Ajker Patrika

শ্রমিক-সংকটে দিশেহারা কৃষক

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৭: ০১
শ্রমিক-সংকটে দিশেহারা কৃষক

বোরো ধান কাটতে শ্রমিক-সংকট চরম আকার ধারণ করেছে রংপুরের বদরগঞ্জে। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও বাতাসে অনেকের পাকা ধানগাছ নুয়ে পানির নিচে চলে গেছে। কৃষকেরা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আধা পাকা ধান কাটছেন। চাহিদা বাড়ায় শ্রমিকেরাও মজুরি বাড়িয়েছেন। এতে বেকায়দায় পড়ে বেশি মজুরি দিয়ে ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। শ্রমিক-সংকট থেকে কিছুটা রেহাই পেতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপাতত ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার এ উপজেলায় ১৬ হাজার ৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩০ শতাংশ জমির ধান ঘরে উঠেছে।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৯ মে এ উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ৪০০ টাকা দিনমজুরিতে ১ হাজার ৫৭১ জন শ্রমিক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাটি কাটার কাজ করছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩ জন পুরুষ, অন্যরা নারী শ্রমিক।

রাধানগর খামারপাড়া গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহে আগে ১ বিঘা (৬০ শতক) জমির ধান চুক্তিতে কাটতে শ্রমিক নিয়েছিল ৫ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টি ও বাতাস হলে ধানগাছ নুয়ে পড়ে। দ্রুত কাটার জন্য শ্রমিক মিলছে না। প্রায় সব কৃষকের একই অবস্থা। সবাই আগে ধান কাটতে মরিয়া। এই সুযোগে শ্রমিকেরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কেটে নিতে হচ্ছে।’ জালাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘এখন চুক্তিতে ধান কাটতে প্রতি বিঘায় শ্রমিক নিচ্ছেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই এক বিঘা জমির ধান বাড়িতে নিয়ে মাড়াইসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে আরও ৩ হাজার টাকা।’

গত রোববার বিকেলে দামোদরপুর ইউনিয়নের চাপড়ার দোলা ও রাধানগর ইউনিয়নের খামারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘শত শত কৃষকের জমির ধানগাছ নুয়ে পড়ে আছে। ধানের শিষ পানির নিচে চলে গেছে। কোথাও সম্পূর্ণ ধানগাছ পানিতে তলিয়ে আছে।

আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, এক বিঘা (৬০ শতক) জমি চাষ, সার, রোপণ, নিড়ানিসহ খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এখন সেই ধান ঘরে তুলতে খরচ হচ্ছে আরও ১২ হাজার টাকা। বাজারে দাম কিছুটা বেশি থাকায় ধান বিক্রি করে লোকসান না হলেও বেশি একটা লাভও হবে না।’

২৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন উত্তর খামারপাড়া গ্রামের কৃষক রোকনুর জামান। তাঁর প্রতি বিঘায় (৬০ শতক) খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ধান পাবেন ৪৫-৫০ মণ। রোববার রোকনুর জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর ২৫ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা জমির ধান পেকেছে। ১০ বিঘার ধান আধা পাকা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতের বৃষ্টি ও বাতাসে তাঁর জমির সব ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। প্রতি বিঘা ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে ধান কাটতে শ্রমিক লাগিয়েছেন। এই এক বিঘার ধান বাড়িতে নেওয়া ও মাড়াইসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৬ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। দ্রুত কাটতে না পারলে জমিতেই ধান নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা তাঁর।

শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আগে এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক লাগত ছয়জন। এখন বাতাসে ধানগাছ হেলে পড়ায় লাগছে ১২-১৩ জন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, হেলে পড়া ধান দ্রুত কেটে নিলে ক্ষতি হবে না। কত হেক্টর জমির ধান পানির নিচে, সে তথ্য তাঁর কার্যালয়ে নেই। শ্রমিক-সংকটের কথা স্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, কর্মসৃজনে অনেক শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছেন। আপাতত সেই কাজ বন্ধ রাখতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষকের স্বার্থটাই আগে দেখতে হবে। প্রয়োজনে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

বোনের বাড়িতে ‘ধর্ষণের’ শিকার: ২৪ ঘণ্টা পরও অচেতন শিশু, মূর্ছা যাচ্ছেন মা

আওয়ামী লীগ নেতা ‘ব্যাটারি বাবু’ ভবনে ঢুকে হাওয়া!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত