কুমেকের নিজস্ব ক্যাম্পাস চালু হচ্ছে শিগগির

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ০৪
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ২২

নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আগামী বছরের শুরুতেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মূল ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘ ৯ বছর ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ম্যাটস) এর ভবনে অস্থায়ীভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চলে আসছে।

মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০১১ সালে অনুমোদন পাওয়া তিন বছরের নির্মাণ মেয়াদ নয় বছরে গিয়ে ঠেকেছে। ২ শত ৭৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় সম্প্রসারিত হয়ে ৬ শত ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হচ্ছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের কাজ শেষের পথে। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহের কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে যাই হোক আমরা আর পেছন ফিরে তাকাতে চাই না। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁদের একাডেমিক কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে করতে পারবেন। এটাই হবে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।’

প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি ৬ শত ৮২ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের ২য় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এর অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্মাণ মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটির সকল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে হবে বলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য কাজগুলো সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ শত ৮৮ কোটি টাকা এবং বাকি ১ শত ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাবদ।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিফাতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাচ্ছি এই কথা অনেকবার শুনেছি। আমাদের পড়ালেখা শেষের দিকে। আমার ক্যাম্পাস ক্লাস করার সৌভাগ্য হলো না। তবে, আমাদের পরে যারা আছেন থাকবে তারা অন্তত আমাদের মতো অপূর্ণতা নিয়ে ফিরবেন না এটাই অনেক।’

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী সায়মা যুথী বলেন, ‘শিক্ষাজীবনে প্রাণের ক্যাম্পাসের কোনো স্বাদ পায়নি। তবুও বলব আমাদের অনেক সৌভাগ্য। আগামী বছরের শুরুতে আমাদের জুনিয়রেরা মেডিকেল ক্যাম্পাস, হল জীবন কাটাতে পারবে।

সায়মা রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিন বছর হয়ে গেল। এখনো ম্যাটসেই ক্লাস করছি। ভেবেছিলাম পড়ালেখা শেষ হওয়া আগে আমাদের নিজস্ব ক্লাসে ক্লাস করতে পারব না। তবে, শেষমেশ স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামস তানিম মুক্তি জানান, কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ প্রায় শেষের দিকে চলে আসলেও এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এলাকাবাসী। অতি দ্রুত এই প্রতিষ্ঠান চালু হওয়া দরকার । এটি চালু হলে কুষ্টিয়া এবং এর আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে আর ঢাকা কিংবা রাজশাহীতে যেতে হবে না। শিগগিরই কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হোক এমনটাই দাবি সবার।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দেলদার হোসেন বলেন, ‘আমরা মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে জেলাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি, সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে এক প্রকার বন্ধ হয়ে যাওয়া নির্মাণাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটির ২য় ডিপিপি অনুমোদনের জন্য এ বছরের শুরুতে একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে ক্ষুব্ধ হন এবং আইএমইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত