তাপস মজুমদার
সরকারি ব্যয় কমাতে আকাশপথে প্রথম শ্রেণিতে বিদেশ ভ্রমণ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে সরকার।
শুধু এ খাতেই নয়। নানাভাবে বড্ড বেশি বাজে খরচ হয় আমাদের অফিসগুলোতে। পারিবারিক কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার, অহেতুক এসি-লাইট-ফ্যানের ব্যবহার, উপর্যুপরি সভা বা সম্মেলনে ভ্রমণ ভাতার ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় অথবা কম প্রয়োজনীয় কারণে বিদেশ ভ্রমণ, লাগামহীনভাবে সিটিং অ্যালাউন্স বৃদ্ধি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলাসী খাবারের ব্যবহারসহ অনেক কাজে খরচটা অনেক সময়ই বড্ড বেশি হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নিতান্তই অপচয়। কেন আমরা এসব কাজ গা-সওয়া করে ফেলেছি? যেসব সুবিধা একজন পদস্থ কর্তাকে নিয়মমাফিক দেওয়া হয়, সেই সব সুবিধার অতিরিক্ত নেওয়ার লোভ কেন আমাদের পেয়ে বসবে? অফিসের কর্তা হিসেবে, সামাজিক মানুষ হিসেবে, এমনকি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বকে কেন আমরা ভুলে যাব? আর কেনইবা এসব অন্যায় আচরণের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না? এসব অনিয়ম কি জনগণের সাধারণ জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে না?
প্রাধিকারের গাড়ির সুবিধা যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরাই আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে গাড়ির চালক-জ্বালানিতে বাড়তি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছেন। ৩০ এপ্রিল আজকের পত্রিকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের এসব খবর ছাপা হয়েছে। এত আরামের দরকার হয় না মানুষের।
বলা হয় স্বল্পাহারী মানুষ সুস্থ থাকে। কিন্তু আমাদের বড় সভাগুলোতে শহরের সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টের খাবার যেমন আসে, তেমনি আইটেমের সংখ্যা ও খাবারের পরিমাণ হয় অভাবনীয়। এত খাবার দরকার হয় না, ওতে কোনো ভালো লুকিয়ে নেই।
বড় সাহেব বাইরে গেছেন। তাঁর রুমের ফ্যান-লাইট-এসি সব চলছে। বাথরুমের লাইটটি হয়তো ২৪ ঘণ্টা ধরেই জ্বলছে। নিজের বাড়ির ক্ষেত্রে ভুল করেও এটা কেউ করেন না।
অনেক ক্ষেত্রেই দেশে-বিদেশে ভ্রমণ ভাতা খরচ হ্রাস করা সম্ভব হয়। তার জন্য পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত করা দরকার। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে না; বরং অনেক সময়ই একটু পুষিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অযথা ভ্রমণ ভাতা বিল পাস করা হয়। রাত্রি যাপন না করলেও তা দেখিয়ে দৈনিক ভাতা বাড়িয়ে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তাতে একটুও কলম কাঁপে না, একটুও মন কাঁদে না আমাদের। কে দেখবে এটা? একে কি দেশের প্রতি ভালোবাসা বলে? যাঁরা এমন সুবিধা নেন, তাঁরা অন্যকেও এমন সুবিধা দিতে কখনো কখনো বাধ্য হন।
ফলে অপচয় দ্বিগুণ হয়। সরকার বিমানের প্রথম শ্রেণিতে বিদেশ ভ্রমণ যে স্থগিত করল এটা দীর্ঘস্থায়ী বা পারা গেলে স্থায়ীভাবেই চালু রাখলে ক্ষতি কি?
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যথার্থই ব্যয় সাশ্রয়ে ব্যাংকগুলোকে হাইব্রিড সভা করার এবং শারীরিক উপস্থিতির খুব প্রয়োজন না হলে যেন অনলাইনে সভা করা হয়, সেই পরামর্শ দিয়েছে। এটা ঠিক যে কখনো কখনো শারীরিক উপস্থিতিতে সভা করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে কথা ভিন্ন। কিন্তু পর্ষদ সভা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিভিন্ন সম্মেলন অথবা উদ্বুদ্ধকরণ সভার বেশির ভাগই অনলাইনে করা সম্ভব। এতে ব্যয় কমবে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস পাবে। গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যুৎ খরচ (বরাদ্দের ২৫ শতাংশ) ও জ্বালানি খরচ (বরাদ্দের ২০ শতাংশ) কমানোর বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিল। সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, বছর শেষে তা বোঝা যাবে। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অনলাইনে সভা করতে শুধু যে অর্থ ব্যয় কম হয় তা-ই নয়, সময়েরও সাশ্রয় হয় অনেক। বিভাগীয় পর্যায়ে একটি সভা আয়োজনে ভেন্যু খরচ, সাজসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম, ব্যানার, বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীদের বিভাগীয় শহরে আসার টিএ-ডিএ, বড় অতিথিদের গাড়ির জ্বালানি খরচ, বিমান ভাড়া, আবাসিক খরচ, অনুষ্ঠান স্থলে মধ্যাহ্নভোজ, নাশতা, পানিসহ নানাবিধ ব্যয় হয়ে থাকে। যার প্রায় কোনো কিছুই অনলাইন সভায় থাকে না। অথচ সম্প্রতি খবরের কাগজে দেখছিলাম একটি অনলাইন সভার খাওয়ার আয়োজনের খরচ কয়েক লাখ টাকা!
দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বীকৃতির পর্যায়ে চলে যেতে পারে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর, তাৎক্ষণিক এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এসব অন্যায় কর্মকাণ্ড শক্ত হয়ে দমন করা যায় না—এটা বিশ্বাস করতে আমরা রাজি নই। মনে রাখা দরকার, একজন কর্মীর, বিশেষ করে পদস্থ কর্মীর, সব কাজ প্রতিষ্ঠানের জন্য উৎসর্গীকৃত না হলে, দেশ ও তার মানুষের জন্য দরদ প্রাণের ভেতর থেকে না উঠলে, প্রতিষ্ঠান বা দেশ বা দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এগিয়ে যেতে পারে না।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী ও সাবেক ব্যাংকার
সরকারি ব্যয় কমাতে আকাশপথে প্রথম শ্রেণিতে বিদেশ ভ্রমণ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে সরকার।
শুধু এ খাতেই নয়। নানাভাবে বড্ড বেশি বাজে খরচ হয় আমাদের অফিসগুলোতে। পারিবারিক কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার, অহেতুক এসি-লাইট-ফ্যানের ব্যবহার, উপর্যুপরি সভা বা সম্মেলনে ভ্রমণ ভাতার ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় অথবা কম প্রয়োজনীয় কারণে বিদেশ ভ্রমণ, লাগামহীনভাবে সিটিং অ্যালাউন্স বৃদ্ধি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলাসী খাবারের ব্যবহারসহ অনেক কাজে খরচটা অনেক সময়ই বড্ড বেশি হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নিতান্তই অপচয়। কেন আমরা এসব কাজ গা-সওয়া করে ফেলেছি? যেসব সুবিধা একজন পদস্থ কর্তাকে নিয়মমাফিক দেওয়া হয়, সেই সব সুবিধার অতিরিক্ত নেওয়ার লোভ কেন আমাদের পেয়ে বসবে? অফিসের কর্তা হিসেবে, সামাজিক মানুষ হিসেবে, এমনকি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বকে কেন আমরা ভুলে যাব? আর কেনইবা এসব অন্যায় আচরণের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না? এসব অনিয়ম কি জনগণের সাধারণ জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে না?
প্রাধিকারের গাড়ির সুবিধা যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরাই আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে গাড়ির চালক-জ্বালানিতে বাড়তি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছেন। ৩০ এপ্রিল আজকের পত্রিকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের এসব খবর ছাপা হয়েছে। এত আরামের দরকার হয় না মানুষের।
বলা হয় স্বল্পাহারী মানুষ সুস্থ থাকে। কিন্তু আমাদের বড় সভাগুলোতে শহরের সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টের খাবার যেমন আসে, তেমনি আইটেমের সংখ্যা ও খাবারের পরিমাণ হয় অভাবনীয়। এত খাবার দরকার হয় না, ওতে কোনো ভালো লুকিয়ে নেই।
বড় সাহেব বাইরে গেছেন। তাঁর রুমের ফ্যান-লাইট-এসি সব চলছে। বাথরুমের লাইটটি হয়তো ২৪ ঘণ্টা ধরেই জ্বলছে। নিজের বাড়ির ক্ষেত্রে ভুল করেও এটা কেউ করেন না।
অনেক ক্ষেত্রেই দেশে-বিদেশে ভ্রমণ ভাতা খরচ হ্রাস করা সম্ভব হয়। তার জন্য পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত করা দরকার। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে না; বরং অনেক সময়ই একটু পুষিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অযথা ভ্রমণ ভাতা বিল পাস করা হয়। রাত্রি যাপন না করলেও তা দেখিয়ে দৈনিক ভাতা বাড়িয়ে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তাতে একটুও কলম কাঁপে না, একটুও মন কাঁদে না আমাদের। কে দেখবে এটা? একে কি দেশের প্রতি ভালোবাসা বলে? যাঁরা এমন সুবিধা নেন, তাঁরা অন্যকেও এমন সুবিধা দিতে কখনো কখনো বাধ্য হন।
ফলে অপচয় দ্বিগুণ হয়। সরকার বিমানের প্রথম শ্রেণিতে বিদেশ ভ্রমণ যে স্থগিত করল এটা দীর্ঘস্থায়ী বা পারা গেলে স্থায়ীভাবেই চালু রাখলে ক্ষতি কি?
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যথার্থই ব্যয় সাশ্রয়ে ব্যাংকগুলোকে হাইব্রিড সভা করার এবং শারীরিক উপস্থিতির খুব প্রয়োজন না হলে যেন অনলাইনে সভা করা হয়, সেই পরামর্শ দিয়েছে। এটা ঠিক যে কখনো কখনো শারীরিক উপস্থিতিতে সভা করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে কথা ভিন্ন। কিন্তু পর্ষদ সভা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিভিন্ন সম্মেলন অথবা উদ্বুদ্ধকরণ সভার বেশির ভাগই অনলাইনে করা সম্ভব। এতে ব্যয় কমবে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস পাবে। গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যুৎ খরচ (বরাদ্দের ২৫ শতাংশ) ও জ্বালানি খরচ (বরাদ্দের ২০ শতাংশ) কমানোর বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিল। সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, বছর শেষে তা বোঝা যাবে। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অনলাইনে সভা করতে শুধু যে অর্থ ব্যয় কম হয় তা-ই নয়, সময়েরও সাশ্রয় হয় অনেক। বিভাগীয় পর্যায়ে একটি সভা আয়োজনে ভেন্যু খরচ, সাজসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম, ব্যানার, বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীদের বিভাগীয় শহরে আসার টিএ-ডিএ, বড় অতিথিদের গাড়ির জ্বালানি খরচ, বিমান ভাড়া, আবাসিক খরচ, অনুষ্ঠান স্থলে মধ্যাহ্নভোজ, নাশতা, পানিসহ নানাবিধ ব্যয় হয়ে থাকে। যার প্রায় কোনো কিছুই অনলাইন সভায় থাকে না। অথচ সম্প্রতি খবরের কাগজে দেখছিলাম একটি অনলাইন সভার খাওয়ার আয়োজনের খরচ কয়েক লাখ টাকা!
দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বীকৃতির পর্যায়ে চলে যেতে পারে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর, তাৎক্ষণিক এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এসব অন্যায় কর্মকাণ্ড শক্ত হয়ে দমন করা যায় না—এটা বিশ্বাস করতে আমরা রাজি নই। মনে রাখা দরকার, একজন কর্মীর, বিশেষ করে পদস্থ কর্মীর, সব কাজ প্রতিষ্ঠানের জন্য উৎসর্গীকৃত না হলে, দেশ ও তার মানুষের জন্য দরদ প্রাণের ভেতর থেকে না উঠলে, প্রতিষ্ঠান বা দেশ বা দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এগিয়ে যেতে পারে না।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী ও সাবেক ব্যাংকার
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে