নতুন টাকার ব্যবসা করা কি জায়েজ

মুফতি আবু সওবান
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ১৬

প্রশ্ন: ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পুরোনো ও ছেঁড়া টাকার বিনিময়ে নতুন টাকার ব্যবসা করতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার বেচাকেনায় বেশ জোয়ার আসে। উদাহরণস্বরূপ এ ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকার নতুন নোট বিক্রি করা হয় ১ হাজার ২০ টাকায়। এভাবে টাকার বিনিময়ে টাকা বেশ-কম করে বেচাকেনা করা কি জায়েজ? এটি কি সুদ হবে না? এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে, বিস্তারিত জানতে চাই। 
আমানুল্লাহ, ঢাকা

প্রশ্ন: এভাবে নতুন টাকার ব্যবসা করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ ও নাজায়েজ। এটি সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত হওয়া কোনোভাবেই জায়েজ হবে না। কারণ টাকা বা কাগজের নোট পণ্য নয়, বরং এটি মূল্য, তাই এ নিয়ে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয় না ইসলাম।

মুদ্রার লেনদেনকে ইসলামের পরিভাষায় বাইয়ুস সারফ বলা হয়। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক. দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুদ্রা। দুই. একই দেশের মুদ্রা। প্রথম প্রকার তথা এক দেশের মুদ্রা আরেক দেশের মুদ্রার বিনিময়ে কম-বেশি করে বেচাকেনা করা জায়েজ। তবে শর্ত হলো, বেচাকেনার বৈঠকেই অন্তত এক পক্ষকে মুদ্রা সোপর্দ করতে হবে। কোনো একটি পক্ষও যদি বিনিময়কৃত মুদ্রা বুঝে না পায়, তবে সেই বেচাকেনা বৈধ হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ৪ / ২৮; জাদিদ মুআমালাত কে শরয়ী আহকাম: ১-১৩৯)

আর দ্বিতীয় প্রকার তথা একই দেশের মুদ্রা হলে পরস্পর লেনদেনে সমতা রক্ষা করা জরুরি। কমবেশি করে বেচাকেনা করা মোটেও জায়েজ হবে না। এমনটি করলে সেই লেনদেন সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যা বেশি নেওয়া হবে তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (হিদায়া, কিতাবুল বুয়ু, বাবুর রিবা: ০৩/ ৮৫; মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন: ০২/ ৬৫-৬৬; শারহু মাআনিল আসার: ৫৫৫৪; সুনান দারু কুতনি: ৩০৬০)

শুধু টাকাপয়সা বা সোনা-রুপার ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো বস্তুর ক্ষেত্রেই একই জিনিস কমবেশি করে বেচাকেনা করা বৈধ নয়। করলে বর্ধিত অংশটি সুদ হয়ে যায়। দেশি মুদ্রা একই প্রকারের হওয়ায় পরস্পর কমবেশিতে বেচাকেনা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত অংশ সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (আদদুররুল মুখতার: ৫/ ১৭১-১৭২; বুহুসুন ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা: ১/ ১৬৩)

আমাদের দেশে সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ছেঁড়া-ফাটা টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে বিনা মূল্যেই সেবাটি পাওয়া যায়। তাই রীতিমতো চেয়ার-টেবিল বসিয়ে এমন ব্যবসা করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ছেঁড়া টাকা দিয়ে ভালো টাকা নেওয়ার অন্য কোনো উপায় না থাকলে যেমন ব্যাংক বন্ধ, টাকাও একান্ত দরকার, আবার ছেঁড়া টাকাও কেউ নিচ্ছে না, তাহলে বদলকারীর পরিশ্রম ও খরচ বাবদ কিছু টাকা বেশি নেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই স্পষ্টভাবে ‘পরিশ্রম বাবদ’ দেওয়ার কথা উল্লেখ করতে হবে। নতুন টাকার বিনিময় হিসেবে টাকা বাড়িয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/ ২২,২৩ ও ৫৪; ইফতা বিভাগ, জামিয়া পটিয়া) 

উত্তর দিয়েছেন, মুফতি আবু সওবান ,শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত