেই রেকর্ডটি চালানো হবে। যদি আন্তনাক্ষত্রিক মহাকাশে উন্নত মহাকাশ-যাত্রী সভ্যতা থাকে, তবে মহাজাগতিক উৎক্ষেপণ এই গ্রহের জীবন সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক কিছু বলবে।’
বার্তাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় ছিল তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিবের শুভেচ্ছা বক্তব্য: ‘জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে, ১৪৭ সদস্যরাষ্ট্রের একটি সংস্থা, যারা পৃথিবীর প্রায় সব মানববাসীর প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আমাদের গ্রহের মানুষের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছি। আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বে কেবল শান্তি এবং বন্ধুত্বের অন্বেষণ করে। যদি আমাদের শেখানোর অভিপ্রায়ে আহ্বান করা হয়, তবে আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করব। আমরা পুরোপুরি জানি যে আমাদের গ্রহ এবং এর সব বাসিন্দা পৃথিবীর চারপাশে বিরাজমান বিশাল মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি অংশ। আশা করি, বিনয়ের সঙ্গে এটি আমরা গ্রহণ করব।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এই বার্তা পাঠানোর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, এটি দূরবর্তী ক্ষুদ্র বিশ্ব থেকে একটি উপহার: আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের চিত্র, আমাদের সংগীত, আমাদের চিন্তাভাবনা এবং আমাদের অনুভূতির একটি চিহ্ন। আমরা আমাদের সময় বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি, যাতে আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারি।’
এ রেকর্ডটিকে পৃথিবীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অবয়বটি কেমন, সে-সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে আমরা বিবেচনা করতে পারি। যেকোনো কাজ একবারে পূর্ণতা পায় না, তবে এ ধরনের ধারাবাহিকতা একটি পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই হিসেবে এটাকে প্রাথমিক চেষ্টা বলে অভিহিত করা হলেও, পৃথিবীর বা আর্দিয়ান সংস্কৃতির একটি অখণ্ড রূপ হিসেবে দেখতে পাবে।
আমার কাছে মনে হয়েছে, বিংশ শতাব্দীর সাতের দশকের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের তৎকালীন প্রধান কুট ওয়ার্ল্ড হেইমের অভিবাদন যুক্ত করা যথার্থ ছিল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অভিবাদন থাকার কথা বিবেচনা করলে তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের বাণীও থাকা দরকার ছিল। এতে পূর্ণতা পেত গোল্ডেন রেকর্ডটি পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল বার্তা হিসেবে।
তবে সাংস্কৃতিক এবং জীবনযাপন সংক্রান্ত যা কিছু এ বার্তাটিতে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে স্কুল শিক্ষায় এই রেকর্ড বড় মাপের হাতিয়ার হতে পারে। পৃথিবীব্যাপী স্কুলগুলোয় এটাকে সিলেবাসের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করতে পারলে আজ যে ধরনের সাংস্কৃতিক সংঘাতের মুখোমুখি মানুষ হচ্ছে, এর পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে আসত। আমি আমার ডিসকাশন প্রজেক্টের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান বক্তৃতার কাজে যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই এই গোল্ডেন রেকর্ডটি শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
যেমন সম্ভাষণসূচক অংশটির বিবেচনা করলে: শুরু হয়েছিল সুমেরীয় শুভকামনার মধ্য দিয়ে। প্রাচীন গ্রিক ভাষার শুভেচ্ছা বার্তাটির অনুবাদ করলে দাঁড়ায়—তোমরা যেই হও না কেন, তোমাদের শুভেচ্ছা, বন্ধুত্বের আহ্বান নিয়ে এসেছি। বাংলায়, নমস্কার, বিশ্বে শান্তি হোক; আরবিতে, ‘তাহিয়্যাতুনা লিল-আসদিকা ফিল-নুজুম। ইয়া লায়তা ইয়াজমাউনা আল-জামান’; অর্থাৎ নক্ষত্রের বাসিন্দারা শুভেচ্ছা, একটা সময় আমরা একত্র হব; উর্দুতে, ‘আসসালামু আলাইকুম।
হাম জামিনকে রেহনেওয়ালোঁ কি তরফ সে আপ কো খুশ আমদিদ কেহতে হ্যায়’; অর্থাৎ আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমরা এই পৃথিবীর অধিবাসী, আপনাদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাচ্ছি; হিন্দিতে, ‘ধরতি কে বাসিয়োন কি অর সে নমস্কার’, অর্থাৎ পৃথিবীর অধিবাসীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। হিব্রুতে ‘শালোম’, অর্থাৎ শান্তি; পার্সিতে ‘দরুদ বার সাকেনিন মাওরাহ আসেমান-হা’; অর্থাৎ শুভেচ্ছা দূর আকাশের অধিবাসীরা; লাতিনে ‘সালভেট কুইকুম এস্টিস, বোনাম এর্গা ভস ভলিউন্টাটেম হেবেমাস, ইতি পেসেম পার অ্যাস্ট্রা ফেরিমাস’; অর্থাৎ ‘তোমরা যেই হও না কেন, তোমাদের শুভেচ্ছা। তোমাদের প্রতি আমাদের সদিচ্ছা আছে এবং মহাকাশে শান্তি আনতে হবে।’
এই সম্ভাষণসূচক বাণীগুলো লিন্ডা সালজম্যান সাগানের তত্ত্বাবধানে রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। লিন্ডা সালজম্যান একজন শিল্পী ও লেখক। পায়োনিয়র মহাকাশযানের বার্তা ফলকের শিল্পকর্মটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন। ছিলেন ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ডের একজন সহপ্রযোজক। এই সম্ভাষণসূচক বার্তা থেকে আমরা বুঝতে পারি, পৃথিবীর সংস্কৃতি ও সমাজগুলোর কতটা বৃহত্তর উপলব্ধি থেকে উঠে আসছে, যেখানে সবার লক্ষ্য রয়েছে বন্ধুত্ব, শান্তি ও ঐক্য এবং বৈচিত্র্য রক্ষায় মহাজাগতিক আহ্বান। তাহলে এত অসহিষ্ণুতা, অনমনীয়তা এবং যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে কেন পৃথিবীবাসীর মধ্যে? সমস্যাটি আসলে কোথায়?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে